অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করছেন বাংলাদেশের ইতিহাসের বৃহত্তম বাজেট। নতুন অর্থবছরের জন্য প্রণীত এ বাজেটের আকার ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা। এটি দেশের ৪৬তম এবং তাঁর পেশ করা ১১তম বাজেট।
প্রস্তাবিত বাজেটের ব্যয় ২০১৫-১৬ অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে ১৭ শতাংশ এবং সংশোধিত বাজেটের ২৬ চেয়ে শতাংশ বেশি।
বৃহস্পতিবার বিকালে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। তার আগে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর ওই প্রস্তাবে সই করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
এবার মূল বাজেটের যে আকার ধরা হয়েছে, তা বাংলাদেশের জিডিপির ১৮ শতাংশ। গতবছর প্রস্তাবিত বাজেট ছিল জিডিপির ১৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
এবারের চার লাখ কোটি টাকার বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৫৯ হাজার ১৩ কোটি টাকা; যার এক লাখ ৫৩ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা যাবে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি)। আর অনুন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩৪ হাজার ১৩ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত অনুন্নয়ন বাজেটের চেয়ে ২১ শতাংশ বেশি। এই অনুন্নয়ন ব্যয়ের মধ্যে ৫৩ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধেই চলে যাবে, যা মোট অনুন্নয়ন ব্যয়ের ২২ শতাংশ।
অর্থমন্ত্রী এবারের বিশাল বাজেটের প্রায় ৭২ শতাংশ অর্থ রাজস্ব খাত থেকে আদায়ের লক্ষ্য স্থির করেছেন। বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ ৮৭ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে কর হিসেবে দুই লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা আদায় করা যাবে বলে আশা করছেন তিনি।
এবারও সবচেয়ে বেশি কর আদায়ের লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) থেকে, ৯১ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা। এই অংক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ৩৩ শতাংশ।
বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটে ভ্যাট থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭২ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা। কিন্তু লক্ষ্য পূরণ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৬৮ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।
আয়কর ও মুনাফার ওপর আরোপিত কর থেকে ৮৫ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা রাজস্ব পাওয়ার আশা করা হয়েছে এবারের বাজেটে। বিদায়ী বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ৭১ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা।
এছাড়া নতুন বাজেটে আমদানি শুল্ক থেকে ৩০ হাজার ২৩ কোটি টাকা, সম্পূরক শুল্ক থেকে ৩৮ হাজার ৪০১ কোটি টাকা, রফতানি শুল্ক থেকে ৪৪ কোটি টাকা, আবগারি শুল্ক থেকে ১ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকা এবং অন্যান্য কর ও শুল্ক থেকে ১ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছিল ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। কিন্তু আদায় সন্তোষজনক না হওয়ায় তা সংশোধন করে ২ লাখ ১৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।
২০১৬-১৭ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। সংশোধন করে তা ৩ লাখ ১৭ হাজার ১৭৪ কোটি টাকায় নামানো হয়।
অর্থমন্ত্রী আজ বৃহস্পতিবার যে বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেছেন, তাতে আয় ও ব্যয়ের হিসাবে সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে এক লাখ ১২ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা। এই ঘাটতি পূরণে অর্থমন্ত্রীর সহায় অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণ। ঘাটতির এই পরিমাণ মোট জিডিপির ৫ শতাংশের মতো, যা অর্থনীতির বিবেচনায় সহনীয় বলে ধরা হয়।
বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]