জলাশয়, বাঁধ আর ঝরনায় ঘেরা অযোধ্যা পাহাড়ের অপার সৌন্দর্য দুচোখ ভরে উপভোগ করার মতো। বহু স্মৃতির স্মারক অযোধ্যা পাহাড়। এ পাহাড়ের সবচেয়ে বড় শৃঙ্গ গোরগাবুরু। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি রাম-সীতার স্মৃতির স্মারক এ পাহাড় বহু পর্যটককে টানে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় পাহাড়ি শহর পুরুলিয়া। এখানেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বিখ্যাত অযোধ্যা পাহাড়। পশ্চিমবঙ্গের প্রধান পাহাড়ি শহর অবশ্য দার্জিলিং। তবু এই দ্বিতীয় পাহাড়ি শহর পুরুলিয়া পর্যটকদের টানে।
পু্রুলিয়ায় গেলে দেখবেন প্রায় সব গাছেই যেন আগুন লেগেছে। বসন্তে পলাশ ফুটে পুরুলিয়ার বিভিন্ন গ্রামকে এক আগুনখেলায় মাতিয়ে রেখেছে। যেদিকে চোখ যায়, লালে লাল সব পলাশগাছ।
পুরুলিয়ার ঐতিহাসিক অযোধ্যা পাহাড় ঘিরে রয়েছে খয়রাবেড়া বাঁধ, মার্বেল লেক, তুর্গা লেক, মুখোশ তৈরির ছৌ গ্রাম, পাখি পাহাড়, ময়ূর পাহাড়, পার্দি লেক, বামনি ফলস ও জয়চণ্ডী পাহাড়ের মতো ঐতিহাসিক সব জায়গা।
পুরুলিয়ার তিন দিকজুড়ে ঝাড়খন্ড রাজ্য। আর পূর্ব দিকে পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান, বাঁকুড়া ও ঝাড়গ্রাম জেলা। পুরুলিয়া আগে থেকেই লাক্ষা, গালা ও তসরশিল্পে এগিয়ে ছিল। আজও পুরুলিয়ার গালা ও চুড়িশিল্প বিখ্যাত। পুরুলিয়ার আরেকটি নিজস্ব সম্পদ রয়েছে—বিখ্যাত নোনতা খাবার ভাবড়াভাজা। জিলাপির মতো ভাজা হলেও এটি খেতে নোনতা স্বাদের। যাঁরা পুরুলিয়া আসেন, অযোধ্যা পাহাড়ে যান, তাঁরা ভাবড়াভাজার স্বাদ নিতে ভোলেন না।
কথিত আছে, অযোধ্যা পাহাড়ে ১৪ বছরের বনবাসের জীবন কাটাতে এসেছিলেন অযোধ্যার রাজা দশরথের ছেলে রাম, লক্ষ্মণ এবং পুত্রবধূ সীতাদেবী। এ পাহাড়েই তাঁরা কিছুদিন ছিলেন। এখানকার রামভক্তরা তৈরি করেছেন রামমন্দির। সে মন্দির অযোধ্যা পাহাড়ে ঘুরতে আসা পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
পুরুলিয়া শহর থেকে রাম-সীতার স্মৃতিবাহী সীতাকুণ্ড ৪৭ কিলোমিটার দূরে। এ এলাকার আদিবাসী ‘তুন্দ্র’ সম্প্রদায়ের মানুষ এখনো বনে শিকারে গেলে সীতাকুণ্ডের পানি পান করে যাত্রা করেন। পূজাও দেন রামমন্দিরে।
অযোধ্যা পাহাড়ের দুর্গাবেড়া ৪০ ফুট গভীরতার কৃত্রিম জলাশয়। রয়েছে মুরগুমা বাঁধ। পুরুলিয়া শহর থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরের কংসাবতী নদীর পানি আটকিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এ বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। আরও কিছুটা দূরে খয়রাবেড়া বাঁধ। পুরুলিয়া শহর থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে বাঘমুন্ডির অযোধ্যা পাহাড় এলাকায় সেচকাজের জন্য তৈরি করা হয়েছে এ বাঁধ।
পাহাড়ের গা ঘেঁষে রয়েছে লহড়িয়া শিবমন্দির। পাহাড় কেটে তৈরি করা মার্বেল লেক দেখলে যে কারও চোখ জুড়ায়। আছে তুর্গা লেক, বামনি ফলস। পাহাড় বেয়ে নেমেছে জলধারা। ছোটখাটো জলপ্রপাতও বলা যায়। রয়েছে জয়চণ্ডী পাহাড়।
পার্দি লেকে পানি পান করতে আসে পশুপাখিরা। আছে পাখি পাহাড়ও। পাখি পাহাড়ে একসময় প্রচুর পাখি আসত। পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়ানোর জন্য এখন এ পাহাড়কে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। পাহাড়ের গায়ে নানা চিত্রকর্ম তৈরি করা হয়েছে।
পাশেই মাতা পাহাড়। ৬০০টি সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয় মাতা পাহাড়ে। দেখার আছে ময়ূর পাহাড়ও। এ পাহাড়ে একসময় প্রচুর ময়ূরের আনাগোনা ছিল। অযোধ্যা পাহাড়ের লোয়ার ড্যামের চেয়েও বেশি নজর কাড়ে আপার ড্যাম। এ ড্যাম তৈরি করা হয়েছে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য।
কাছেই রয়েছে ছৌ–শিল্পীদের নিজস্ব আবাসভূমি ছৌ গ্রাম। এখানে দেড় শর মতো ছৌ–শিল্পী পরিবার বাস করে; তৈরি করে মুখোশ। তারপর সেগুলো বিক্রি করে দেশ-বিদেশে।
বিবার্তা/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]