৪০০ বছর পূর্বে করা দাস ব্যবসার জন্য মাফ চাইলেন ডাচ রাজা
প্রকাশ : ০২ জুলাই ২০২৩, ১৭:২৩
৪০০ বছর পূর্বে করা দাস ব্যবসার জন্য মাফ চাইলেন ডাচ রাজা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

দাসত্বের ইতিহাস অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত বিভিন্ন সংস্কৃতি, জাতি এবং ধর্মজুড়ে বিস্তৃত। অবশ্য দাসদের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং বৈধ অবস্থান বিভিন্ন সমাজে এবং বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন ছিল। আদিম সমাজে দাসপ্রথার প্রচলন বিরল ছিল কারণ এই প্রথা সামাজিক শ্রেণীবিভাগের কারণে তৈরি হয়। দাসপ্রথার অস্তিত্ব মেসোপটেমিয়াতে প্রায় ৩৫০০ খৃস্টপূর্বে প্রথম দেখতে পাওয়া যায়। অন্ধকার যুগ থেকে মধ্যযুগ পর্যন্ত ইউরোপে অধিকাংশ এলাকাতেই দাসপ্রথার প্রচলন ছিল। বিশেষ করে আফ্রিকা থেকে মানুষ ধরে এনে দাসে পরিণত করা হত এবং তাদের উপর অকথ্য নির্যাতন চালানো হত।


এবার সেই দাস ব্যবসার মতো হীন কাজের সঙ্গে জড়িত থাকার ‘অতীত ইতিহাসের’ জন্য ক্ষমা চেয়েছেন নেদারল্যান্ডসের রাজা উইলেম-আলেক্সান্ডার। তিনি জানিয়েছেন, বিষয়টি ‘ব্যক্তিগত ও তীব্রভাবে’ তাকে মর্মাহত করেছে।


১৭ শতকের পর নেদারল্যান্ডস বিশ্বের অন্যতম বড় ঔপনিবেশিকে পরিণত হয়। এ সময় বিভিন্ন জায়গায় নিজেদের সাম্রাজ্য বিস্তার করে ডাচরা। আর দেশটির দাস ব্যবসায়ীরা ৬ লাখ মানুষকে দাস হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় পাচার করে।


আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার পর রাজা উইলেম-আলেক্সান্ডার দাস ব্যবসাকে ‘ভয়ানক’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, এমন জঘন্য কাজ বন্ধ করতে ওই সময় রাজ পরিবার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।


নেদারল্যান্ডসে দাস ব্যবসা রহিতকরণের ১৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে শনিবার (১ জুলাই) একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। ওই সময় অতীত কালো ইতিহাসের জন্য ক্ষমা চান রাজা আলেক্সান্ডার।


গত জুনে নতুন একটি গবেষণায় ওঠে আসে, ঔপনিবেশিক অঞ্চলগুলোর যেখানে বাধ্যতামূলক দাসত্ব চালু করা হয়েছিল সেখান থেকে ডাচ শাসকরা— ১৬৭৫ সাল থেকে ১৭৭০ সাল পর্যন্ত— বর্তমান সময়ের তুলনায় ৫৪৫ মিলিয়ন ইউরো অর্থ পেয়েছিলেন।


রাজধানী আমস্টাডামের হওয়া ওই অনুষ্ঠানে রাজা উইলেম-আলেক্সান্ডার উপস্থিত সবার সামনে ক্ষমা চেয়ে বলেন, ‘আজ আমি এখানে আপনাদের রাজা হিসেবে এবং সরকারের অংশ হিসেবে দাঁড়িয়েছি। আমি নিজে ক্ষমা চাইছি।’


তিনি আরও বলেছেন, ‘আজ আমি আপনাদের সামনে ক্ষমা চাইছি (তৎকালীন সময়ে) দাস ব্যবসা বন্ধ করার জন্য কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায়।’


ডাচ রাজা আরও বলেন, ‘অতীত অপরাধ স্বীকার করে নেওয়া এবং ক্ষমা চাওয়ার পর, আমরা নিরাময়, সমন্বয়সাধন এবং প্রত্যয়পর্ণের ওপর কাজ করতে পারি।’


এদিকে ১৭ শতকে নেদারল্যান্ডস অবৈধভাবে বর্তমান ইন্দোনেশিয়ার বৃহৎ অংশ, দক্ষিণ আফ্রিকা, কুরাকাও এবং ‍পূর্ব পাপুয়ায় তাদের ঔপনিবেশিবাদ প্রতিষ্ঠা করে এবং ট্রান্সআটলান্টিকের দাস ব্যবসায় বড় অবস্থান তৈরি করে।


এই সময় দাস ব্যবসায়ীরা আফ্রিকা থেকে অসংখ্য মানুষকে নেদারল্যান্ডসের দক্ষিণ আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ানের উপনিবেশে পাচার করে।


তবে ১৮৮৩ সালে এই ব্যবসা নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু এরমধ্যেই ধ্বংস হয়ে যায় হাজার হাজার মানুষের জীবন।


এই দাস ব্যবসা থেকে নেদারল্যান্ডস প্রচুর ধন সম্পত্তি আয় করে। এমনকি ১৭৩৮ সাল থেকে ১৭৮০ সাল পর্যন্ত পশ্চিমাঞ্চলের হল্যান্ড প্রদেশের যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছিল তার ৪০ শতাংশই এসেছিল দাস ব্যবসা থেকে।


তবে নিজেদের এই অতীত হীনকর্ম স্বীকার করতে অনেক সময় নেয় দেশটি। বর্তমানে ডাচ স্কুলগুলোতে দাস ব্যবসা ও এর ভয়াবহতা নিয়ে পড়ানো হয়। তবে স্কুলের পাঠ্যসূচিতে এটি যুক্ত করা হয় ২০০৬ সালে।


সূত্র: বিবিসি


বিবার্তা/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com