
সাধারণত বৃহদান্ত্রের ক্যানসার কোলন ক্যানসার নামে পরিচিত। ক্যানসারটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অ্যাডিনোমাটোস পলিপ নামক কোষ থেকে শুরু হয়। কিছুদিন পর এই পলিপ কোলন ক্যানসারে বদলে যায়। নারী ও পুরুষ, উভয়ের মধ্যেই দেখা যায় কোলন ক্যানসার। পঞ্চাশোর্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
হওয়ার কারণ
পরিবেশ ও জিনগত কারণে বৃহদন্ত্র ও মলাশয়ে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা পাঁচ ভাগ বৃদ্ধি পায়। খাদ্যাভ্যাস একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অতিরিক্ত গরু বা ছাগলের মাংস খাওয়া, খাদ্যতালিকায় আঁশজাতীয় খাবারের অনুপস্থিতি, ধূমপান ও মদ্যপান এই ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়।
স্থুলকায় ব্যক্তিদের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অন্যদিকে ব্যায়াম ( বিশেষ করে পুরুষদের ক্ষেত্রে) এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। বৃহদন্ত্র ও মলাশয় ক্যান্সার হওয়ার পারিবারিক ইতিহাস রোগটির সম্ভাবনা বাড়ায়। বিশেষ করে মা, বাবা, ভাই কিংবা বোনের বৃহদন্ত্র ও মলাশয় ক্যান্সার হওয়ার ইতিহাস থাকলে ঝুঁকি দ্বিগুণ বাড়ে।
এছাড়া অন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগীদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
কোলন ক্যানসারের লক্ষণ
পায়খানার সঙ্গে রক্তক্ষরণ, হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া, দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা, তীব্র পেটব্যথা, রক্তশূন্যতা, সব সময় বমি বমি ভাব।
তবে খাবার এবং কিছু নিয়মের মাধ্যমে মারাত্মক এই ব্যাধিটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। গবেষকরা বলেন, স্বাস্থ্যকর খাবার এবং নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যমে কোলন ক্যানসারের শতকরা ৪৫ ভাগ কমিয়ে আনা সম্ভব। আসুন জেনে নেওয়া যাক কোলন ক্যানসার প্রতিরোধে ঠিক কী কী করণীয়।
রোগ নির্ণয়
প্রধান উপাদান কোলন্সকোপি ও বায়োপসি। বায়োপসি’র মাধ্যমে ক্যান্সার নির্ণয়ের পর সিটি স্ক্যান, রক্তে এন্টিজেন (CEA) এর পরিমাণ ইত্যাদি বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যান্সারের ধাপ নির্ণয় (staging) করা হয়।
চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই ধাপ নির্ণয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিক ধাপের (Stage I & II) ক্যান্সারগুলোর চিকিৎসা পরবর্তী ফলাফল সন্তোষজনক, পক্ষান্তরে অগ্রসর ধাপের (Stage III & IV) ক্যান্সারগুলোর চিকিৎসা পরবর্তী ফলাফল আশাপ্রদ নয়।
ক্যান্সার কোলনের বাইরে ছড়িয়ে গেলে (লসিকাগ্রন্থি, যকৃত, ফুসফুস ইত্যাদি) তাকে অগ্রসর ধাপ বলে বিবেচনা করা হয়।
তবে আশার কথা এই যে, অন্যান্য ক্যান্সারের চেয়ে কোলন ক্যান্সারের চিকিৎসা পরবর্তী ফলাফল অনেক ভালো। এমনকি অগ্রসর ধাপের ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীও সঠিক চিকিৎসা পেলে বহুদিন সন্তোষজনক ভাবে বেঁচে থাকতে পারেন।
নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম
আপনি যদি কোলন ক্যানসার হওয়া থেকে নিজের শরীরকে রক্ষা করতে চান তাহলে অবশ্যই আজ থেকে নিয়মিত শরীরচর্চার অভ্যাস করুন। প্রতিদিন ৩০ মিনিটের ব্যায়াম আপনাকে বাঁচাতে পারে এই ভয়াল রোগ থেকে।
ধূমপান ত্যাগ
৪০ বছর বয়স পেরনোর পর প্রায় ১৭ শতাংশ মানুষ এই কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন ধূমপানের খারাপ অভ্যাসের কারণে। আপনি যদি একজন ধূমপায়ী হয়ে থাকেন, তাহলে শরীরের সুস্থতার জন্য আজ থেকেই এই ধূমপানের অভ্যাস পরিত্যাগ করার চেষ্টা শুরু করুন।
লাল মাংস খাবেন না
বেশি পরিমাণে লাল মাংস (রেড মিট) খেলে পেটের সমস্যা হয়, বৃহদান্ত্রের চর্বি বৃদ্ধি পায়। যা থেকে হতে পারে কোলন ক্যানসার। তাই কোলন ক্যানসার প্রতিরোধে এই লাল মাংস (রেড মিট) খাওয়া কমিয়ে দিন। প্রয়োজনে রেড মিটের পরিবর্তে অন্যান্য প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন।
পেটের মেদ কমিয়ে আনুন
পেটের অতিরিক্ত মেদ হওয়া কোলন ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। তাই যতটা সম্ভব ডায়েট এবং শরীরচর্চার অভ্যাস করে এই পেটের মেদ ঝরিয়ে ফেলার চেষ্টা করুন।
বেশি করে শাকসবজি আর ফলমূল খান
আপনার শরীরের হজমকে সঠিক মাত্রায় পরিচালিত করতে সবুজ শাক-সবজি আর ফলমূল খাওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। তাই যতটা সম্ভব সবুজ শাক-সবজি আর ফলমূল খান এবং শরীরকে কোলন ক্যানসার প্রতিরোধের উপযুক্ত করে তুলুন।
গ্রিন টি খাওয়ার অভ্যাস গড়ুন
গ্রিন টিতে অনেক ধরনের উপকারী উপাদান রয়েছে, যা কোলন ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে। তাই কোলন ক্যানসার প্রতিরোধে গ্রিন টি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন এবং নিজেকে সুস্থ স্বাভাবিক রাখুন।
ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি গ্রহণ করুন
কোলন ক্যানসার প্রতিরোধে শরীরে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি গ্রহণ করা অত্যন্ত আবশ্যক। তাই নিয়ম করে এই কালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খান এবং শরীরকে কোলন ক্যানসার প্রতিরোধের উপযুক্ত করে তুলুন।
সচেতনতা
একটি বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন যে, ক্যান্সার কঠিন রোগ হলেও এর উপযুক্ত চিকিৎসা রয়েছে। রোগীদের সচেতনতা এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই একুশ শতকেও মানুষ বাংলাদেশে হাকিম, কবিরাজ, ঝার-ফুঁকের উপর বিশ্বাস করছে, যেখানে অত্যাধুনিক চিকিৎসা রয়েছে।
চিকিৎসা ব্যয় সরকারী হাসপাতালগুলোতে অত্যন্ত কম। রোগীদের প্রতি অনুরোধ যে কোনো রোগ সম্পর্কে পরিচিত জনের পরামর্শ না নিয়ে নূন্যতম এমবিবিএস চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
আপনার সচেতনতা রোগটিকে প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয়ে সাহায্য করবে।
বিবার্তা/শারমিন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]