আবহাওয়াগত কারণে উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বাসমতি ব্যতীত অন্য সব চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বিশ্বের শীর্ষ চাল রপ্তানিকারী দেশ ভারত। বৃহস্পতিবার দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার থেকে দেওয়া এক নোটিশে নিশ্চিত করা হয়েছে এ তথ্য।
চাল বিশ্বের একমাত্র প্রধান খাদ্যশস্য, যেটি উৎপাদনের জন্য নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া ও মৌসুমী বৃষ্টিপাত অপরিহার্য। প্রতি বছর বিশ্বে যে পরিমাণ চালের উৎপাদন হয়, তার ৯০ ভাগই হয় এশিয়ার বৃষ্টিবহুল অঞ্চলগুলোতে।
চলতি বছরের বর্ষায় ভারতের রাজ্যগুলোতে বৃষ্টিপাতের ভারসাম্যে ব্যাপক অবনতি হয়েছে। জুনের শুরু থেকে এ পর্যন্ত দেশটির উতরাঞ্চলী ও কেন্দ্রীয় রাজ্যগুলোতে অতিমাত্রায় বর্ষণ ঘটলেও পূর্ব, উত্তরপূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে বৃষ্টিপাত হয়েছে প্রয়োজনের তুলনায় বেশ কম। ফলে বিগত অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি বছর ভারতে উৎপাদিত চালের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পাবে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন ভারতের কৃষি বিজ্ঞানীরা।
এই পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ বাজার স্থিতিশীল রাখতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। বৃহস্পতিবারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের সরবরাহ স্থিতিশীল রাখতে চাল রপ্তানিনীতিতে পরিবর্তন এনেছে সরকার। পরিবর্তিত নীতি অনুযায়ী, এখন থেকে বাসমতি চাল ব্যতীত অন্য কোনো সাদা চাল আর রপ্তানি করা যাবে না। পরবর্তী সিদ্ধান্ত আসার আগ পর্যন্তে এই আদেশ বলবৎ থাকবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম এই মুহূর্তে চাল উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষে থাকা ৬টি দেশ। কিন্তু এল নিনো ধাঁচের আবহাওয়া, অনিয়মিত মৌসুমি বৃষ্টিপাত, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, খরাসহ বিভিন্ন কারণে গত বছর চালের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক বাজারেও। বাজারে বর্তমানে চালের যে দাম, তা ইতোমধ্যে গত ১১ বছরের রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাজারে গত বছরের তুলনায় চলতি ২০২৩ সালে চালের দাম বেড়েছে ১১ দশমিক ৭ শতাংশ, যা গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যবৃদ্ধির রেকর্ড।
বিশ্বের ৩০০ কোটিরও বেশি মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত; আর বিশ্ববাজারে প্রতিদিন যত চাল কেনাবেচা হয়— তার ৪০ শতাংশই আসে ভারত থেকে।
কেন্দ্রীয় সরকারের চাল রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্তে অসন্তোষ জানিয়েছে ভারতের চাল রপ্তানিকারীদের সংস্থা রাইস একপোর্টার্স অ্যাসোসিশেন (আরইএ)। সংস্থার প্রেসিডেন্ট বি. ভি কৃষ্ণা রাও রয়টার্সকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘রুশ বাহিনী ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর গমের আন্তর্জাতিক বাজার যেভাবে এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল, কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তের কারণে চালের আন্তর্জাতিক বাজারে তার চেয়েও বড় বিপর্যয় দেখা দেবে।’
‘আকস্মিক এই নিষেধজ্ঞার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে স্বল্পোন্নত দেশগুলো। কারণ তারা তড়িঘড়ি করে নতুন কোনো বিক্রেতার সন্ধান পাবে না,’ রয়টার্সকে বলেন আরইএ প্রেসিডেন্ট।
বিবার্তা/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]