শিল্পকলা একাডেমির যাত্রাশিল্পী সম্মাননা পেলেন মিলন কান্তি দে
প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর ২০২৩, ১১:৪১
শিল্পকলা একাডেমির যাত্রাশিল্পী সম্মাননা পেলেন মিলন কান্তি দে
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির যাত্রাশিল্পী সম্মাননা পেলেন মিলন কান্তি দে।


৭ নভেম্বর, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে যাত্রাশিল্পে অসামান্য অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরুপ যাত্রাশিল্পী মিলন দে, - কে সম্মাননা প্রদান করা হয়।


বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক জনাব লিয়াকত আলী লাকী তাঁর হাতে সম্মাননা স্মারক, সার্টিফিকেট, ক্রেস্ট ও ৫০ হাজার টাকা অর্থমূল্যের চেক তুলে দেন।


সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে একাডেমির সম্মানিত সচিব জনাব সালাহউদ্দিন আহাম্মদ বলেন- “একজন যাত্রাশিল্পী হিসেবে মিলন কান্দি দে যাত্রা শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সংগ্রাম করে গেছেন, যাত্রা নট হিসেবে অভিনয়ের মাধ্যমে এই ধারাকে সচল রেখেছেন, যাত্রাকে প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদা দিতে নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন”।


সম্মাননা প্রাপ্ত যাত্রাশিল্পী মিলন কান্তি দে নিজের অনুভুতি ব্যক্ত করেন- বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। তিনি বলেন- “আমি শিল্পী খ্যাতি অর্জনের জন্য যাত্রাশিল্পে আসি নি, এই শিল্পের দুর্দশা দূর করতে কাজ করেছি। নীতিমালা প্রণয়ন থেকে শুরু করে যাত্রার দুর্দশা দূর করতে অনন্ত প্রাণ হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সম্মানিত মহাপরিচালক”। শিল্প সংস্কৃতি যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তা যেন অব্যাহত থাকে সেই প্রত্যাশার কথা জানান তিনি।


যাত্রাপালাকে নগর জীবনে ফিরিয়ে আনতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন একাডেমির মহাপরিচালক জনাব লিয়াকত আলী লাকী- সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের বক্তব্যে তিনি বলেন- “যাত্রা শিল্পের সাথে জড়িয়ে থাকা এক অনবদ্য শিল্পীর নাম মিলন কান্তি দে”। তিনি বলেন- “যাত্রা শিল্পীকে সম্মান জানাতে আমাদের আইন, নীতিমালা নানাভাবে সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে যা প্রণয়ণ করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা”।


“আমরা ২ শতাধিক যাত্রাদলকে নিবন্ধন করেছি। শিল্পীরা যেভাবে শিল্পকে দেখতে চায়, সেখান থেকেই আমাদের এই গনজাগরণের উৎসব। ঢাকায় এই যাত্রাপালা শেষ হচ্ছে কিন্তু জেলা পর্যায়ে চলবে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত”। তিনি আরো বলেন- ‘দেশে দেশে সংঘাত চলছে, আমাদের দেশের কবি সাহিত্যিক শিল্পীরা এই সংঘাত চায় না, আমরা ভালোবাসার বার্তা ছড়িয়ে দিতে চাই শিল্পের মাধ্যমে”।


১৯৭১ সালের মার্চে বঙ্গবন্ধুকে বন্দী করে রাখা হয় লালপুর থানায়। তাঁর কারাবন্দী জীবনের নানান প্রেক্ষাপট ও রাজনৈতিক ইতিহাস নির্ভর, যাত্রাপালা ‘নি:সঙ্গ লড়াই’ ।


১ ঘন্টা ৪৫ মিনিটের এই যাত্রাপালার নির্দেশনায় ছিলেন সাইদুর রহমান লিপন, পালাকার মাসুম রেজা এবং প্রযোজনা উপদেষ্টা জনাব লিয়াকত আলী লাকী। ৭ নভেম্বর, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে প্রদর্শিত হয়েছে যাত্রাপালা ‘নি:সঙ্গ লড়াই’। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির রেপাটরি যাত্রাদল পরিবেশন করে এই পালা।


এই দিন, দেখা যায় মঞ্চের চারপাশে উন্মুখ দর্শক। নীরব- নীশ্চুপ হয়ে মনোযোগী শ্রোতার মতো উপভোগ করছেন ইতিহাস নির্ভর চিত্রায়ন। মাঝে মাঝেই বেজে ওঠছে সেই গ্রামবাংলার চিরচেনা ক্লারিওনেট, করনেটের সুর। মঞ্চে প্রবেশ করছেন ইয়াহিয়া খান, জাতির পিতার বিরুদ্ধে চলছে ষড়যন্ত্র। কাহিনীর ধারাবাহিকতায় জাতির পিতার দরাজ কন্ঠে ভেসে ওঠছে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠির বিরুদ্ধে বাঙ্গালির হুংকার। কখনও বসছে কোট মার্শাল। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু নিশ্চিত করতে পশ্চিম পাকিস্তানীদের নানান ষড়যন্ত্র, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট মূর্ত হয়ে ওঠেছে ‘নি:সঙ্গ লড়াই’য়ে।


গ্রামবাংলার সেই চিরচেনা যাত্রাপালা, যাত্রাশিল্পী ও দলগুলোকে উজ্জীবিত করতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের ব্যবস্থাপনায় সারাদেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ১৯ দিনব্যাপী গণজাগরণের যাত্রাপালা উৎসব। ৪২ টি জেলা ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ঢাকায় ০২-২০ নভেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত চলছে যাত্রাপালা উৎসব। ‘শিল্প সংস্কৃতি ঋদ্ধ সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ’ গড়ার অভিলক্ষ্যে ‘অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় শিল্প নিয়ে পৌঁছে যাবো আমরা উন্নতির শিখরে’ এই প্রতিপাদ্যে ‘গণজাগরণের শিল্প আন্দোলন’ কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য দেশব্যাপী শিল্পযজ্ঞ পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। এর অংশ হিসেবে গত ০২রা নভেম্বর থেকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে শুরু হয়েছে যাত্রা উৎসব। সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা যাত্রা দলগুলোর সাথে সর্বসাধারণকে সম্পৃক্ত ও দলগুলোকে অনুপ্রাণিত করতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে দেশব্যাপী ১২০ টি যাত্রাদলের পরিবেশনায় ৪২টি জেলায় চলছে ‘গণজাগরণের যাত্রাপালা উৎসব ২০২৩’।


র্বতমানে যাত্রাশিল্পের উন্নয়নে নানামুখী কার্যক্রম পরিচালনা করছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। উৎসবের মাধ্যমে দলগুলোকে পৃষ্টপোষকতা দেয়ার পাশাপাশি ভিন্ন ধারার যাত্রা নির্মাণ ও পরিবেশনা অব্যাহত রেখেছে। দুটি রেপার্টরি যাত্রা নির্মাণ ছাড়াও ইশা খাঁ নামে বাংলাদেশে প্রথম ভিন্ন ধারার প্রত্ন যাত্রা নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। ২ শতাধিক যাত্রাদলকে নিবন্ধিত করে একাডেমি। ০৬-২০ নভেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত দেশের ৪২ টি জেলায় বিভিন্ন দলের পরিবেশনায় জেলা শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় চলবে এই যাত্রাপালা উৎসব। যাত্রাপালা সকলের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে।


এছাড়াও যাত্রাশিল্পের উন্নয়নে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃক বিভিন্ন সময় নানামুখী কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে –
১. যাত্রাশিল্প উন্নয়ন কমিটি গঠন ও নিয়মিত সভা আয়োজন।
২. ৬৪টি জেলাভিত্তিক দেশীয় যাত্রাপালা নির্মাণ ও প্রদর্শনীর আয়োজন।
৩. যাত্রাশিল্পীদের পেশাগত মান উন্নয়নের জন্য অভিনয়, নৃত্য, মেকাপ, পোষাক এবং প্রপস এর ব্যবহার শীর্ষক কর্মশালা আয়োজন।
৪. জাতীয় যাত্রাপালা উৎসব আয়োজন।
৫. প্রত্ন যাত্রা ‘ঈশা খান’ নির্মাণ ও প্রদর্শনী
৬. ‘যাত্রাশিল্পে নারী’ শীর্ষক সেমিনার আয়োজন।
৭. ভারতীয় বিশিষ্ট যাত্রা গবেষক ড. প্রভাত কুমার দাসকে ঢাকায় আমন্ত্রণ জানিয়ে সেমিনার ও মত বিনিময় সভা আয়োজন।
৮. নিবন্ধনের শর্তাবলি যাত্রাদলগুলি যথাযথভাবে পালন করছে কি-না তার প্রতিবেদনের জন্য স্থানীয় প্রশাসন এবং জেলা শিল্পকলা একাডেমির মাধ্যমে তদারকি করা।
৯. মুনীর চৌধুরীর ‘রক্তাক্ত প্রান্তর’ যাত্রাপালা নির্মাণ ও প্রদর্শনী।
১০. ১০০টি দেশীয় যাত্রাপালা ও শতাধিক ভারতীয় যাত্রাপালা সংগ্রহ।
১১. ‘স্মৃতিসত্তা ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক যাত্রাশিল্পী অমলেন্দু বিশ্বাসকে স্মরণ ও সেমিনার আয়োজন।
১২. ১০০টি দেশীয় যাত্রাপালা ১৯জন বিশিষ্ট গবেষক/লেখক দ্বারা মূল্যায়ন।
১৩. যাত্রা পালাকারদের নিয়ে কর্মশালা আয়োজন।
১৫. যাত্রাদলের উপর জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা।
১৭. কুষ্টিয়া এবং ঝিনাইদহ জেলায় যাত্রা উৎসবে জন্য = ১,০০,০০০/-(এক লক্ষ) টাকা করে অনুদান প্রদান।
১৮. ১৪টি যাত্রা উৎসবের মাধ্যমে ১৭৮টি যাত্রাদলকে নিবন্ধন প্রদান।
১৯. কর্মশালাভিত্তিক ৫টি যাত্রা প্রযোজনা নির্মাণ ও প্রদর্শনী।
২০. সারা বাংলাদেশ থেকে নিবন্ধিত যাত্রাদলগুলির স্বত্ত্বাধিকারী, ম্যানেজার, অভিনয়শিল্পীসহ সংশ্লিষ্ট কলা-কুশলীদের সাথে নিয়মিতভাবে মতবিনিময় সভা আয়োজন।
২১. দেশ অপেরা, লোকনাট্য গোষ্ঠী, জয়যাত্রা, থিয়েটার এন্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং নাটক ও নাট্যতত্ত¡ বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশীয় যাত্রাপালা নির্মাণ ও উৎসব আয়োজন।
২২. ৫টি দেশীয় নতুন যাত্রা প্রযোজনা নিয়ে ৩দিনব্যাপী যাত্রা উৎসব আয়োজন-২০১৯।
২৩. বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ‘যাত্রাপালার বিবেক’ নিয়ে গবেষণাধর্মী কর্মশালা ও অনুষ্ঠান আয়োজন।
২৪. জনাব গৌরাঙ্গ আদিত্য, জনাব ভিক্টর দানিয়েল ও জনাব সুলতান সেলিম-কে ২০১৯ এ সম্মাননা প্রদান।
২৫. যাত্রাশিল্পের নবযাত্রা শীর্ষক প্রকাশনা প্রকাশ।
২৬. করোনাকালীন যাত্রাশিল্পীদের অনুদান প্রদান।
২৭. করোনাকালীন যাত্রাদলগুলো নিয়ে অনলাইনে যাত্রা অনুষ্ঠানের আয়োজন।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com