জাহান্নামের শস্তি থেকে মুক্তি মিলবে যে দোয়ায়
প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৩, ১১:১২
জাহান্নামের শস্তি থেকে মুক্তি মিলবে যে দোয়ায়
ধর্ম ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

জাহান্নাম শব্দটি আরবি যার কুরআনে বর্ণিত জাহান্নামের আরো কিছু নাম রয়েছে, জাহিম ‘জ্বলন্ত আগুন’। হুতামাহ ‘চূর্ণবিচূর্ণকারী’। হাবিয়াহ ‘অতল গহ্বর’। লাযা, সাঈর ‘জ্জ্বলন্ত অগ্নিকাণ্ড’। পরিভাষায় জাহান্নাম বলা হয়, পরকালের আবাসস্থল যা এমন পাপীদের জন্য নির্দিষ্ট যারা আল্লাহর ক্ষমা লাভ করবে না।সাকার ও আন-নার।


কোরআনে জাহান্নামীদের শাস্তির কথা


আল্লাহ রব্বুল আলামিন কোরআনে বলেন, ‘জালেমদের জন্য আমি মহা অগ্নি প্রস্তুত করে রেখেছি। যার শিখা চুতুর্দিক থেকে তাদের ঘিরেজাহান্নাম ফেলবে। যখন পানির জন্য ছাতি ফাটিয়ে চিৎকার করবে, তখন তেলের গাদের মতো এমন গরম পানি তাদের খেতে দেওয়া হবে, যা তাদের মুখগুলি পুড়িয়ে কয়লা করে ফেলবে। হায়, কত নিকৃষ্ট সে পানি, কত নিকৃষ্ট সেই আবাসস্থল। (সুরা: কাহাফ ২৯)


অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, কাফেরদের জন্য আগুনের পোশাক তৈরি করা হবে। টগবগে ফুটন্ত পানি তাদের মাথায় ঢেলে দেওয়া হবে। তখন পেটের নাড়ি-ভুড়িসহ শরীরের চামড়াগুলি খসেখসে পড়বে। লোহার বড় বড় মুগুর থাকবে। যন্ত্রণা-কাতর হয়ে যখনই তারা সেখানে থেকে বের হবার চেষ্টা করবে, তখনি জাহান্নামে ফিরিয়ে দেয়া হবে আর বলা হবে, জ্বলন্ত আগুনের স্বাদ চাখতে থাকো। (সুরা: হজ ২২)


যে দোয়া পড়লে জাহান্নাম থেকে মুক্তি মিলবে


জাহান্নাম থেকে বাঁচতে আল্লাহ রব্বুল আলামিন বান্দাদের জন্য দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন। জাহান্নাম থেকে বাঁচতে ইসলাম গ্রহণের সাথে ঈমান ও নেক আমল, ফরজ পালন, পাপ বর্জন, তাক্বওয়া অর্জন ও দোয়া করতে হবে। আল্লাহ তাআলা কোরআনে দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন।
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ উচ্চারণ: রব্বানা আতিনা ফিদ দুনিয়া হাসানাহ ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়া কিনা আজাবান নার।


অর্থ: ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের ইহকালে কল্যাণ দান কর এবং পরকালেও কল্যাণ দান কর। আর আমাদেরকে দোযখ-যন্ত্রণা থেকে রক্ষা কর।’ (সুরা: বাকারা ২০১)
رَبَّنَا اصْرِفْ عَنَّا عَذَابَ جَهَنَّمَ ۖ إِنَّ عَذَابَهَا كَانَ غَرَامًا , إِنَّهَا سَاءَتْ مُسْتَقَرًّا وَمُقَامًا উচ্চারণ: রব্বানাস রিফ আন্না আজাবা জাহান্নাম, ইন্না আজাবাহা কানা গরামা, ইন্নাহা সা-আত মুসতাকাররাও ওয়া মুকামা।


অর্থ: হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের থেকে জাহান্নামের শাস্তি নিবৃত্ত কর, জাহান্নামের শাস্তি তো নিশ্চিতভাবে ধ্বংসাত্মক, নিশ্চয় তা আশ্রয়স্থল ও বসতি হিসাবে অতীব নিকৃষ্ট! (সুরা ফুরকান ৬৫,৬৬)


এ ছাড়াও জাহান্নাম থেকে বাঁচতে রসুল সা. অনেক দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন। আমলও শিখিয়ে দিয়েছেন।


এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রসুল! আপনি আমাকে এমন আমল বলে দিন, যা আমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে, জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে। নবী সা. বললেন, ‘তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, তার সাথে কাউকে অংশীদার করবে না, নামাজ প্রতিষ্ঠা করবে, জাকাত দেবে, রক্ত সম্পর্ক বজায় রাখবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)।


রসুল সা. অন্য হাদিসে বলেন, ‘যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দেবে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই, মুহাম্মাদ তার রসুল, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেবেন’ (মুসলিম)


‘যে ব্যক্তি সুর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে (অর্থাৎ ফজরের ও আসরের নামাজ আদায় করবে, সে কখনো জাহান্নামে প্রবেশ করবে না’ (মুসলিম)।


‘যে ব্যক্তি জোহরের ফরজ নামাজের পুর্বে চার রাকআত ও পরে চার রাকআত সুন্নত পড়তে যত্নবান হবে, আল্লাহ তার উপর জাহান্নামের আগুন হারাম করে দেবেন।’ (আবু দাউদ, তিরিমিজি)।


‘রোযা (জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার জন্য) ঢালস্বরূপ’ (বুখারি, মুসলিম)


‘আল্লাহ সেই ব্যক্তিকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দেবেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের কামনায় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে।’ (বুখারি ও মুসলিম) এমন অনেক হাদিস আল্লাহর রসুল বান্দাদের শিখিয়ে দিয়েছেন।


অমুসলিম পরিবারে জন্ম নেয়া ব্যক্তি যার কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছেনি সে কেন জাহান্নামী হবে?


কোন ব্যক্তিই অন্য কোন ধর্মে জন্মগ্রহণ করে না। বরং প্রতিটি মানুষই ইসলাম ধর্মের উপরই জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু পরবর্তীতে তার বাবা, মা ও পরিবার, সমাজ ইত্যাদির দেখাদেখি বিভিন্ন ধর্মে অভ্যস্ত হয়। খৃষ্টান ঘরে জন্ম নেয়া মুসলিম শিশু পরিবারের দেখাদেখি খৃষ্টান হয়। ইহুদীর সন্তান ইহুদী আর হিন্দুর সন্তান হিন্দু হয়। কিন্তু তার জন্ম উক্ত ধর্মগুলোতে হয়নি। হয়েছে মুসলিম হিসেবেই।


হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘প্রত্যেক নবজাতক ফিতরাতের উপর জন্মগ্রহণ করে। এরপর তার মাতাপিতা তাকে ইয়াহুদী বা খৃষ্টান অথবা অগ্নি উপাসকরূপে রূপান্তরিত করে।’ (বুখারি ১৩৮৫)


জাহান্নামের আয়াত শুনে নামাজে কান্না করা


কোন দুঃখ-কষ্টের কারনে ইচ্ছাকৃত কান্নার আওয়াজ বেড়িয়ে আসলে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। তবে যদি অধিক কষ্টের কারনে অথবা জাহান্নামের কথা স্বরণ হওয়ায় অনিচ্ছায় কান্নার আওয়াজ বেড়িয়ে আসে, তা রোধ করা সম্ভব না হয় তাহলে নামাজ নষ্ট হবে না । আর নামাজে আল্লাহর ভয়ে চোখে পানি আসা বড়ই সৌভাগ্যের বিষয়। প্রশংসনীয় বিষয়। (আবু দাউদ ১-১৩০, নাসায়ি ১-১৩৫)


বিবার্তা/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com