রাজপথে দুই মাস চূড়ান্ত আন্দোলন করবে বিএনপি
প্রকাশ : ১৫ এপ্রিল ২০২৩, ১৬:৩১
রাজপথে দুই মাস চূড়ান্ত আন্দোলন করবে বিএনপি
কিরণ শেখ
প্রিন্ট অ-অ+

সরকার পতনে যুগপৎ আন্দোলন করছে বিএনপি এবং সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। এই আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নীতিগত সিদ্ধান্তও নিয়েছে দলটি। এ লক্ষ্যে ঈদ-উল-ফিতরের পর সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসবে বিএনপি। এই বৈঠকের চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য কর্ম-পরিকল্পনা ও কৌশল নির্ধারণ করা হবে। আর আগামী মে মাস (ঈদের পর) থেকেই রাজপথে যুগপৎ আন্দোলনের গতি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করা হবে বলেও জানা গেছে।


বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সরকার পতনে যুগপৎ আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দুই মাস সময় নেওয়া হবে। কারণ দীর্ঘ সময় ধরে রাজপথে কর্মসূচি করলে আন্দোলনের গতি হারিয়ে ফেলবে এবং আন্দোলনকে সরকার ভিন্নখাতে প্রবাহিত করবে। তাই বিএনপি এবং সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সিদ্ধান্ত নিয়েছে, রাজপথে আন্দোলন হবে দুই মাস। এই দুই মাসের মধ্যে দাবি আদায় করবে তারা।


তবে সরকার পতনে যুগপৎ আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নেওয়ার জন্য চলতি বছরের কোন দুই মাস বিএনপি এবং সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো রাজপথে থাকবে তা এখনো নির্ধারিত হয়নি। ঈদের পরে লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকে এবিষয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।


এদিকে বিগত বছরগুলোতে রমজান মাসে ইফতারের রাজনীতি নিয়েই ব্যস্ত ছিলো বিএনপি। কিন্তু এবছর তারা ইফতারের রাজনীতির সঙ্গে সঙ্গে রমজানেও রাজপথে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। দলটি বলছে, আন্দোলন চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে এবং আন্দোলনের গতি ধরে রাখতে রমজানেও রাজপথে থাকতে হচ্ছে। এজন্য রমজানেও কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।


এবিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাংলাদেশে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে, সেই পরিস্থিতিতে আমরা রমজান মাসেও রাজনৈতিক কর্মসূচি দিতে বাধ্য হয়েছি। কারণ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনকে আমরা চলমান রাখতে চাই। তাই রমজানেও আমরা কর্মসূচি দিয়েছি।


এরই অংশ হিসেবে বিদ্যুৎ-গ্যাসসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আওয়ামী সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদে এবং পূর্ব ঘোষিত ১০ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে গত ১ এপ্রিল সারাদেশের সব মহানগর ও জেলায় বেলা ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি এবং ৮ এপ্রিল সারাদেশের সব মহানগরের থানায় ও জেলার উপজেলা পর্যায়ে বেলা ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে দলটি। আর ৯ এপ্রিল থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সারাদেশের সব ইউনিয়নে প্রচারপত্র (১০দফা, রাষ্ট্রকাঠামো মেরামত, আওয়ামী সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতি) বিলি মানববন্ধন এবং অবস্থান কর্মসূচিও করেছে। যেসব বিভাগে এসব কর্মসূচি হয়েছে, সেগুলো হলো: ৯ এপ্রিল রংপুর ও চট্টগ্রাম বিভাগে, ১০ এপ্রিল রাজশাহী ও সিলেট বিভাগে, ১১ এপ্রিল খুলনা ও কুমিল্লা বিভাগে, ১২ এপ্রিল ঢাকা ও বরিশাল বিভাগে এবং ১৩ এপ্রিল ময়মনসিংহ ও ফরিদপুর বিভাগে।


এছাড়া ২৮ মার্চ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত সারাদেশের সব জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় সভা, দুস্থ, অসহায় ও ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের সহায়তাসহ বিভিন্ন গণসংযোগমূলক কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি।


জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বিবার্তাকে বলেন, এটা তো বলা যায় না যে, আন্দোলন কখন তুঙ্গে উঠবে। কারণ আন্দোলনের গতি উঠা-নামা করে। তবে আমরা চেষ্টা করছি, ইনশাআল্লাহ আমরা পারব।


এবিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বিবার্তাকে বলেন, তারিখ ও সময় নির্ধারণ করে বলা সম্ভব না। এর জন্য মুভমেন্ট তৈরি হয়। আর সেই মুভমেন্টও তৈরি হয়ে গেছে। তাই অচিরেই আপনারা দেখতে পারবেন। ঘোষণা আসবে।


জানতে চাইলে ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক ও গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বিবার্তাকে বলেন, ঈদের পরে আন্দোলনের গতি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাবে। এবিষয়ে ঈদের পরেই লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেই বৈঠকেই আন্দোলনের বিষয়ে আলোচনা হবে। আর আন্দোলন মূলত হবে দুই মাস।


জানতে চাইলে এনপিপির চেয়ারম্যান ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বিবার্তাকে বলেন, আপনারা আন্দোলন ঈদের পরে দেখতে পাবেন। তবে কর্মসূচি এখনো নির্ধারিত হয়নি। ঈদের পরেই কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে।


জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের শীর্ষ নেতা ও ডেমোক্রেটিক লীগের (ডিএল) সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি বিবার্তাকে বলেন, ঈদের পরে লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক হবে। সেখানে আন্দোলনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে ঈদের পর একটু একটু করে আন্দোলনের গতি বাড়বে।


প্রসঙ্গত, গত ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর কমলাপুরের গোলাপবাগ মাঠে ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ থেকে সরকার পদত্যাগের দাবিতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে যুগপৎভাবে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দেয় বিএনপি। এরপর ২৩ ডিসেম্বর গণমিছিলের মধ্য দিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি শুরু করে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। গত পাঁচ মাসে তারা যুগপৎভাবেই সারাদেশে অবস্থান কর্মসূচি, মানববন্ধন বিক্ষোভ সমাবেশ এবং বিভাগীয় সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি করেছে।


বিবার্তা/ কিরণ/ রোমেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com