গত কুড়ি বছরের অধিক সময় আমি সরাসরি বইমেলার সঙ্গে যুক্ত। দীর্ঘ সময় যুক্ত থেকেছি জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রের সাথে। তখন মেলা ছিলো বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। মেলায় ঢোকার মুখে টিএসসি থেকে বাংলা একাডেমির গেট পর্যন্ত দুই পাশের রাস্তায় ছিলো সিডি এবং ক্যাসেটের স্টল। সাউণ্ড বক্সে বিভিন্ন কবিদের কবিতার আবৃত্তি শুনতে পথচারী দাঁড়িয়ে যেতো। ফুটপাতে বেশকিছু বই থাকতো যা নাম মূল্য দামে কেনা যেতো, তারাও মেলার অংশ ছিলো। বিভিন্ন খেলনা, চুড়ি আর খাবার বলতে টকঝাল আঁচার, আইসক্রিম।
হারিয়ে গেছে সেইসব দিন।
মেলার জায়গা বেড়েছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলা এসেছে স্টল বরাদ্দ বেড়েছে। হারিয়ে গেছে মানুষের বই কেনা। বইমেলার সেইসব সৌন্দর্য নেই। আছে এখন পুলিশের সতর্ক পাহাড়া, সেল্ফি, আর মুখরোচক খাবার।
আমি মানুষ দেখি তাদের সাথে কথা বলি, পাঠক কিংবা ক্রেতা কাউকে বইমেলায় খুঁজে পাই না। মেলার গেট থেকে যখন বের হয়ে আসি ভিড়ের মাঝে মানুষের হাতের দিকে তাকাই, না শতকরা পাঁচভাগ মানুষের হাতে আমি বই দেখি না। অথচ প্রতিদিন বইমেলায় অগুণতি মানুষের আনাগোনা।
বইকেনা বই পড়ার অভ্যাস হারিয়ে যেতে বসেছে, কেউ কেউ বলেন এখন বই হাতে নিয়ে পড়া লাগে না বিভিন্ন মাধ্যমে বই পড়া যায়। হ্যাঁ কথা ঠিক কিন্তু বই হাতে নিয়ে পড়া এবং পরবর্তী সময়ে সেই বইটি যত্ন করে সংগ্রহ করে রাখা দু এক মাস পরপর সেই বইগুলো সেল্ফ থেকে নামিয়ে মুছে আবার রেখে দেয়ার মধ্যে অন্যরকম এক প্রেম রয়েছে যা এখন হারিয়ে যেতে বসেছে।
আমি আশাবাদী মানুষ, বিশ্বাস করতে চাই আবার মানুষ বইএর কাছে ফিরবে, ফিরতেই হবে। লেখকদের কাক এবং কোকিলের সঙ্গে তুলনা করা মানুষের বোধ নড়েচড়ে উঠে বলবে কুড়ি কোটি মানুষের দেশে যদি পাঁচ হাজার লেখক থাকেন সেই সংখ্যা খুব বেশি নয়। পরবর্তী প্রজন্মকে বইয়ের সাথে সংযোগ স্থাপন করিয়ে দেয়ার দায়িত্ব আমাদের সবার। বইমেলায় কেবল ছবি তুলতে ঘুরতে নয়, দু চারটি বই কিনুন। আপনার ঘরের একটি জায়গায় একটি বুকসেল্ফ রাখলে ক্ষতি নেই বরং আপনার আগামী প্রজন্ম এই ভাবনা নিয়ে বেড়ে উঠবে যে জীবনে অন্যান্য অনুসঙ্গের মতো বই একটি প্রয়োজনীয় অংশ যা আমাদের পাঠ করতেই হবে।
লেখক : সাফিয়া খন্দকার রেখা, আবৃত্তিশিল্পী
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]