নয়ে-ছয়ে শুরু সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যক্রম
প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২০:০৩
নয়ে-ছয়ে শুরু সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যক্রম
সোহেল আহমদ
প্রিন্ট অ-অ+

গত বছরের ১৫ নভেম্বর সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে ৯ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করেন তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নতুন নেতৃত্ব পায় জেলা আওয়ামী লীগ।


গত ২২ সেপ্টেম্বর শান্তিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ৭১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের নতুন সভাপতি নুরুল হুদা মুকুট ও সাধারণ সম্পাদক নোমান বখত পলিন। তবে রহস্যজনকভাবে এই পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সভাপতি-সম্পাদক ঠিক রেখে বাদ দেয়া হয়েছে সম্মেলনের পর ঘোষিত কমিটির বাকি ৭ সদস্যকে।


কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে ঘোষিত আংশিক কমিটিতে থাকলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান না পাওয়ায় ক্ষোভ জানাচ্ছেন পদবঞ্চিত নেতারা। পূর্ণাঙ্গ কমিটি থেকে বাদ পড়া নেতারা বলছেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জেলা আওয়ামী লীগ তাদের বাদ দিয়েছে। কোন আইনে এবং কোন কারণে তাদের বাদ দেয়া হয়েছে তা তারা জানতে চান।


গত ২৫ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বাদ পড়া আংশিক কমিটির সাত সদস্য। চিঠিতে দাবি করা হয়, জেলা আওয়ামী লীগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাদেরকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি থেকে বাদ দিয়েছে।


এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি বলছেন, ৯ সদস্যের আংশিক কমিটির চিঠিটি ভুয়া। সম্মেলন শেষে চারজনের নাম ঘোষণা হয়েছিল। অন্যদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের ভাষ্য, পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে আংশিক কমিটির সাতজন বাদ পড়া বড় কোনো বিষয় নয়।


দলীয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১৫ নভেম্বর শান্তিগঞ্জ বাজারস্থ মাঠে শান্তিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলন শেষে শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সিতাংশু শেখার ধর সিতুকে সভাপতি ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের ব্যক্তিগত সহকারী হাসনাত হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে ৯ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই কমিটির অন্যরা ছিলেন, সহ-সভাপতি বুরহান উদ্দিন দোলন, গোলাম হায়দার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুক মিয়া, মো. মাসুদ মিয়া ও মিজানুর রহমান জিতু। সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইকবাল হোসেন ও নিহার রঞ্জন তালুকদার।


শান্তিগঞ্জ উপজেলা আংশিক কমিটিতে থাকা সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইকবাল হোসেন পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বাদ পড়েছেন। তিনি বিবার্তাকে বলেন, আমরা তৃণমূল থেকে রাজনীতি করে আসছি। আমাদের যারা বাদ পড়েছে সবাই কিন্তু তৃণমূলের রাজনীতি করে এসেছে। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে সেদিন আমাদের সিলেক্ট করা হয়েছিল এবং সাইন করা হয়েছিল। তারপর আমরা বিভিন্ন কার্যক্রমও পরিচালনা করেছি। কিন্তু সম্প্রতি ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে আমাদের রাখা হয়নি।


ইকবাল হোসেন বলেন, সভাপতি-সম্পাদক ছাড়া আমাদের আংশিক কমিটির সবাইকে বাদ দিয়ে দিয়েছে। আমি তো জীবনে এ ধরনের কোন ঘটনা দেখি নাই, শুনিও নাই। যেখানে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ, জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের উপস্থিতিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষর করেছে- সেই কমিটির সদস্যদের বাদ দিয়ে কমিটি দিয়েছে। যদি সম্পূর্ণ বাতিল করতো তাহলে একটা কথা ছিল। দুইজন রেখে সবাইকে আউট করে দিয়েছে। অল টাইম রাজনীতি করার পরও আমাকে বাদ দেয়া হলো। এটা বোধগম্য নয়। কোন কারণে, কোন আইনে বাদ পড়েছি এটা জানতে চাই।


বাদ পড়া আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক নিহার রঞ্জন তালুকদার বিবার্তাকে বলেন, শান্তিগঞ্জ উপজেলা সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষ হওয়ার পর পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাহেবের বাসায় দ্বিতীয় অধিবেশন হয়। কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দের সর্বসম্মতিক্রমে আমাদের ৯ সদস্যের কমিটির ঘোষিত হয়। তখন পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। এই পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে আমাদের কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক রেখে বাকি ৭ জনকেই বাদ দিয়ে দিয়েছে।


তিনি বলেন, এখানে একটা বাণিজ্য হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটির বেশিরভাগ অনুপ্রবেশকারী সদস্য। আমি ছাত্রলীগ করেছি, যুবলীগ করেছি। উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলাম। পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণায় দলীয় নিয়ম মানা হয়নি। ব্যক্তিগত প্রভাব থেকে এসব করা হয়েছে।


পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে আংশিক কমিটির ৭ জনকে বাদ দেয়ার কারণ জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল হুদা মুকুট বিবার্তাকে বলেন, এটা আসলে ঠিক না। তারা আসলে চার জনের ঘোষণা দিয়েছিল। চারজনের মধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়া বাকি দুইজন পদত্যাগ করেছিল। তাদের পদত্যাগের কপি আমরা কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। চার জনের নাম ঘোষণা করেছিল। পরবর্তীতে ইমন সাহেব এবং মতিউর রহমান সাহেবের কাছ থেকে দস্তখত নিয়ে আবার একটা জটিলতা সৃষ্টি করে আমাদের মন্ত্রী (এমএ মান্নান) মহোদয়কে বিতর্কিত করার জন্য তারা এটা করছে।


তিনি বলেন, মতিউর রহমান দস্তখত দেননি। কারণ, ঘোষণা হয়নি যখন তখন কীভাবে উনি দস্তখত দিবেন। পরবর্তীতে ওনাকে যেভাবেই হোক বুঝাইয়া দস্তগত নিয়েছে। সবার সামনে ঘোষণা দিয়েছে চারজনের নাম। সম্মেলনের পর যদি দস্তখত নেয় তাহলে তো এটা কার্যকরী না। নয়জনের আংশিক কমিটির চিঠিটি ভুয়া বলেও মন্তব্য করেন তিনি।


এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নোমান বখত পলিন বিবার্তাকে বলেন, নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পর সভাপতি-সম্পাদকের কাগজটা আমাদের কাছে পৌঁছেছে। পরবর্তীতে এরা যদি কেউ কোন জায়গা থেকে আগের সাধারণ সম্পাদক, সভাপতির কাছ থেকে কিছু নিয়ে আসে কিংবা কিছু হয় আমি জানি না। জেলা আওয়ামী লীগের আগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা কাগজটা আমাকে দেখানো হয়েছে। ওই সময় আমরা দায়িত্বে ছিলাম না।


তিনি বলেন, গত কমিটিতে অনেক সমস্যা আছে। কিছু কিছু সমস্যা আছে- আমরা বসে সমাধান করব। যদি তা এরকম থাকে ওনারা আমাদের কাছে আসতে পারতেন। আমরা বসে এটা সমাধানের চেষ্টা করব। এটা এমন কিছু না। বড় একটা দলের মধ্যে থাকতেই পারে। আগের কমিটি যারা দিয়েছিলেন কিংবা লিখে হয়তো পরে দিয়েছিলেন- যেগুলো কাগজ আমাদের কাছে হয়তো পৌঁছে নাই। আমরা চেষ্টা করছি সবগুলো কালেক্ট করার জন্য। সবগুলো হয়ে গেলে হয়তো বসে শেষ করা যাবে। এটা তেমন কোনো সমস্যা না।


শান্তিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এনামুল হক ইমন। আংশিক কমিটি কত সদস্যের ছিল- জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মতিউর রহমান বিবার্তাকে বলেন, আমরা সবার মতামত নিয়ে একটি কমিটি দিয়েছিলাম। বোধ হয় নয়জনের।


পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে আংশিক কমিটির নেতাদের বাদ দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি অনেক বছর ধরে সংগঠনের সাথে আছি। ১৯৬০ সাল থেকে ছাত্রলীগ করেছি। আমি তো কোনদিন দেখিনি সম্মেলনের মাধ্যমে ঘোষণা করা এগুলো (কমিটির নাম) বাদ দিয়ে নতুন কমিটি করতে। মিটিং না ডেকে এটা হয় না।


এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এনামুল হক ইমন বিবার্তাকে বলেন, নয়জন বা সাতজন হবে। আমার আংশিক কমিটি দিয়েছিলাম। আমি, জেলা সভাপতি লুৎফুর রহমান, দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, সিলেট টিমের সদস্য, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আজিজুস সামাদ আজাদ ডন, মুহিবুর রহমান মানিক এমপি ও জয়া সেনগুপ্ত এমপি ওনারা উপস্থিত ছিল। ওনাদের উপস্থিতিতে আমরা স্বাক্ষর করেছি। আংশিক কমিটি দেয়ার পর যে পদগুলো খালি ছিল এখন পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়ার সময় বাকিগুলো পূরণ করার কথা, এটাই নিয়ম।


তিনি বলেন, আমরা যে আংশিক কমিটি দিয়েছি এটা কাউন্সিলের সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। কাউন্সিলের মাধ্যমে অ্যাপ্রুভ হওয়ার পর আমরা স্বাক্ষর করেছি। এটা তো কেউ পরিবর্তন করতে পারে না। সে সময় অনুমোদন করা কমিটির কপি ফেসবুকে আছে। কমিটিতে কারা আছে না আছে পত্রিকায় নিউজ হয়েছে। সম্মেলনের পর দিন স্থানীয় পত্র-পত্রিকায়ও নিউজ হয়েছে। এগুলো আছে তো। একটা কিছু বললে তো হবে না।


জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) আহমদ হোসেন বিবার্তাকে বলেন, এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নাই।


বিবার্তা/সোহেল/রোমেল

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com