৭ দিনে খুলনা বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১৫ মামলা, গ্রেফতার দেড়শ
প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২৩, ১৭:১২
৭ দিনে খুলনা বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১৫ মামলা, গ্রেফতার দেড়শ
খুলনা থেকে রেজাউল ইসলাম তুরান
প্রিন্ট অ-অ+

বিএনপির ঢাকা মহাসমাবেশ (২৮ অক্টোবর) থেকে এক সপ্তাহে খুলনা বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে ১৫টি মামলা ও দেড় শতাধিক নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। এরমধ্যে কেএমপিতে নতুন ৩টি ও জেলায় নতুন ১২টি মামলা করেছে পুলিশ। দলটির অভিযোগ, এজাহার নামীয় আসামী না হলেও গ্রেফতার করে অজ্ঞাত আসামী হিসেবে বিভিন্ন থানায় দায়েরকৃত মামলায় আদালতে প্রেরণ করছে পুলিশ।


ইতোমধ্যে খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমীর এজাজ খান, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মাহমুদ আলী, দাকোপ উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুল মান্নান, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুল মান্নান মিস্ত্রীসহ দেড় শতাধিক নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।


দলীয় সূত্রের দাবি ঢাকার মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে জেলা ও মহানগরের ৭৫ জনকে গ্রেফতার দেখিয়েছে ২০২১-২২ সালের বিভিন্ন মামলায়। অবরোধের সময় ৬৫ জনকে নতুন মামলায় আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। নতুন দায়েরকৃত ১৫ মামলার সবগুলোই বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়েরকৃত। জেলার ফুলতলায় ১, দিঘলিয়ায় ১, বটিয়াঘাটায় ১, তেরোখাদায় ১, পাইকগাছায় ১, কয়রায় ১, রূপসায় ২, দাকোপ ২ ও ডুমুরিয়ায় ২টি মামলা হয়েছে। এছাড়া মহানগরীর খুলনা সদর থানায় ১টি, সোনাডাঙ্গা থানায় ১টি ও আড়ংঘাটা থানা ১টি নতুন মামলা দায়ের করা হয়েছে।


খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমীর এজাজ খানকে পুলিশ গ্রেফতার দেখিয়েছে বটিয়াঘাটা উপজেলার জলমা এলাকা।


বটিয়াঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শওকত কবির গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বুধবার বটিয়াঘাটা থানায় হওয়া বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার জলমা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।


এছাড়া গত ৩১ অক্টোবর খুলনা সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. খালিদ উদ্দীন বাদী হয়ে ৪৭ জনের নাম উল্লেখ করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা করেন। ওই মামলাতেও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমীর এজাজ খানকে আসামি করা হয়। এ ছাড়া একই দিন নগরের সোনাডাঙ্গা থানার এসআই নিয়াজ মোরশেদ বাদী হয়ে ৩৭ জনের নাম উল্লেখ করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আরেকটি মামলা করেন। ওই মামলায়ও আমীর এজাজ খানকে আসামি করা হয়েছে।


খুলনা মহানগরীর তিন থানায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশের দায়েরকৃত ৩ মামলায় বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. শফিকুল আলম মনা, সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন, জেলা সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পিসহ মোট আসামি করা হয়েছে ১২৮৭ জনকে।


সর্বশেষ, বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) রাতে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. শফিকুল আলম মনাকে গ্রেফতারের নামে তার শ্বশুর বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ।


মনার স্ত্রী বিবার্তাকে জানান, রাতে পুলিশ ওই বাড়ির দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে এবং তল্লাশির নামে বাড়ির লোকজনদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে।


বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) তেরখাদা থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির সঙ্গে জড়িত।


তেরখাদা উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফখরুল ইসলাম বাবু বিবার্তাকে বলেন, মামলায় আমার বাবাকে আসামি করা হয়েছে, তিনি ১১ বছর আগে মারা গেছেন। আমাকে ১০ নম্বর আসামি করা হয়েছে। ২ নভেম্বর তেরখাদা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) চঞ্চল কুমার হালদার বাদী হয়ে মামলাটি করেন।


তেরখাদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরদার মোশাররফ হোসেন বিশেষ ক্ষমতা আইন ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলাটি গ্রহণ করেন। মামলায় মোট ৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া আরো ১৫০ থেকে ২০০ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।


খুলনা জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুল মান্নান মিস্ত্রীকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে পুলিশ। মান্নানের ভাগ্নি মুন্নি খাতুন বিবার্তাকে জানান, বুধবার (১ নভেম্বর) বিকেলে সাদা পোশাকের ৮ জন নিরালা এলাকায় মান্নানের ভাড়া বাসায় প্রবেশ করে। তাদের সবার কাছে অস্ত্র ছিল।


খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আল-মামুন বিবার্তাকে বলেন, আব্দুল মান্নান মিস্ত্রীকে আটক বা আটকের কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। খুলনা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার বিএম নুরুজ্জামানও একই কথা জানিয়েছেন।


খুলনা বিএনপির কেন্দ্রীয় তথ্য সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুলসহ খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়েছে। গত মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) খুলনা সদর থানায় এসআই খালিদ উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় মোট ৪৭ জনকে আসামি করা হয়েছে।


খুলনা সদর থানার ওসি হাসান আল মামুন বিবার্তাকে জানান, সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় দুইজনকে আটক করা হয়েছে।


অপরদিকে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমির এজাজ খান, সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পী, নগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম জহিরসহ বিএনপির দুই শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে পৃথক মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে সোনাডাঙ্গা থানার এসআই নিয়াজ মোর্শেদ বাদী হয়ে মামলাটি করেন।


সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমতাজুল হক জানান, এ ঘটনায় ছয়জনকে আটক করা হয়েছে।


খুলনা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন বিবার্তাকে বলেন, সরকার সারাদেশে বিএনপি নেতা-কর্মীদের উপর বলপ্রয়োগ করে চলমান অবরোধ কর্মসূচি বানচাল করার ব্যর্থ চেষ্টা করছে। এখন নতুন করে মামলা করছে। যে কোনো উপায়ে অবরোধ চলবে বলে জানান তিনি।


বিবার্তা/রোমেল/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com