শিরোনাম
হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে হলে...
প্রকাশ : ০২ জুন ২০১৮, ২৩:২৬
হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে হলে...
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

গরম কালের হাজারও খারাপ দিকের মধ্যে একটি হল হিট স্ট্রোক। গরম যত বাড়তে থাকে, তত আশঙ্কা বাড়ে শরীর খারাপ হয়ে যাওয়ার। এমনকী এই কারণে প্রতি বছর কত মানুষের যে মৃত্যু হয়, তা গুনে শেষ করা যাবে না। মারাত্মক গরমের কারণে শরীরের ভেতরের পানি যখন শুকিয়ে যায়, তখন ধীরে ধীরে শরীর ছেড়ে দিতে শুরু করে।


চিকিৎসকরা বলেন, স্বাভাবিক অবস্থায় রক্ত দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। কোনো কারণে শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে ত্বকের রক্তনালি প্রসারিত হয় এবং অতিরিক্ত তাপ পরিবেশে ছড়িয়ে দেয়। প্রয়োজনে ঘামের মাধ্যমেও শরীরের তাপ কমে যায়। কিন্তু প্রচণ্ড গরম ও আর্দ্র পরিবেশে বেশি সময় অবস্থান বা পরিশ্রম করলে তাপ নিয়ন্ত্রণ আর সম্ভব হয় না। এতে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বিপৎসীমা ছাড়িয়ে যায় এবং হিট স্ট্রোক দেখা দেয়। হিট স্ট্রোকে জীবন বিপদাপন্ন হতে পারে। তাই জীবন বাঁচাতে এই গরমে প্রত্যেকেরই একটু সতকর্তা অবলম্বন করা উচিত।


হিট স্ট্রোকের লক্ষণ


প্রাথমিকভাবে হিট স্ট্রোকের আগে অপেক্ষাকৃত কম মারাত্মক হিট ক্র্যাম্প অথবা হিট এক্সহসশন হতে পারে। এর লক্ষণ গুলো হলো—


* শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে যায়।


* ঘাম বন্ধ হয়ে যায়।


* ত্বক শুষ্ক ও লালচে হয়ে যায়।


* নিশ্বাস দ্রুত হয়।


* নাড়ির স্পন্দন ক্ষীণ ও দ্রুত হয়।


* রক্তচাপ কমে যায়।


* খিঁচুনি, মাথা ঝিমঝিম করা, অস্বাভাবিক আচরণ, হ্যালুসিনেশন, অসংলগ্নতা ইত্যাদি।


* প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়।


* রোগী শকেও চলে যায়। এমনকি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।


হিট স্ট্রোক প্রতিরোধের উপায়


গরমের দিনে কিছু সতর্কতা মেনে চললে হিট স্ট্রোকের বিপদ থেকে বেঁচে থাকা যায়। এগুলো হলো—


* হালকা, ঢিলেঢালা পোশাক পরুন। কাপড় সাদা বা হালকা রঙের হতে হবে। সুতি কাপড় হলে ভালো।


* যথাসম্ভব ঘরের ভেতরে বা ছায়াযুক্ত স্থানে থাকুন।


* বাইরে যেতে হলে মাথার জন্য চওড়া কিনারাযুক্ত টুপি, ক্যাপ বা ছাতা ব্যবহার করুন।


* বাইরে যারা কাজকর্মে নিয়োজিত থাকেন, তারা মাথায় ছাতা বা মাথা ঢাকার জন্য কাপড়জাতীয় কিছু ব্যবহার করতে পারেন।


* প্রচুর পানি ও অন্যান্য তরল পান করুন। মনে রাখবেন, গরমে ঘামের সঙ্গে পানি ও লবণ দুই-ই বের হয়ে যায়। তাই পানির সঙ্গে সঙ্গে লবণযুক্ত পানীয় যেমন-খাবার স্যালাইন, ফলের রস, লাচ্ছি ইত্যাদিও পান করতে হবে। পানি অবশ্যই বিশুদ্ধ হতে হবে।


* তাপমাত্রা বৃদ্ধিকারী পানীয় যেমন-চা ও কফি যথাসম্ভব কম পান করা উচিত।


* রোদের মধ্যে শ্রমসাধ্য কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। এসব কাজ সম্ভব হলে রাতে বা খুব সকালে করুন। যদি দিনে করতেই হয়, তবে কিছুক্ষণ পরপর বিশ্রাম নিতে হবে ও প্রচুর পানি ও স্যালাইন পান করুন।


* একাধিকবার গোসল করুন। একইসঙ্গে শিশু ও বয়স্কদের বেলায় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করুন।


* প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক হোন। প্রস্রাবের রং খেয়াল করুন। গাঢ় রঙের হলে আরো বেশি করে পানি পান করুন।


কাঁচাআমের শরবত


গরমে কাঁচাআমের জুস খুবই উপকারী। এটা শরীর ঠাণ্ডা রাখে এবং হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।


মাঠা


আয়ুর্বেদ শাস্ত্রমতে প্রতিদিন এক গ্লাস মাঠা খাওয়া শরীরের জন্য উপকারী। এটা প্রোবায়োটিক্সয়ের ভালো উৎস এবং গরমে পানি স্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে। তাই গরমের অস্বস্তি থেকে বাঁচতে প্রতিদিনের খাবার তালিকায় মাঠা যুক্ত করুন।


তেঁতুলের শরবত


সুস্বাদু এই শরবত সবাই খুব পছন্দ করে। তাছাড়া গরমে এই শরবত খাওয়া সবচেয়ে বেশি উপযোগী। ভিটামিন এবং ইলেক্ট্রোলাইট সম্পন্ন তেঁতুল গরমে শরীর ঠাণ্ডা রাখার পাশাপাশি পেটের নানান ধরনের সমস্যা সমাধান করে।


পেঁয়াজের রস


হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার অন্যতম ভালো উপায় হল পেঁয়াজের রস। অনেকেই এর ঝাঁজালো স্বাদ পছন্দ করে না। তবে এর রস ঔষধি গুণাগুণ সম্পন্ন। পেঁয়াজের রস গরম থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে।


ধনিয়া ও পুদিনার শরবত


এই প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি শরবত গরমে শরীর ঠাণ্ডা রাখে। যা উন্নতমানের ‘ডিটক্সিফাইইয়িং’ বা শরীরের দূষিত পদার্থ বের করে দেয়ার জন্য উপযুক্ত পানীয়। খালি পেটে পান করলে তা শরীরের জন্য বেশি ভালো।


অ্যালোভেরার শরবত


রোদপোড়া থেকে বাঁচতে অ্যালোভেরার শরবত অনন্য। এটা হজমে সাহায্য করে, বুক জ্বালাপোড়া কমায় এবং পেটের নানারকম সমস্যা দূর করে। গরমে প্রতিদিন এক গ্লাস অ্যালোভেরার শরবত পান করলে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে আসে।


ডাবের পানি


এর গুণাগুণ সম্পর্কে প্রায় সবারই জানা। দুপুরের গরম থেকে মুক্তি পেতে ডাবের পানি পান করুন, সতেজ অনুভব করবেন। এটা তাৎক্ষণিকভাবে তৃষ্ণা মেটায় ও দীর্ঘক্ষণ আর্দ্রতা বজায় রাখে।


হিট স্ট্রোক হলে কি করবেন


প্রাথমিকভাবে হিট স্ট্রোকের আগে যখন হিট ক্র্যাম্প বা হিট এক্সহসশন দেখা দেয়, তখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে হিট স্ট্রোক প্রতিরোধ সম্ভব। এক্ষেত্রে ব্যক্তি নিজেই যা করতে পারেন তা হলো—


* দ্রুত শীতল কোনো স্থানে চলে যান। যদি সম্ভব হয়, ফ্যান বা এসি ছেড়ে দিন।


* ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছে ফেলুন। সম্ভব হলে গোসল করুন।


* প্রচুর পানি ও খাবার স্যালাইন পান করুন। চা বা কফি পান করবেন না।
কিন্তু যদি হিট স্ট্রোক হয়েই যায়, তবে রোগীকে অবশ্যই দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। ঘরে চিকিৎসা করার কোনো সুযোগ নেই।


ক্ষেত্রে রোগীর আশপাশে যারা থাকবেন তাদের করণীয়


* রোগীকে দ্রুত শীতল স্থানে নিয়ে যান।


* তার কাপড় খুলে দিন।


* শরীর পানিতে ভিজিয়ে দিয়ে বাতাস করুন। এভাবে তাপমাত্রা কমাতে থাকুন।


* সম্ভব হলে কাঁধে, বগলে ও কুচকিতে বরফ দিন।


* রোগীর জ্ঞান থাকলে তাকে খাবার স্যালাইন দিন।


* দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করুন।


* সব সময় খেয়াল রাখবেন হিট স্ট্রোকে অজ্ঞান রোগীর শ্বাসপ্রশ্বাস এবং নাড়ি চলছে কি না। প্রয়োজন হলে কৃত্রিমভাবে নিশ্বাস ও নাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করতে হতে পারে।


বিবার্তা/শারমিন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com