‘পঁচা গোলাপ নর্দমায় ছুড়ে ফেলতে হয়’
প্রকাশ : ১৮ জানুয়ারি ২০২৩, ২০:০৮
‘পঁচা গোলাপ নর্দমায় ছুড়ে ফেলতে হয়’
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

ব্যারিস্টার সাইদুল হক সুমনক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মো. আবদুস সোবহান মিয়ার (গোলাপ) দুর্নীতি নিয়ে সরব হয়েছেন তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে।


তিনি বলেন, গোলাপ যতক্ষণ ভালো থাকে ততক্ষণ সুন্দর থাকে। যখন পঁচে যায় তখন ড্রইং রুম থেকে বের করে নর্দমায় ছুড়ে ফেলতে হয়।


মো. আবদুস সোবহান মিয়া ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী হিসেবে মাদারীপুর-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে তিনি প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের পদ পান। তিনি দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদকও ছিলেন।


'আমি বিভিন্ন কিছু ঘেঁটে এবং আমারও একটি ব্যক্তিগত রিপোর্ট বের করে দেখলাম যে, ৪২ কোটি টাকার বাড়ি কিনেছেন উনি নিউইয়র্কে। এই বাড়িগুলো কিনেছেন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে থাকা অবস্থায়,' তিনি বলেন।


'কি পরিমাণ উন্নয়ন তিনি করেছেন যে, ৪২ কোটি টাকার বাড়ি কিনে ফেলেছেন। এটা এখন মোটামুটি দিবালোকের মতো পরিষ্কার। আমার বক্তব্য হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর সাথে বেইমানি করেছিল খন্দকার মোশতাক আর আজকে বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সাথে প্রতারণা করে গেলো আব্দুস সোবহান গোলাপ।'


তিনি আরো বলেন, 'এইরকম করাপটেড লোক বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের মতো ঐতিহ্যবাহী দলের প্রচার সম্পাদক থাকতেই পারে না। তারে তো দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রচারের। তারে কিন্তু দায়িত্ব দেয়া হয় নাই যে, কিভাবে লুটপাট করে আমেরিকায় বাড়ি করতে হয়।'


ব্যারিস্টার সুমন আওয়ামী লীগের অভাবী কর্মীদের দূর্দশার কথা উল্লেখ করে বলেন, 'আমি আওয়ামী লীগের তৃণমূলের সেই সব কর্মীদের কাছে বিচার দেই, যারা ঠিকঠাক মতো সংসার চালাতে পারেন না কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে লালন করেন। যারা কোনদিন নেতা হন নাই, তবুও বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করেন- তাদের কাছে বিচার দিচ্ছি।


তিনি আরো বলেন, ' তিনি এ পর্যন্ত ৪২ কোটি টাকার বাড়ি কিনেছেন আমেরিকায়। আল্লাহই জানে বাংলাদেশে আরো কত বাড়ি ফ্ল্যাট কিনেছেন।'


'এটা সত্য যে এই সকল রিপোর্ট এখন প্রকাশিত হচ্ছে সরকারকে বিব্রত করার জন্য। এটা সত্য এটার একটা ষড়যন্ত্র আছে। কিন্তু কথাগুলো তো মিথ্যা না,'।


ব্যারিস্টার সুমন বলেন, 'তিনি মনে করেন শরীরের মাংস যখন পঁচে যায় তখন কেটে ফেলতে হয়। একজন গোলাপকে বাদ দিয়ে দিলে এরকম ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের লোকের অভাব হবে না। আমি মনে করি এখনই ওই ধরনের বাজে লোককে বাদ দিয়ে আমাদের যেই ভিশন নিয়ে কাজ করতে হবে- বাংলাদেশকে নেত্রী যেখানে নিয়ে যেতে চান সেই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।


এসব গোলাপদেরকে বিদায় দিতে হবে:


দুদককে উদ্দেশ্য করে বলেন, 'এর চেয়ে পরিস্কার উদাহরণ তো আপনাদের সামনে নেই। মানি লন্ডারিং, লুটপাট সবকিছু এখন প্রমাণিত। আশা করি আপনারা আপনাদের নিজেদের ইমেজ রক্ষায় দুই-একজন চুনোপুটিকে না ধরে গোপালদেরকে ধরেন, তাহলে জনগণের কাছে আপনাদের আস্থা বাড়বে।


আবদুস সোবহান মিয়া (গোলাপ) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ৪০ লাখ ডলার ব্যয়ে একাধিক বাড়ি কিনেছেন যা নির্বাচনী হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেননি।


এই তথ্য অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক ‘অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট’ বা ওসিসিআরপি তাদের ওয়েবসাইটে করা একটি প্রতিবেদন। প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনি ২০১৪ সালে প্রথম নিউইয়র্কে অ্যাপার্টমেন্ট কেনা শুরু করেন। ওই বছর নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস এলাকায় একটি সুউচ্চ ভবনে অ্যাপার্টমেন্ট কেনেন তিনি। পরের পাঁচ বছরে তিনি নিউইয়র্কে একে একে মোট ৯টি প্রপার্টি বা সম্পত্তির (ফ্ল্যাট বা বাড়ি) মালিক হন। এসব সম্পত্তির মূল্য ৪০ লাখ ডলারের বেশি (ডলারের বর্তমান বিনিময় মূল্য অনুযায়ী প্রায় ৪২ কোটি টাকা)।


২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে পাঁচটি কনডোমিনিয়াম কিনেছিলেন আবদুস সোবহান। সে সময় ওই সম্পত্তির মূল্য ছিল প্রায় ২৪ লাখ ডলার। এ ছাড়া আশপাশের ভবনগুলোতে ৬ লাখ ৮০ হাজার ডলার মূল্যের তিনটি অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছিলেন তিনি।


নিউইয়র্কে কেনা এসব সম্পত্তির নথিপত্র বলছে, সম্পত্তিগুলো নগদ অর্থে কেনা হয়েছিল। এগুলোর মালিকানায় রয়েছেন তাঁর স্ত্রী গুলশান আরাও।


প্রতিবেদন বলছে, সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পরও ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে আবদুস সোবহান নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসেপ্রায় ১২ লাখ ডলারের বিনিময়ে আরও একটি সম্পত্তি (বাড়ি) কিনেছিলেন।সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ারসাত মাস পর ২০১৯ সালের ১৫ আগস্ট তিনি মার্কিন নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছিলেন।


নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো: আলমগীর মনে করেন, গোলাপের বিরুদ্ধে যদি দুর্নীতির কিছু থাকে তাহলে সেটা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দেখবে। দুদক তার বিরুদ্ধে মামলা করবে। যদি হলফনামায় ভুল তথ্য দিয়ে মাদারীপুর-৩ আসন থেকে আবদুস সোবহান মিয়া (গোলাপ) নির্বাচিত হয়ে থাকেন সেজন্য নির্বাচন কমিশন কোনো শাস্তির ব্যবস্থা নিতে পারবে না। গত ১৫ জানুয়ারি রাজধানীর আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।


ইসি মো: আলমগীর আরো বলেন, এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির যদি কিছু থাকে তাহলে দুদক দেখবে। তারা মামলা করবে।


দুদকের কমিশনার মোজাম্মেল হক খানকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি বিবার্তা প্রতিবেদকের কাছে।


বিবার্তা/সানজিদা/রোমেল/জেএইচ


সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com