ইসলামের দৃষ্টিতে ধন-সম্পদের সদ্ব্যবহার
প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২৩, ১৩:০৫
ইসলামের দৃষ্টিতে ধন-সম্পদের সদ্ব্যবহার
ধর্ম ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

বিশ্ব জগতের সৃষ্টিকর্তা মহাবিজ্ঞানী মহান আল্লাহ। যিনি অত্যন্ত নিপুণভাবে ও কুকৌশলে আমাদের এ মহাবিশ্বকে অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে সৃষ্টি করেছেন। মহাকাশের রহস্য সম্বন্ধে চিন্তা করতে গেলে বিস্ময়ে অবাক হতে হয়। আকাশের কোনো কূলকিনারা খুঁজে পাওয়া যায় না।


আল্লাহ আল কোরআনে বলেছেন, আমি বিশ্বজগৎ এবং আকাশ মণ্ডলকে বিশেষ কৌশলে ৬ দিনে সৃষ্টি করেছি। এতে জ্ঞানীদের জন্য অনেক নির্দশন রয়েছে। আল্লাহর এ রহস্যপূর্ণ সৃষ্টি সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞান অতীব সীমিত। বিজ্ঞানীদের গবেষণা মহাবিশ্বের মধ্যে আমাদের পৃথিবী অত্যন্ত ছোট এবং তা এক বিন্দুর মতো মনে হলেও আমাদের ক্ষুদ্র জ্ঞান ও চোখের দেখা দৃষ্টিতে আক্ষরিক অর্থে এ পৃথিবী আমাদের কাছে অনেক বিশাল বলে মনে হয়। কারণ মহাদেশ, সাগর, মহাসাগরে বেষ্টিত এ পৃথিবী একটি বিশাল বিচরণ ক্ষেত্র, আল্লাহ যা আমাদের জীবনযাপন ভোগ বিলাসের জন্য অফুরন্ত ধন-সম্পদে পরিপূর্ণ করে সাজিয়ে দিয়েছেন।


আল্লাহর ইচ্ছায় এবং নির্দেশে কোটি কোটি জীবের সৃষ্টি, জন্ম, আগমন-নির্গমন প্রতিনিয়ত ঘটছে। যুগে যুগে এ পৃথিবীতে অগণিত পরাক্রমশালী রাজা বাদশা সম্রাট পীর আউলিয়া মনীষী পণ্ডিত এসেছেন। আল্লাহর বিশেষ রহমতে এবং প্রদত্ত বিচিত্র জ্ঞানে-গুণে গুণান্বিত নবী রসুলগণ আবির্ভূত হয়েছেন। কিন্তু আল্লাহর অমোঘ নীতি ও বিধান মোতাবেক সবাইকে এক সময় অন্তিম পরিণতির দিকে এক অজানা গন্তব্যের পথে যাত্রা করতে হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও হতে থাকবে।


এমতাবস্থায়, আমাদের এ অতি ক্ষণস্থায়ী জীবনে আমাদের এ প্রিয় ভুবনে অবাধ ও স্বাধীনভাবে বিচরণ এবং ভোগ করার যে অধিকার মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের দিয়েছেন তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে। স্বাধীনভাবে মুক্তমনে চলাচলের সুযোগ-সুবিধা আর যে ক্ষমতা প্রদান করেছেন তা আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী পালন করতে হবে। আল্লাহ মহাবিশ্ব এবং তাঁর সব সৃষ্টিকে আমাদের অধীনস্থ করে দিয়েছেন। যে কারণে আমরা আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে পরিগণিত। আমরা অতি কৌশলে পুরো মহাবিশ্ব ও আকাশ মণ্ডলীকে তন্নতন্ন করে জানার জন্য প্রতিনিয়ত গবেষণায় লিপ্ত রয়েছি।


দয়ালু আল্লাহ আমাদের সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল ও কল্যাণের জন্য মহাগ্রন্থ আল কোরআনে অনেক সুসংবাদ ও সতর্কবাণী প্রচার করেছেন। বলেছেন, তোমরা আমার দেওয়া অফুরন্ত সম্পদ ও নিয়ামতের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে আমার আদেশ-নির্দেশ লঙ্ঘন করতে যেও না, আমানতের খেয়ানত কর না। মনে রাখবা সীমা লঙ্ঘনকারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন না। কিন্তু আমরা প্রতিনিয়তই সীমা লঙ্ঘন করে চলছি।


বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ রসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের মূর্ত প্রতীক। তার প্রতিষ্ঠিত কল্যাণ রাষ্ট্রের সুমহান শাসনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। অন্যায় ও অসত্য দূরীভূত হয়েছিল। অথচ আমরা তাঁর শিক্ষা ভুলে গেছি। ন্যায়-অন্যায়ের কথা চিন্তা না করে ধন-সম্পদ হাতের মুঠোয় পাওয়ার জন্য আমরা দুর্নীতির অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে হাবুডুবু খাচ্ছি। জোর-জুলুম করে সম্পদের পাহাড় গড়ার জন্য অস্থির হয়ে টাকার বস্তার ওপর শুয়েও ঘুম আসে না। এ থেকে উদ্ধার পাওয়ার পথ খুঁজতে হবে।


এ দুনিয়াতে আমাদের শান্তিময় জীবন গড়ার জন্য আল্লাহর নির্দেশিত পথই সর্বোত্তম পথ। আল্লাহ ন্যায়বিচারক এবং দুনিয়ার মানুষ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করুক এমনটি চান। আল্লাহ আমাদের ন্যায়বিচারের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু আমরা ন্যায়বিচারের ধারে-কাছেও যাই না। আরও বেপরোয়াভাবে আমরা আল্লাহর আদেশ-নির্দেশ অমান্য করে চলছি। আল্লাহ আমাদের জন্য প্রচুর ধন-সম্পদ উজাড় করে দিয়েছেন। আমরা ইচ্ছা করলে যে কোনো পরিমাণ ধন-সম্পদ, গাড়ি-বাড়ি দালান কোটা বৈধ উপায়ে অর্জন করতে পারে তাতে কোনো বাধা নেই। কিন্তু তা না করে জোর জুলুম, অন্যায় অবিচার নিপীড়ন নির্যাতন, ষড়যন্ত্র, মিথ্যাচার সন্ত্রাসী কায়দায় অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলি।


যারা অপরের ধন-সম্পদ লুটপাট করে তাদের অধিকার বঞ্চিত করে তাদের পরকালে কঠিন সাজা ভোগ করতে হবে। সবাইকে বুঝতে হবে এমন সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলার দরকার আছে কি? অর্থাৎ যে সম্পদ আমি স্বস্তিতে-শান্তিতে ভোগ করতে পারব না, বিবেকের দংশনে দংশিত হব, ভোগের পরিবর্তে জীবনকে অস্বস্তির দিকে ঠেলে দেবে সে সম্পর্কে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করা উচিত। ইসলাম ধর্মের নির্দেশ হলো মধ্যম পন্থায় চলা। মধ্যম পন্থায় চললেই জীবন সুন্দর হয় এবং শান্তির পরশে আনন্দে ভরে ওঠে।


আমার জানামতে একটি উদাহরণ দিতে চাই। যদিও উদাহরণটি অত্যন্ত মর্মস্পর্শী। যেমন- আমাদের এক স্বনাম ধন্য ধনকুবের কথা বলছি। হয়তো তার কয়েক হাজার কোটি টাকার ব্যবসা ছিল। গত করোনা মহামারির সময় তিনি করোনায় আক্রান্ত হন। একপর্যায়ে তার শারীরিক অসুস্থতা ভয়াবহ রূপ নেয়। মৃত্যুশয্যায় তিনি অত্যন্ত কাতর কণ্ঠে করুণ দৃষ্টিতে চিকিৎসকদের বলেছিলেন, আমার সব ধন-সম্পদের বিনিময়ে আমাকে সুস্থ করে তুলুন। কিন্তু হায় চিকিৎসকরা ছিলেন অসহায়। আমাদের সবাইকে মৃত্যুর কথা ভাবতে হবে। আমরা কেউই ধন-সম্পদ নিয়ে কবরে যেতে পারব না। আল্লাহ আমাদের সবাইকে বুঝ দিন।


বিবার্তা/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com