খালেদ মোশারফ বীর উত্তমসহ ৩ সেনা কর্মকর্তা হত্যা মামলায় জাসদ নেতা কর্নেল আবু তাহেরের নাম যুক্ত করায় প্রতিবাদ জানিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)।

শুক্রবার, ১২ মে দলটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি এক বিবৃতিতে এই প্রতিবাদ জানায়।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদার কন্যা নাহিদ ইজাহার খান এমপি কর্তৃক গত ১০ মে বুধবার রাতে শেরেবাংলা নগর থানায় ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর তার পিতা কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা, কর্নেল এটিএম হায়দার ও ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের করাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যা, ৩ নভেম্বর জেল খানায় চার জাতীয় নেতা হত্যা, ৭ নভেম্বর হুদা-হায়দার-খালেদ হত্যাকাণ্ড, ৭ নভেম্বর পরবর্তীতে সশস্ত্র বাহিনীর অভ্যন্তরে উশৃংখল অফিসারদের দ্বারা সংঘঠিত সকল হত্যা-খুন-গুমের ঘটনার তদন্ত ও বিচার হওয়া জরুরি।

কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদার মেয়ে নাহিদ ইজহার খান এমপি যে মামলা দায়ের করেছেন, সে মামলায় তার পিতাসহ তিনজন অফিসারের হত্যাকারী হিসাবে মেজর আব্দুল জলিল, মেজর আসাদ উজ্জামান, কর্নেল সিরাজ, মেজর মুক্তাদিরের নাম উল্লেখ করেছেন। উল্লেখিত চারজনই অফিসার, তারা জেসিও বা এনসিও নন। তারা কেউই তৎকালে সেনাবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল তাহেরের অধীনস্থ কোনো কমান্ডে ছিল না।

৭ নভেম্বর ছিল সশস্ত্র বাহিনীর উশৃংখল অফিসারদের বিশৃংখল উন্মত্ততার বিরুদ্ধে সিপাহীদের রক্তপাতহীন, মানবিক ও সুশৃংখল প্রতিবাদ।

সেনাবাহিনীর আলোচ্য টু ফিল্ড আর্টিলারি কখনোই কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে, কর্তৃত্বে বা দখলে ছিল না। সিপাহীগণ বিদ্রোহ করেন ৬ নভেম্বর দিবাগত রাতে, অর্থাৎ ৭ নভেম্বর প্রথম প্রহরে রাত একটায়। বিদ্রোহ সংগঠিত করার পর বিদ্রোহী সিপাহীগণ কর্নেল তাহেরকে ক্যান্টনমেন্টে টু ফিল্ড আর্টিলারি হেড কোয়ার্টারে নিয়ে যান। কর্নেল তাহের সেখানে রাত সাড়ে তিনটা পর্যন্ত অবস্থান করেন এবং বন্দিদশা থেকে মুক্ত জিয়াকে পরদিন সকালে শহীদ মিনারে গিয়ে বিদ্রোহী সিপাহীদের পক্ষে অবস্থান নেয়ার ঘোষণা দেয়ার আহ্বান জানিয়ে ক্যান্টনমেন্ট ত্যাগ করে এলিফ্যান্ট রোডে নিজ বাসভবনে চলে আসেন। ৭ নভেম্বর সকালে যখন হুদা-হায়দার-খালেদকে হত্যা করা হয়, টু ফিল্ড অর্টিলারি তখন জিয়া ও মীর শওকতের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বে তাদেরই অনুসারীদের দখলে ছিল।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মামলায় যে কয়জন অফিসারের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তারা সবাই অফিসার ছিলো; তারা কেউই এনসিও বা জেসিও ছিলো না। তারা কেউই তৎকালে সেনাবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল তাহেরের কমান্ডে ছিল না। তারা কর্নেল তাহের বা জাসদের সাথেও যুক্ত ছিল না। তারা সকলেই প্রকাশ্যে জিয়ার একান্ত অনুসারী ছিলো। এসব তথ্য ও সত্য উদঘাটিত, উন্মোচিত, প্রকাশিত হবার পরও এ মামলায় কর্নেল তাহেরকে হুকুমের আসামী হিসাবে উল্লেখ করা বোকামি। কর্নেল তাহেরের নাম মামলায় যুক্ত করার ফলে প্রকৃত ঘটনা, তথ্য, সত্য আড়াল হবে; প্রকৃত খুনীরা সুবিধা পাবে।

বিবৃতিতে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যা, ৩ নভেম্বর জেল খানায় চার জাতীয় নেতা হত্যা, ৭ নভেম্বর হুদা-খালেদ মোশাররফ-হায়দার হত্যা, ৭ নভেম্বর পরবর্তীতে সশস্ত্র বাহিনীর অভ্যন্তরে উশৃংখল অফিসারদের দ্বারা সংঘঠিত সকল হত্যা-খুন-গুমের ঘটনার প্রকৃত তথ্য জাতির সামনে উন্মোচন করার জন্য জাতীয় তদন্ত কমিশন গঠন ও স্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানান।

উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানের মধ্যে মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ বীর উত্তমসহ তিন মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার ঘটনায় প্রায় ৪৮ বছর পর গত ১০ মে, বুধবার রাতে ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি করেন সে সময় হত্যাকাণ্ডের শিকার কর্নেল নাজমুল হুদা বীর বিক্রমের মেয়ে সংসদ সদস্য নাহিদ ইজাহার খান।

মামলায় তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং জাসদ নেতা লে. কর্নেল আবু তাহেরকে (অব.) হুকুমের আসামি করা হয়েছে।

বিবার্তা/এনএস