
বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশ নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের জবাবে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক ঢুকবে না, তাহলে কি মাফিয়া, মাস্তান আর ঋণখেলাপিরা ঢুকবে?
১৯ মে, রবিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আর্থিক সহায়তা প্রদানের এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
গত ১৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী গ্রামের একটি কালী মন্দিরে আগুন লাগার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাশের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থানরত নির্মাণ শ্রমিকদের ওপর হামলা হয়। স্কুলের টয়লেট নির্মাণের কাজ চলছিল। সেজন্য শ্রমিকরা সেখানে ছিলেন। সেখানে পিটুনিতে দুই শ্রমিকের প্রাণ যায়। তাদের পরিবারকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়।
রিজভী বলেন, এক মর্মান্তিক পরিস্থিতির মধ্যে দেশ তার দিন অতিক্রম করছে। অতিক্রম হওয়া দিন কোনোটিই সুখকর নয়। এখানে জীবন ও সম্পদের কোনো নিরাপত্তা নেই। জনগণের মনোভাব ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য সরকার একের পর এক পন্থা অবলম্বন করছে। মধুখালীতে শ্রমিকদের পিটিয়ে হত্যা-এটি একটি পন্থা। এরা মানুষকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করে না। এরা মানুষের লাশ ও রক্তপাতের উপর দিয়ে হেঁটে যেতে ভালবাসেন। গোটা জাতিকে একটি গোরস্থান বানানোর প্রক্রিয়ায় তারা লিপ্ত থাকে। আজ লাশ হচ্ছে জীবন্ত মানুষ। তার একটি ঘটনা ঘটে মধুখালীতে। এগুলো পরিকল্পিত নাশকতার এক একটা নাটক, সরকারের পক্ষ থেকে এগুলো তৈরি করা হচ্ছে। সরকার তার বহুমুখী ব্যর্থতা ঢাকতেই একের পর এগুলো করে যাচ্ছে।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, শুধু ব্যাংক থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে গেছে। আমাদের জিডিপির ১২ শতাংশ নাই হয়ে গেছে। ৯২ হাজার কোটি টাকা শুধু ব্যাংক থেকে লোপাট হয়ে গেছে। লোপাটকারি কারা- এরা সবাই ক্ষমতাসীনদের আত্মীয়-স্বজন, কাছের লোক।
রিজার্ভ থেকে পাঁচ বিলিয়ন ডলার উধাও করে দেয়া হয়েছে জানিয়ে রিজভী বলেন, এখন তলানিতে রিজার্ভ। সরকার বলছে, ১৩ বিলিয়ন ডলার আছে। অথচ যারা সচেতন মানুষ তারা বলছেন ৭ থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার আছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতের ঋণ পরিশোধ করতে ৪ বিলিয়ন ডলার যাবে। রিজার্ভ তো তলানিতেই।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া রিজভী বলেন, ব্যাংক কি সেনাবাহিনীর ক্যান্টনমেন্ট? ক্যান্টনমেন্টেও তো বৈধ মানুষ যেতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক তো জনগণের আমানত রক্ষার প্রতিষ্ঠান। এখানে সাংবাদিকরা তো যেতে পারে। সাংবাদিকরা তো দেশের বাইরে কানাডা, মালয়েশিয়া, দুবাইয়ে বাড়ি করেনি। ওবায়দুল কাদের সাহেব আপনি এসব কী কথা বলছেন? আপনাদের কাছের লোক যারা ব্যাংকের টাকা লুটপাট করে বিত্তের মালিক হয়েছেন, দেশের বাইরে বাড়ি করেছেন তাদের কথা সাংবাদিকরা যেন না জানতে পারে, সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
ঘটনা তো নিশ্চয়ই ঘটেছে জানিয়ে রিজভী বলেন, ভারতীয় একটি পত্রিকা লিখলো বিলিয়ন ডলার হ্যাক হয়ে গেছে। ব্যাংক তো একটা স্টেটমেন্ট দিলো, কারণ তারা সরকারের চাকরি করেন। সরকার যা বলবে তাদেরকে তাই শুনতে হবে। কিন্তু মূল ঘটনা কি আড়াল করা যাবে, সাংবাদিকদের ঢুকতে না দিয়ে? কাদের সাহেব কত দিন আপনি মুখ লুকিয়ে রাখবেন? যে নাশকতার কথা একজন অর্থনীতিবিদ বলেছেন, সেটি তো দিনকে দিন ফুটে উঠছে। এটার তো দৃষ্টান্ত আছে, কয়েক বছর আগে ৮/১০ মিলিয়ন ডলার হ্যাক হয়েছে, তারপরও বাংলাদেশ ব্যাংক তার রিপোর্ট দিতে পারেনি। সেজন্য ঢুকতে না দেওয়ার মধ্যেই তো রহস্য লুকিয়ে আছে। ওবায়দুল কাদেরের সাহেব আপনি আর কতদিন লুকিয়ে রাখবেন? আপনার কথায় তো, দানব সরকারের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
শিক্ষা, সামাজিকতা সব ধ্বংস করে ফেলছে সরকার এমন অভিযোগ করে রিজভী বলেন, শিক্ষার্থীদের দ্রুত বেশি পাস দেখানোর এটি রাজনৈতিক কারণে করছে সরকার প্রধান। ছাত্রছাত্রীদের মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে এ কাজ করছে না। রাজনৈতিক বেনিফিট নিতে এ কাজ করছেন তারা।
বিবার্তা/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]