শিরোনাম
বে টার্মিনাল : এবার ভূমির মূল্য নিয়ে লড়াই
প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০১৭, ১৯:১৪
বে টার্মিনাল : এবার ভূমির মূল্য নিয়ে লড়াই
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রিন্ট অ-অ+

চট্টগ্রাম বন্দরের প্রস্তাবিত বে টার্মিনাল নির্মাণ প্রাথমিক ধাপ পেরুলেও এখন আটকে আছে জমির দাম নিয়ে। বন্দর কর্তৃপক্ষ অপেক্ষাকৃত কম দাম অথবা প্রতীকী দামে জমিটি পেতে চাইছে। কিন্তু জেলা প্রশাসন চাইছে সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা।


জানা গেছে, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্ভের পর ৬৭৪ একর খাসজমি বন্দোবস্তের জন্য সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয় থেকে যে নির্দেশনা আসবে সেই মূল্য পরিশোধেরর জন্য চিঠি দেয়া হবে বে টার্মিনাল বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে।


বিপরীতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ চাইছে প্রতীকী মূল্যে বরাদ্দ পেতে। এ লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়সহ সব জায়গায় প্রতীকী মূল্যে বা সাশ্রয়ী মূল্যে ভূমি বরাদ্দ পেতে তদবির চালাবে বন্দর কর্তৃপক্ষ।


উল্লেখ্য, এর আগে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে ছাড়পত্র পেতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের দেড় বছর লেগেছে।


ভূমির মূল্য নির্ধারণ প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবদুল জলিল বলেন, অকৃষি খাসজমি ভূমি বন্দোবস্ত আইন অনুযায়ী মৌজা মূল্যের তিনগুণ টাকায় বরাদ্দ দিতে হয়। সেই অনুযায়ী বন্দরের দাবিকৃত ৬৭৪ একর ভূমির মূল্য নির্ধারণ হয়েছে সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা। এই টাকায় ভূমি বন্দোবস্ত দেয়ার জন্য আমরা গত সোমবার ভূমি মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি।


তিনি বলেন, এই টাকায় বন্দোবস্ত দেবে, না এর চেয়ে কম টাকায় দেবে কিংবা প্রতীকী মূল্যে দেবে তা মন্ত্রণালয় নির্ধারণ করে আমাদের জানাবে। আমরা সেই অনুযায়ী বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে অর্থ চাইবো।


এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের মুখপাত্র ও সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) জাফর আলম বলেন, সরকারের ভূমি বন্দোবস্ত আইন অনুযায়ী অর্থনীতির গতি বাড়াতে কিংবা দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রতীকী মূল্যে ভূমি বরাদ্দের সুযোগ রয়েছে। যেহেতু বে টার্মিনাল আমাদের দেশের অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প তাই আমরা তা প্রতীকী মূল্যে বরাদ্দের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাবো।


তিনি আরো বলেন, যেহেতু এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প তাই এ নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত হবে। এক্ষেত্রে আমাদের টার্গেট থাকবে প্রতীকী মূল্যে এক টাকায় না হলেও অন্ততপক্ষে নির্ধারিত মৌজামূল্যে ভূমির বরাদ্দ পেতে।


চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অপর এক সূত্রে জানা যায়, ভূমির মূল্য বাবদ চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব বাজেটে ৯০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা রয়েছে। যেহেতু এই টাকা সরকারের খাত থেকে আসেনি তাই জুনের মধ্যে খরচ না করলে তা ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনাও নেই। বর্তমান অবস্থা অুনযায়ী ভূমি বরাদ্দ প্রক্রিয়া শেষ হতে আরো দুই থেকে তিন মাস লাগতে পারে। আর তা নির্ভর করছে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ের ওপর।


বে টার্মিনালের নির্মাণের সম্ভাব্যতা জরিপের জন্য জার্মানির হামবুর্গ পোর্ট কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠানের সাথে গত বছরের ১৭ আগস্ট চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকায় ৯ মাসের মধ্যে সম্ভাব্যতা জরিপের কাজ শেষ করার কথা প্রতিষ্ঠানটির। আর তা হলে কোথায় কিভাবে টার্মিনালের নির্মাণ কাজ করা যাবে সে বিষয়ে পাওয়া যাবে দিক নির্দেশনা।
একইসাথে টেকনিক্যাল, ইকোনিমিক্যাল, এনভায়রনমেন্টাল, অপারেশনাল, ফিনান্সিয়াল ও ট্রাফিক ইমপ্যাক্ট এসেসমেন্ট রিপোর্টও পাওয়া যাবে। সেই হিসেবে আগামী মে মাসের মধ্যে তা শেষ হওয়ার কথা। একদিকে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের রিপোর্ট পাওয়া এবং অপরদিকে ভূমি বরাদ্দ পাওয়ার পর দ্রুত ইয়ার্ড নির্মাণের কার্যক্রম শুরুর কথা রয়েছে।


উল্লেখ্য, ইপিজেড থেকে দক্ষিণ কাট্টলী রাসমনিঘাট পর্যন্ত সাগরের ভেতরের প্রায় ২৩০০ একর জায়গায় বে টার্মিনাল নির্মাণের প্রকল্প নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। এরমধ্যে জেগে উঠা অকৃষি ভূমি ৬৭৪ একর এবং বাকি ভূমি সাগরের পানির অংশ। জোয়ার-ভাটা, দিন-রাত, বাঁকা চ্যানেল কিংবা ড্রাফটের বিবেচনা কর্ণফুলী নদীর জেটিতে ভিড়লেও বে-টার্মিনালের ক্ষেত্রে সেই সীমাবদ্ধতা নেই।



বর্তমানে কর্ণফুলী নদীর জেটিতে পৌঁছাতে একটি জাহাজকে ১৫ কিলোমিটার ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। কিন্তু বে টার্মিনাল নির্মাণ করা হলে তা শূন্য কিলোমিটারের মধ্যেই বার্থিং করতে পারবে। বে টার্মিনাল নির্মাণ হলে যেকোনো দৈর্ঘ্য ও যেকোনো ড্রাফটের জাহাজ এখানে ভিড়তে পারবে।


বিপরীতে বর্তমান চ্যানেলে মাত্র ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্য ও সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফটের জাহাজ কর্ণফুলীতে প্রবেশ করতে পারে। সেইক্ষেত্রেও জাহাজকে দুটি বাঁক অতিক্রম করতে হয় এবং দিনের মাত্র চার ঘণ্টা সময় পাওয়া যায়। আর রাতে বন্দর চ্যানেলে কোনো জাহাজ চালানো যায় না। কিন্তু বে টার্মিনালে ২৪ ঘণ্টা জাহাজ পরিচালনা করা যাবে। বিদ্যমান পোর্ট জেটিতে একসাথে ১৬টি জাহাজ বার্থিং করা গেলেও বে-টার্মিনালে গড়ে প্রায় ৫০টি জাহাজ একইসাথে বার্থিং করা যাবে।


এছাড়া বন্দরের জেটির দৈর্ঘ্য চার কিলোমিটার হলেও বে টার্মিনালের দৈর্ঘ্য হবে ৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার। এই বে টার্মিনাল চট্টগ্রামের গভীর সমুদ্রবন্দরের অভাব গোচাবে বলে বন্দর সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।


বিবার্তা/জিয়া/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com