শিরোনাম
রক্ত দেখে অজ্ঞান হওয়ার কারণ কি?
প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০১৮, ১৫:৪৩
রক্ত দেখে অজ্ঞান হওয়ার কারণ কি?
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

আমাদের মস্তিষ্কে অনেক জিনিসের পাশাপাশি প্রয়োজন হয় অক্সিজেনের, যা রক্তের মাধ্যমে সেখানে পৌঁছায়। এই রক্ত সরবরাহ যখন বন্ধ বা ধীর হয়ে যায় তখন প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের অভাবে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়। সাধারণত অক্সিজেনের অভাব মস্তিষ্ক খুব দ্রুত পূরণ করে নিলেও কখনো কখনো তা পূরণ হতে কিছুটা সময় লেগে যায়। আর তখনই মানুষ সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলে।


রক্ত দেখে অজ্ঞান হওয়ার বিষয়টি আসলে কি?


ভয়ানক মারপিটের সিনেমায় রক্ত কিংবা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ দেখে কিছু মানুষের মনে ভয় জাগে। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রে এটি সমস্যার কারণ হতে পারে- এমনকি বাস্তব জীবনে রক্ত দেখাও। রক্ত বা রক্তপাতের ঘটনা দেখে তারা অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে, এমনকি রক্তক্ষয়ী কোনো ঘটনার বিবরণ শুনেও।


রক্ত দেখা ছাড়াও কিন্তু বিভিন্ন কারণে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়ায় সমস্যা হয়। মূলত মস্তিষ্ক প্রয়োজন অনুযায়ী রক্ত সরবরাহ পেলে শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্বাভাবিক কাজ চালিয়ে যেতে পারে। মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলের কোনো অসুবিধা দেখা দিলে অজ্ঞান হয়ে পড়ার সমস্যা হতে পারে।


হঠাৎ অজ্ঞান হওয়ার কিছু কারণ


স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হলে, মস্তিষ্কে টিউমার হলে, মেনিনজাইটিস বা মস্তিষ্কে সংক্রমণ হলে, শরীরের পানি ও লবণের ঘাটতি বেশি হলে, রক্তে সুগারের মাত্রা অনেক কমে গেলে, নেশাজাতীয় পণ্য ব্যবহারে, কিছু মানসিক রোগের ওষুধ ব্যবহারে, আবার কিছু ওষুধ হঠাৎ বন্ধ করে দিলে, অতিরিক্ত গরম, বেশি মানুষের ভিড়ে, অপুষ্টি, টানা উপবাসে থাকলে, হঠাৎ ভয় পেলে, খুব বেশি জ্বর হলে, এপিলেপ্সি বা মৃগী রোগে, বজ্রপাত হলে, ইলেকট্রিক শক লাগলে, হিটস্ট্রোক হলে।


অজ্ঞান হওয়ার আগে দেহে যা ঘটে


চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে যায়, শরীর হঠাৎ ঠাণ্ডাহয়ে যায়, অস্বাভাবিকভাবে ঘামতে থাকে, মাথা ঘোরে বা মাথাব্যথা, সামনের সব বস্তু ঝাপসা বা অন্ধকার দেখা, বমি বমি ভাব, পাল্স কমে যাওয়া, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা হওয়া।


যদি আপনি রক্ত দেখে অজ্ঞান হয়ে যান, তাহলে আপনার ভ্যাসোভাগাল সিনকোপের অভিজ্ঞতা হয়েছে, যেখানে আপনার হার্ট রেড ও ব্লাড প্রেশার হঠাৎ করে খুব দ্রুত অত্যধিক হ্রাস পায়। যখন হঠাৎ করে আপনার ব্লাড প্রেশার কমে যাবে, তখন মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ হ্রাস পাওয়ার কারণে আপনি চেতনা হারিয়ে ফেলতে পারেন।


ক্রনিক লো ব্লাড প্রেশারের লক্ষণ না দেখা পর্যন্ত ভ্যাসোভাগাল রেসপন্স জনিত অজ্ঞান হওয়া দুশ্চিন্তার কিছু নয়। এমনকি কিছু কারণে স্বাস্থ্যবান লোকেরাও অজ্ঞান হতে পারে, যা রক্ত দেখার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয়। যদি আপনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তাহলে এটি যে মারাত্মক কোনো দশার লক্ষণ নয় তা নিশ্চিত হতে চিকিৎসকের কাছে যেতে পারেন।


রক্ত দেখে চেতনা হারানোর আরেকটি কারণ হতে পারে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া বৈশিষ্ট্য। যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইওতে অবস্থিত ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের সেন্টার ফর সিনকোপ অ্যান্ড অটোইমিউন ডিসঅর্ডারের মেডিক্যাল ডিরেক্টর ফ্রেড জায়েগার বলেন, ‘গুহামান পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে চলে আসা একটি রেসপন্স হতে পারে অজ্ঞান হওয়া।


উদাহরণ স্বরূপ, মনে করুন যে আপনি একজন গুহামানব এবং অন্য এক গুহামানব এসে আপনার হাত কেটে ফেলল, এই রক্তক্ষয়ী দৃশ্য বা ইনজুরি আপনাকে অজ্ঞান করে দিল। আপনি মাটিতে লুটিয়ে থাকার কারণে গুহামানবটির কাছে আপনাকে মৃত মনে হল, যার ফলে সে আপনার মাথা বিচ্ছিন্ন করল না।’ ডা. জায়েগার উল্লেখ করেন যে, ভ্যাসোভাগাল সিনকোপ সেসব পূর্বপুরুষদের থেকে আসা বৈশিষ্ট্য হতে পারে যারা অন্যদিন যুদ্ধ করার জন্য বেঁচেছিল- এটি হচ্ছে সারভাইবাল অব দ্য ফিটেস্টের একটি যথাযথ দৃষ্টান্ত।


যদি আপনি অজ্ঞান হতে যাচ্ছেন এটা বুঝতে পারেন তাহলে পা প্রসারিত করে শুয়ে পড়ুন, এটি আপনার মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বজায় রাখতে সাহায্য করবে। অজ্ঞান হওয়ার পর দ্রুত রিকভার পেতে বা রক্তপ্রবাহ আবার বাড়াতে আপ্লায়েড টেনশন টেকনিক প্রয়োগ করতে পারেন।


নিজের মধ্যে জ্ঞান হারানোর লক্ষণ দেখা দিলে


উপরে উল্লেখিত লক্ষণগুলো বা এর যে কোন একটি নিজের মধ্যে অনুভব করলেই বুঝে নিন আর কিছু সময়ের মধ্যেই আপনি সংজ্ঞা হারাতে চলেছেন। তাৎক্ষণিক কিছু সতর্কতা আপনাকে পরবর্তী বড় বিপদ থেকে রক্ষা করবে।


১. সোজা শুয়ে পড়ুন। এমনভাবে শোয়ার চেষ্টা করবেন যেন মাথার চেয়ে পায়ের অবস্থান কিছুটা উঁচুতে হয়। পায়ের নিচে বালিশ বা অন্য কোন বস্তু রেখে সহজেই এই ব্যবস্থাটি করা যাবে।


২. যদি শোয়া সম্ভব না হয়ে তবে বসে পড়ুন, দুই হাঁটুর মাঝখানে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করুন।


৩. যদি বসার মত অবস্থায়ও না থাকেন তবে দেয়ালে কান শক্ত করে চেপে রেখে দু’হাত দুই পাশে ছড়িয়ে দিন।


আপনার সামনে অন্য কেউ জ্ঞান হারালে


যদি দেখেন আপনার সামনে থাকা কারো মধ্যে সংজ্ঞা হারানোর লক্ষণ দেখা যাচ্ছে তবে উপরে উল্লেখিত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করুন। আর যদি কেউ সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলে তাহলে:


১. তাকে লম্বা করে শুইয়ে দিন সমতল স্থানে, পা যেন মাথার চেয়ে উঁচুতে অবস্থান করে এমনভাবে।


২. সব জামা ঢিলে করে দিন। বিশেষ করে কলার এবং প্যান্ট।


৩. মাথা পেছনের দিকে সামান্য হেলিয়ে দিন যেন মুখ খোলা থাকে, এতে শ্বাস নিতে সুবিধা হবে।
৪. বাতাসের ব্যবস্থা করুন। ফ্যান না থাকলে পত্রিকা বা যে কোন বস্তু দিয়ে বাতাস করুন ৫. ভেজা কাপড় দিয়ে মুখ এবং ঘাড় মুছে দিতে থাকুন


জ্ঞান ফিরে আসার পর করণীয়


সাধারণত জ্ঞান হারানোর ১-২ মিনিটের মধ্যেই মানুষ আবার জ্ঞান ফিরে পায়। এর চেয়ে বেশি সময় ধরে কেউ অজ্ঞান থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।


১. রোগী বমি করতে থাকলে তাকে জোর করে বসানোর চেষ্টা করবেন না, পাশ ফিরিয়ে শুইয়ে দিন। এতে গলায় বমি আটকে যাবে না।


২. রোগীর উঠে বসার মত অবস্থা থাকলে ঠাণ্ডা পানিতে সামান্য পরিমাণে লবণ মিশিয়ে খাওয়ান বা জুস খাওয়ান।


৩. সুস্থ হয়ে উঠার পরের কমপক্ষে ১৫ মিনিট তাকে বসিয়ে রেখে নিশ্চিত করুন যে তার পুনরায় জ্ঞান হারানোর সম্ভাবনা নেই।


সতর্কতা


১. কোন অবস্থাতেই রোগীকে ঝাঁকাবেন না, চড় দিবেন না বা পানির ঝাঁপটা দিবেন না।


২. অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ব্যক্তির মাথার নিচে বালিশ দিবেন না।


৩. পরিপূর্ণভাবে জ্ঞান ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত কিছু পান করতে দিবেন না, এতে গলায় পানীয় আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।


৪. বিনা কারণে তাকে সরাতে চেষ্টা করবেন না।


৫. অজ্ঞান ব্যক্তিকে কখনোই বসা বা দাঁড় করানোর চেষ্টা করবেন না।


বিবার্তা/শারমিন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com