ঢাকা লিট ফেস্টে সোমালীয় ঔপন্যাসিক নুরুদ্দিন ফারাহ
প্রকাশ : ০৭ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:১৬
ঢাকা লিট ফেস্টে সোমালীয় ঔপন্যাসিক নুরুদ্দিন ফারাহ
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

ঢাকা লিট ফেস্টের দ্বিতীয় দিনের আয়োজনে ছিল ‌‘লস্ট কান্ট্রি, লাস্ট ওয়ার্ডস’ শীর্ষক আলোচনা পর্ব। এতে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সোমালীয় ঔপন্যাসিক নুরুদ্দিন ফারাহ। ‘লস্ট কান্ট্রি, লাস্ট ওয়ার্ডস’ শীর্ষক আলোচনা পর্বের একমাত্র বক্তা ছিলেন তিনি। পর্বটি সঞ্চালনা করেন ঢাকা লিস্ট ফেস্টের পরিচালক কাজী আনিস আহমেদ।


‘লস্ট কান্ট্রি, লাস্ট ওয়ার্ডস’ শীর্ষক আলোচনাপর্বে উঠে আসে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন লেখক নুরুদ্দিন ফারাহর বিভিন্ন ভাষার ভেতর থেকে ইংরেজিকে লেখার মাধ্যম হিসেবে বেছে নেওয়ার গল্প।


বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সমসাময়িক লেখকদের একজন হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন ফারাহ। তার লেখা ইতালির প্রেমিও কাভৌর, জার্মানির লেটরে উলিসিস, মর্যাদাপূর্ণ নয়েস্টেড আন্তর্জাতিক সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন। একই বছর তার উপন্যাস ‘গিফটস’ ফরাসি সংস্করণ সেন্ট মালো সাহিত্য উৎসব পুরস্কার অর্জন করেছে। অনেকেই এই লেখককে আফ্রিকা মহাদেশ থেকে সাহিত্যে নোবেল জয়ের জন্য সবচেয়ে যোগ্য হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন।


সোমালিয়াকে ধ্বংস করে দেওয়া দীর্ঘ স্বৈরতন্ত্র ও রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধের পাশাপাশি তার লেখার উপজীব্য হচ্ছে নারীর অধিকার এবং ইসলাম ও প্রাক-ইসলামিক রীতির সম্পর্ক। তার সাহিত্যসম্ভারের মূলে রয়েছে তিনটি ত্রয়ী উপন্যাস। এর মধ্যে প্রথম ত্রয়ী ‘ভ্যারিয়েশন্স অন দ্য থিম অব অ্যান আফ্রিকান ডিক্টেটরশিপ’-এ রয়েছে সুইট অ্যান্ড সউর মিল্ক (১৯৭৯), সার্ডিনস (১৯৮১), ক্লোজ সিজাম (১৯৮২)। দ্বিতীয় ত্রয়ী ‘ব্লাড ইন দ্য সান’-এ রয়েছে ‘ম্যাপস’ (১৯৮৬), ‘গিফটস’ (১৯৯০) এবং ‘সিক্রেটস’ (১৯৯৮)। তৃতীয় ত্রয়ী উপন্যাস ‘পাস্ট ইম্পারফেক্ট’-এ রয়েছে ‘লিংকস’ (২০০৭), ‘নটস’ (২০০৮) এবং ‘ক্রসবোনস’ (২০১১)।


সোমালি শরণার্থীদের সাক্ষাৎকার নিয়ে তিনি একটি নন-ফিকশন বইও লিখেছেন। বইটির নাম হলো, ‘ইয়েস্টার ডে, টুমরো: ভয়েসেস ফ্রম দ্য সোমালি ডায়াস্পরা’।


‘লস্ট কান্ট্রি, লাস্ট ওয়ার্ডস’ শীর্ষক আলোচনা পর্বে, সোমালিয়ার রাজনৈতিক সংকট এবং নিজের সাহিত্যচর্চা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ঔপন্যাসিক নুরুদ্দিন ফারাহ বলেন, সমাজের ভেতর থেকেই একনায়কতন্ত্রের জন্ম হয়। একনায়কতন্ত্র অন্য জায়গা থেকে আসে না। তাই দেখতে হবে, সমাজের কোন বিষয়গুলো মানুষের এই মনোভাব তৈরি করে।


বর্তমানে এই লেখক যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। দেশ ছাড়ার প্রসঙ্গে নুরুদ্দিন ফারাহ বলেন ‘সোমালীয় ভাষায় উপন্যাস লিখেছিলাম, যেটা সেখানকার এক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। কিন্তু সেন্সর বোর্ড বইয়ের কয়েকটি অংশ নিয়ে আপত্তি জানিয়ে সংশোধন করতে বলে। তখন কারাগারে পাঠানোর হুমকিও দেওয়া হয়েছে। আমি সংশোধন না করে বসে থাকি। ফলে বইয়ের প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়। তখন অন্য দেশে চলে যেতে বাধ্য হই।’


প্রথমে তিনি ইতালীয় ভাষায় লিখতে চেষ্টা করেছেন, কিন্তু মনের ভাব প্রকাশ এতই কঠিন হয়েছিল যে আশঙ্কা হতো, টাইপরাইটারে নিজের আঙুল ভেঙে যাবে। আরবি ভাষায়ও তাঁর দক্ষতা ছিল। কিন্তু তিনি ইতালিয়ান আর আরবি ভাষা বাদ দিয়ে ইংরেজিতে লেখা শুরু করেন। তবে সোমালিয়ার ভাষায় লেখা কিছু কাজও আছে নুরুদ্দিন ফারাহর।


উল্লেখ্য, ১৯৪৫ সালে সোমালিয়ায় জন্ম নেওয়া এই লেখকের প্রথম উপন্যাস প্রকাশিত হয় ১৯৭০ সালে। ‘ফ্রম আ ক্রুকড রিব’ নামের এ উপন্যাসের মূল চরিত্র এক নারী। এই নারী নিজের বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে যায়। প্রথম উপন্যাসে শক্তিশালী এক নারীর চরিত্র সৃষ্টির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে লেখক রসিকতা করে বলেন, ‘নিজের নুরুদ্দিন ফারাহ নামের জন্য জীবনে অনেকবার প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে। প্রকাশককে বইয়ের পাণ্ডুলিপি দিলে তিনিও জানতে চেয়েছেন। এরপর আমি নিজের একটা ছবি দিয়ে দিতাম সঙ্গে।’


নুরুদ্দিন ফারাহ জানান, ‘১৮-১৯ বছর বয়সে দুটি স্কলারশিপ পেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে না গিয়ে আমি ভারতে গিয়েছি। আত্মবিশ্বাস ছিল যুক্তরাষ্ট্রে কখনো যাবই। কিন্তু তখন আগ্রহ বেশি ছিল হিন্দু, বৌদ্ধ ধর্মের মূল কথা সম্পর্কে আরও বেশ জানার। ভেবেছিলাম, ভারতেই সেটা সম্ভব। কিন্তু সিদ্ধান্তটা যে ঠিক ছিল না, তা বুঝতে সময় লেগেছে।’ তবে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে আসতে পেরে তাঁর ভালো লেগেছে বলে সোমালীয় ঔপন্যাসিক আলোচনার শুরুতেই নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com