‘অজাতশত্রু এমপি শাহজাহান কামালের মৃত্যু রাজনৈতিক অঙ্গনে অপূরণীয় ক্ষতি’
প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৯:৩৭
‘অজাতশত্রু এমপি শাহজাহান কামালের মৃত্যু রাজনৈতিক অঙ্গনে অপূরণীয় ক্ষতি’
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

এ কে এম শাহজাহান কামাল। সাবেক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল ছিলেন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও সফল ব্যবসায়ী। লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের সভাপতি শাহজাহান কামালের জন্ম ১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারি লক্ষ্মীপুরের সদর উপজেলার মজুপুর গ্রামে। পিতা ফরিদ আহমেদ ও মাতা মাসুমা খাতুন। শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ভোরে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ছাত্রজীবন থেকে শাহজাহান কামাল একজন ছাত্রনেতা হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন।


শাহজাহান কামালের মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা। শোকবার্তায় তারা মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে বলেন, প্রবীণ এ রাজনীতিবিদের মৃত্যু দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অপূরণীয় ক্ষতি। তিনি তার কর্মের মধ্য দিয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।


প্রবীণ এ রাজনীতিকের মৃত্যুতে শোকাহত পুরো লক্ষ্মীপুর জেলা। স্থানীয় ও জাতীয় রাজনৈতিক নেতারা বলছেন, অজাতশত্রু শাহজাহান কামাল জনগণের কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করতেন। তার কাছে এলাকার সমস্যা নিয়ে গেলে তিনি তাদের কথা ধৈর্য সহকারে শুনেছেন এবং সমস্যা সমাধানে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন। একজন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে তিনি আজীবন মানুষের সেবা করে গেছেন।


তারা বলছেন, শাহজাহান কামাল আপাদমস্তক একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন। ছাত্র-রাজনীতি দিয়ে অভিষেক হয়েছিল তার রাজনৈতিক জীবনের। এরপর রাজনীতিকে মিশিয়ে নিয়েছিলেন জীবনের সাথে। তারই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে তিনি রাজনৈতিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হয়েছেন এবং স্থানীয় ও জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন।


শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে জাতীয় সংসদ ভবন সংলগ্ন ন্যাম ভবন প্রাঙ্গণে বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম শাহজাহান কামালের প্রথম জানাজার নামাজ অংশ নিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। জানাজা নামাজ শেষে তার মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়ে কাদের বলেন, রাজনীতিতে ভালো মানুষ এবং সঠিক দেশপ্রেমিকের সংখ্যা দিনদিন কমে যাচ্ছে।


বিকেলে লক্ষ্মীপুরে শাহজাহান কামালের দ্বিতীয় জানাজায় অংশ নিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও ভোলা-১ আসনের সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ। জানাজা পূর্বে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। এসময় তিনি বলেন, তার মতো একজন ভালো মানুষ, সৎ লোক আর খুঁজে পাবো না। আমার এতো আপন ছিল। তার কথা আমি কোনোদিন ভুলতে পারব না। তিনি একজন সংগ্রামী নেতা ছিলেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাকে জান্নাতবাসী করুন।


লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু বলেন, আমরা একজন অভিভাবক হারিয়েছি। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ছিলেন। তার মৃত্যুতে লক্ষ্মীপুরে রাজনীতির অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।


লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন এমপি শোক প্রকাশ করে বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান কামাল দীর্ঘদিন দক্ষতার সঙ্গে লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এরকম প্রবীণ রাজনীতিবিদের মৃত্যু দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তিনি তার কর্মের মধ্য দিয়ে আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।


জানা যায়, এ কে এম শাহজাহান কামাল ১৯৬৩ সালে লক্ষ্মীপুর মডেল হাইস্কুল থেকে এসএসসি, চৌমুহনী মদন মোহন কলেজ থেকে ১৯৬৫ সালে এইচএসসি পাস করেন এবং একই কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। তারপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম এ শ্রেণিতে এবং আইন বিভাগেও ভর্তি হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে ১৯৬৬ সালের ৬ দফা ও ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। এসময় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির দাবিতে রাজপথের আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।


১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলায় সক্রিয়ভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি লক্ষ্মীপুর জেলায় গণ-আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ১৯৭২ সালে নবগঠিত লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮৫ সালে লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালে জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালে তিনি লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।


পেশাগত জীবনে শাহজাহান কামাল একজন ব্যবসায়ী। ব্যবসার পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। ১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি এবং সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।


জানা যায়, ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে তৎকালীন সংসদে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত, ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, পুল-কালভার্ট পুনর্নির্মাণে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে কাজ শুরু করেন। সংসদ সদস্য হিসেবে শাহজাহান কামাল দলমত নির্বিশেষে মানুষের সেবায় নিরলস কাজ করে গেছেন। অজাতশত্রু এমপি শাহজাহান কামালের মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল।


বিবার্তা/সোহেল-সুমন/রোমেল

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com