ইচ্ছামতো রোল, চাউমিন, পিৎজা ও বার্গার খেয়ে দম নিতে কষ্ট হচ্ছে। ফুসফুসের কার্যকারিতা পরীক্ষা করাতে গিয়েই ধরা পড়ল হাঁপানি শিকড় গেড়েছে শরীরে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ক্যালকাটা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের পালমোনোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. শুভ্র মিত্র সাবধান করে বলেছেন, পরিবারে হাঁপানির ইতিহাস থাকলে দূরে থাকুন ফাস্টফুড থেকে।
এদিকে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ফাস্ট ফুড একটি শিশুর হাঁপানি হওয়ার শঙ্কা বাড়ায় প্রায় ৪০ শতাংশ। ৩১টি দেশের শিশুদের উপর এক গবেষণা থেকে জানা গেছে এ তথ্য।
ফাস্ট ফুড খেলে শিশুদের হাঁপানি, একজিমা বা চর্মরোগ ও নাকের সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়। ব্রিটিশ ভিত্তিক মেডিকেল জার্নাল থোর্যাক্স’এ সম্প্রতি এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যে সব অল্প বয়সি শিশু-কিশোর সপ্তাহে তিন বা তার বেশি বার ফাস্ট ফুড খায়, তাদের হাঁপানি হওয়ার আশঙ্কা অন্যদের চেয়ে ৩৯ শতাংশ বেশি। ছয় থেকে সাত বছর বয়সিদের মধ্যে এই শঙ্কা ২৭ শতাংশ। গবেষকরা বলেছেন, অল্প বয়সিদের মধ্যে যারা ফলমূল ও শাকসবজি বেশি খায়, তাদের হাঁপানি বা অ্যালার্জির ঝুঁকি অনেক কম থাকে।
ছোটবেলায় হাঁপানি ও অ্যালার্জি বিষয়ক গবেষণা প্রকল্প আইসাক'এর জন্য ১৯৯৪ সাল থেকেই বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছেন। এখন পর্যন্ত ১০০টি দেশের ২০ লাখের মতো শিশুকে এই গবেষণা প্রকল্পের আওতায় পরীক্ষা করা হয়েছে৷
ফসফুসের অ্যাবডোমিনাল ফ্যাট বাড়িয়ে দিচ্ছে ফাস্টফুড। দেখা যাচ্ছে, মেদবহুল ব্যক্তিরা লম্বা নিশ্বাস নিতে পারছেন না। বুকে তলপেটে অতিরিক্ত মেদ জমছে ফাস্ট ফুড খেয়ে। শ্বাস-প্রশ্বাসকে নিয়ন্ত্রণ করে যে পেশি তাকে প্রয়োজনের তুলনায় দ্বিগুণ পরিশ্রম করতে হচ্ছে। ফলে স্বাভাবিক শ্বাস নিতে গেলেও কপালে ঘাম জমছে। অল্প হাঁটতে গিয়েই বুকে সাঁইসাঁই শব্দ।
ডা. শুভ্র মিত্র বলেছেন, ফাস্ট ফুড আর হাঁপানি একে অপরের দোসর হয়ে উঠেছে। হাঁপানির সামান্য সমস্যাকেও দ্বিগুণ করে তোলে ওবেসিটি অথবা স্থূলতা। আর এর জন্য দায়ী এই ফাস্ট ফুড জাতীয় খাবারই। শুধু তাই নয় নিয়মিত যারা ফাস্ট ফুড খান তাদের গলা দিয়ে টক ঢেকুর ওঠে। চিকিৎসা পরিভাষায় একে বলা হয়, ‘গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল রিফ্লাক্স’। হাঁপানির সমস্যাকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয় এই গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল রিফ্লাক্স।
হাঁপানির সাথে ফাস্টফুডের সম্পর্ক খুঁজে পাওয়ার পর চিকিৎসা পদ্ধতিও বদলে যাচ্ছে আমূল। শুধু স্টেরয়েড নয়, অ্যারোবিক এক্সারসাইজ, যোগব্যায়াম ও ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে বলা হচ্ছে হাঁপানি রোগীদের।
ডা. মিত্রর কথায়, সাধারণত ৫ ফুট ৫ ইঞ্চির উচ্চতার একজন ব্যক্তির ৬৭ কেজির বেশি ওজন হওয়া উচিত নয়। হাসপাতালে যারা আসছেন তাদের ওজন সেখানে ৮০/৯০। ফাস্ট ফুডে প্রচুর পরিমাণ ক্যালোরি থাকে। খাবারের মাধ্যমে প্রতিদিন অতিরিক্ত ১০০ ক্যালোরি গ্রহণ করলেই বছরে পাঁচ কেজি পর্যন্ত ওজন বাড়তে পারে।
তিনি আরো বলেন, হাঁপানি হলেও অনেক সময় বুঝতে পারেন না রোগীরা। অন্য সমস্যার সঙ্গে হাঁপানিকে গুলিয়ে ফেলেন। বুকে চাপ চাপ ব্যথা, রাতে অপর্যাপ্ত ঘুম, শুকনো কাশি হলেই সাবধান হওয়া উচিত। লাং ফাংশন টেস্ট করালেই হাঁপানি ধরা সম্ভব। সূত্র: সংবাদ প্রতিনিধি ও ডয়চে ভেলে
বিবার্তা/জাকিয়া
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]