শিরোনাম
ভাষাসৈনিক ‘মাদার বখশের’ মৃত্যুবার্ষিকী আজ
প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০১৭, ২০:৫৪
ভাষাসৈনিক ‘মাদার বখশের’ মৃত্যুবার্ষিকী আজ
রাজশাহী ব্যুরো
প্রিন্ট অ-অ+

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, অবিভক্ত বাংলার রাজশাহী অঞ্চলের প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য, ভাষাসৈনিক মাদার বখসের ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।


১৯০৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন রাজশাহীর নাটোর মহাকুমার সিংড়া এলাকার স্থাপনদীঘি নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। উত্তরাঞ্চল তথা বাংলাদেশের শিক্ষাবিস্তারের অগ্রদূত মাদার বখশ রাজশাহী পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৬৭ সালের ২০ জানুয়ারি মারা যান তিনি। তার মৃত্যুবার্ষিকী যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য রাজশাহী ও নাটোরে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ‘মাদার বখশ হল’ কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রতিষ্ঠাতার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণ সভাসহ বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। পরিবারের পক্ষ থেকে কবর জিয়ারত ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।


নাটোরের নিজ গ্রাম স্থাপনদিঘী সাতগ্রাম মাদ্রাসা মসজিদে বাদ জুমা কোরআনখানি ও মিলাদ-মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া নাটোরের মাদার বখ্শ স্কুলে ও রাজশাহীর সিপাইপাড়া জামে মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় সিপাইপাড়ায় মাদার বখশ আইডিয়াল বিদ্যালয়ে মিলাদ-মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।


ক্ষণজন্মা কিংবদন্তী মাদার বখশ ১৯৫৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৫৪ সালে সোবহানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, ১৯৬০ সালে লক্ষ্মীপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ও ১৯৬৬ সালে রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। তার নেতৃত্বে ১৯৪৯ সালে রাজশাহীতে প্রথম বেসরকারি মেডিকেল স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়, যা ১৯৫৫ সালে সরকারিকরণ এবং ১৯৫৮ সালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নামে নামকরণ করা হয়। এছাড়া রাজশাহী মহিলা কলেজ, রাজশাহী গার্লস মাদ্রাসা, রাজশাহী মুসলিম হাইস্কুলসহ আরও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে অবদান রাখেন মাদার বখশ।


তিনি নাটোরের সিংড়া উপজেলার চৌগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯২২ সালে প্রথম শ্রেণিতে ম্যাট্রিক, রাজশাহী কলেজ থেকে ১৯২৪ সালে ইন্টারমিডিয়েট ও ১৯২৬ সালে বিএ পাশ করেন। পরে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯২৮ সালে ইতিহাসে এমএ এবং প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯২৯ সালে আইন শাস্ত্রে বিএল ডিগ্রী লাভ করেন। নওগাঁ ও মুর্শিদাবাদে দুবছর শিক্ষকতার পর তিনি ১৯৩৪ সালে রাজশাহীতে ফিরে এসে আইন পেশা ও সমাজসেবায় মনোনিবেশ করেন।


রাজশাহীতে আসার পর দরিদ্র ও অসহায়দের পক্ষে বিনা সম্মানীতে মামলা লড়ার কারণে সুখ্যাতি লাভ করেন মাদার বখ্শ। চল্লিশের দশকের শুরুতে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে রাজশাহীর (আত্রাই, বাগমারা ও মান্দা) প্রতিনিধি হিসাবে ১৯৪৬ সালে অবিভক্ত বাংলার বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান আইন পরিষদের সদস্য এবং ১৯৫০ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত রাজশাহী পৌরসভার (বর্তমানে সিটি করপোরেশন) প্রথম নির্বাচিত পৌর চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি।


মুসলিম লীগের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও তিনি রাজশাহীতে মহান ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের মিছিলে গুলিবর্ষণের ঘটনায় ২২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী ভুবনমোহন পার্কে সমাবেশের অন্যতম আয়োজক তিনি। ওই সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসাবে বক্তৃতা করেন তিনি।


তিনি শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাই করেননি, প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষিত ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে সম্পৃক্তদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় যুক্ত করেন। তিনি নিজেও আইন বিভাগের জেষ্ঠ্য শিক্ষক হিসাবে অবৈতনিক শিক্ষক ছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও প্রধান বিচারপতি প্রয়াত হাবিবুর রহমানসহ অনেক কৃতি ছাত্রের অনুপ্রেরণার মানুষ ছিলেন মাদার বখ্শ। বঙ্গবন্ধুর সরকার মরহুম মাদার বখ্শের প্রতি সম্মানার্থে ১৯৭৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত একটি আবাসিক ছাত্র হল ‘মাদার বখ্শ হল’ নামে নামকরণ করেন।


তার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে জন্মস্থান নাটোরের সিংড়া উপজেলার স্থাপনদিঘী গ্রামের প্রবেশ পথে ভাষাসৈনিক মাদার বখশ গেট তৈরি করেছেন তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। সিংড়া পেট্রোল পাম্পসংলগ্ন ব্রিজটির নামকরণও মাদার বখ্শের নামে রাখা হয়েছে। বৃহত্তর রাজশাহীবাসীর কাছে মাদার বখশ একজন কিংবদন্তী, অনুপ্রেরণার মানুষ।


বিবার্তা/রিমন/নাজিম

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com