দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন: তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঢাকা-১৯
প্রকাশ : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৬:৩০
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন: তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঢাকা-১৯
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

জমে উঠেছে ঢাকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আসন ঢাকা-১৯ (সাভার-আশুলিয়া) এর নির্বাচনি প্রচারণা। এই আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে মনে করছেন সাভারবাসী। এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে ১০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান এমপি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান এবং সাবেক এমপি ঈগল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করছেন ভোটাররা। আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামও আশুলিয়া এলাকায় ব্যাপক প্রচারণা করে যাচ্ছেন।


সাভারের সাধারণ ভোটার ও নেতাকর্মীদের অনেকেই মনে করছেন, এমপি এনামুর রহমান তার প্রতিশ্রুতির অনেক কাজ করতে পারেননি। তাছাড়া বিরোধী নেতাকর্মীদের মধ্যেও ক্ষোভ রয়েছে। এ কারণে অনেকে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।


সাভার থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা দৌলা বলেন, গত ১০ বছরে কারা কী করেছেন সেই সব বিবেচনা করেই ভোটাররা সিদ্ধান্ত নেবেন। সেই দিক থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিজয়ী হওয়া অনেকটাই কষ্টকর।


তবে দ্বিমত পোষণ করে আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক হাসান তুহিন বলেন, নেতাকর্মীরা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়লেও আওয়ামী লীগের ভোটারদের মধ্যে কোনো বিভক্তি নেই। তারা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকেই বিজয়ী করবেন।


সাভার পৌর এলাকার বাসিন্দা মল্লিক মৃধা বলেন, শান্তিপূর্ণ ও সহাবস্থানের মধ্য দিয়ে এবারের নির্বাচনে প্রচারণা চলছে। সব প্রার্থীরাই প্রচারণায় ব্যস্ত। তবে ভোটের লড়াই হবে মূলত বর্তমান এমপি ও নৌকার প্রার্থী ডা. এনামুর রহমান ও সাবেক এমপি স্বতন্ত্র প্রার্থী তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদের মধ্যে। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে দুজনের অবস্থান সমান সমান। যে কেউ জিততে পারেন।


সাভারের পাথালিয়া ইউনিয়নের আঁখিনুর বেগম বলেন, এনামুর রহমান ও মুরাদ জং দুজনই আমাদের বাড়িতে এসেছেন ভোট চাইতে। দুজনেই আওয়ামী লীগ করেন। তাই তদের শক্তিও সমান। কেউ কারো থেকে কম না। এখন দেখা যাক নির্বাচনে কে জেতেন। আমরা চাই সুষ্ঠু ভোট। ভোটের দিন পরিস্থিতি ভালো থাকলে ভোটটা অবশ্যই দিয়ে আসবো।


ঢাকা-১৯ আসনটি ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও সাভার পৌরসভা নিয়ে গঠিত। মোট ভোটার ৭ লাখ ৫৬ হাজার ৪১৯। এটি ঢাকা জেলায় অবস্থিত জাতীয় সংসদের ১৯২ নম্বর আসন। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানকে নৌকা প্রতীক দেয়া হয়েছে। এছাড়া নবম জাতীয় সংসদের এমপি স্বতন্ত্র প্রার্থী তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদ ঈগল বরাদ্দ পেয়েছেন। এছাড়া অন্যান্য দলীয় প্রার্থীদের মধ্যে বাংলাদেশ কংগ্রেস থেকে মিলন কুমার ভঞ্জ (ডাব), গণফ্রন্ট থেকে মুরুল আমিন (মাছ), স্বতন্ত্র মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম (ট্রাক), তৃণমূল বিএনপি থেকে মাহবুবুল হাসান (সোনালী আঁশ), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি থেকে আইরিন পারভীন (কাঁঠাল), এনপিপি থেকে ইসরাফিল হোসেন সাভারী (আম), বাংলাদেশ সুপ্রীম পার্টি থেকে মো. জুলহাস (একতারা) ও বিএমএম থেকে সাইফুল ইসলাম মেম্বার (নোঙ্গর) নির্বাচন করছেন।


প্রতীক বরাদ্দের পরই পুরো সাভার এলাকা ছেয়ে গেছে নির্বাচনি পোস্টার, ফেস্টুন ও ব্যানারে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাইছেন প্রার্থীরা। রাত-দিন মিছিল-সমাবেশে মুখর থাকছে পুরো নির্বাচনি এলাকা। এসব সমাবেশে প্রার্থীরা ভোটারদের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন মাঠ প্রশাসন। তবে তেমন কোনো বড় ধরনের সহিংসতার খবর এখন পাওয়া যায়নি। অনেকটা শান্তিপূর্ণভাবেই চলছে নির্বাচনি প্রচারণা।


সপ্তম ও অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ঢাকা-১৯ আসনে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছিলেন তালুকদার তৌহিদ জং মুরাদ। পরে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হন তিনি।


অন্যদিকে, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন বর্তমান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। এর মধ্যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।


২০০১ সালের বাংলাদেশ আদমশুমারিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি লক্ষ্য করার পর বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের পূর্বে জনসংখ্যার পরিবর্তন প্রতিফলিত করার জন্য জাতীয় সংসদের নির্বাচনি এলাকার সীমানা পুনঃনির্ধারণ করে এই নির্বাচনি আসন সৃষ্টি করে। ২০০৮ সালে পুনঃনির্ধারণের ফলে ঢাকা মহানগর এলাকায় সাতটি নতুন আসন যোগ করা হয়েছিল, যার ফলে রাজধানীতে আসন সংখ্যা ১৩ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০টি-তে দাঁড়িয়েছিল। ২০১৪ সালের বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন ঢাকা-১৯ নির্বাচনি এলাকার সীমানা হ্রাস করে। পূর্বে সাভার উপজেলার আরেকটি ইউনিউয়ন পরিষদ, কান্দিয়া এই সীমানার অন্তর্ভুক্ত ছিল।


ঢাকা-১৯ (সাভার) আসনে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের টিকেটে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হন ডা. মো. এনামুর রহমান।


২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম নির্বাচনে ডা. এনামুর রহমান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।


২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হন। তিনি ভোট পান ২ লাখ ৮২ হাজার ১০৯টি। ওই নির্বাচনে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ডা. দেওয়ান সালাউদ্দিন (বিএনপি) ভোট পান ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৩৬টি।


২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হন ডা. দেওয়ান সালাউদ্দিন (বিএনপি)। তিনি ভোট পান ১ লাখ ৩৯ হাজার ৭৮৮টি। ওই নির্বাচনে তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদ আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে ভোট পেয়েছিলেন ৯৮ হাজার ৬২ট।


১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হন ডা. দেওয়ান সালাউদ্দিন (বিএনপি)। তখন তিনি ভোট পেয়েছিলেন ৭১ হাজার ২৪৩টি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আশরাফউদ্দিন খান ইমু আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট পান ৪৭ হাজার ৩৪৩টি।


এছাড়া ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নে ধানের শীষ প্রতীকে ৬৩ হাজার ১১৯টি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন নিয়ামত উল্লাহ। ওই নির্বাচনে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার প্রার্থী সামসুদ্দোহা খান মজলিশ পেয়েছিলেন ৩৭ হাজার ২৯৮ ভোট।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com