শিরোনাম
আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে শিশুদের ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা
প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০১৮, ১১:৪২
আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে শিশুদের ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পেডিয়েট্রিক অনকোলজি বিভাগের ইনডোর ও আউটডোরে নতুন-পুরানো মিলিয়ে বছরে ৪ থেকে ৬ হাজার শিশু ক্যানসার আক্রান্ত শিশু চিকিৎসা নেয়। ক্যানসার আক্রান্ত শিশুদের সুচিকিৎসার জন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে পৃথক কোনো হাসপাতাল নেই। সরকারিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮ শয্যার পেডিয়েট্রিক অনকোলজি ইউনিটই ভরসা।


দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা হওয়ায় সেখানে একটি বেডের জন্য আক্রান্ত শিশুদের অভিভাবকদের মাসের পর মাস অপেক্ষার প্রহর গুনতে হয়। অনেক শিশু বেড পাওয়ার আগেই মারা যান। অনেকে আবার বেড পেলও চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে না পেরে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান। অন্যদিকে বেডের অভাব থাকায় শিশু রোগীদের প্রেসক্রিপশন লিখে দিয়ে বাড়ি ফেরত পাঠাতে বাধ্য হন চিকিৎসকরা।


সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানান যায়, প্রতিবছর দেশে আনুমানিক পাঁচ থেকে ছয় হাজার শিশু-ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। ক্যানসার আক্রান্ত শিশুদের শতকরা ৮০ ভাগ সুচিকিৎসা না পেয়ে মারা যায়। আর এসব কারণে দেশে শিশু ক্যানসারে মৃত্যু হারও আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে। তবে ক্যানসার আক্রান্ত শিশুদের সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই।


শিশু-ক্যানসার বিশেষজ্ঞরা জানান, লিউকেমিয়ার চারটি প্রধান প্রকারভেদ রয়েছে: অ্যাকিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া (ALL), অ্যাকিউট মায়েলয়েড লিউকেমিয়া (AML), ক্রনিক লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া (CLL) এবং ক্রনিক মায়েলয়েড লিউকেমিয়া (CML) এবং সলিড টিউমার। শিশুদের মধ্যে অ্যাকিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়ার (ALL) প্রকোপ বেশি। মোট শিশু ক্যানসারের এক তৃতীয়াংশ এতে আক্রান্ত। এ ধরনের ক্যানসার নিরাময়যোগ্য। চিকিৎসার মেয়াদ ৬ মাস থেকে তিন বছর পর্যন্ত লাগতে পারে।


অপরদিকে বিভিন্ন প্রকারের সলিড টিউমার যেমন- মস্তিষ্কের টিউমার, গ্রন্থির টিউমার, মাংসপেশীর টিউমার, কিডনির টিউমার ইত্যাদি। এ ধরনের চিকিৎসায়ও কয়েক মাস ও বছর লেগে যায়। লিউকেমিয়া ও সলিড টিউমারের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ।
চিকিৎসকরা আরো জানান, ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রায়ই থাকে না। সময়মতো ও যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারলে ক্যানসারে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে শতকরা ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ সম্পূর্ণভাবে নিরাময় সম্ভব।


চিকিৎসকরা জানান, একজন ক্যানসার আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসায় বিভিন্ন মেয়াদে ৫০ হাজার থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়। এ ধরনের রোগের চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে ও বিশেষ ব্যবস্থাধীনে অবিরাম পর্যবেক্ষণে প্রয়োজন। ঢাকা ছাড়া দেশের অন্যান্য জায়গায় এ সকল সুবিধা প্রায় অনুপস্থিত।


চিকিৎসকরা দুঃখের সঙ্গে জানান, বাংলাদেশের ৯৫ শতাংশের বেশি মানুষ মূলতঃ হতদরিদ্র হওয়ায় তাদের সন্তানদের ক্যানসার হলে চিকিৎসা করাতে পারেন না। ঢাকায় এসে দীর্ঘদিন অবস্থান করাও তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। ফলে বিনা চিকিৎসায় এ সব শিশু মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।


বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু ক্যানসার বিভাগের চেয়াম্যান প্রফেসর এম.এ. মান্নান বলেন, মাত্র ২৮টি শয্যায় এত বিপুল সংখ্যাক ক্যানসার আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা সেবা দেয়া সম্ভব হয় না। সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি হাসপাতালে শিশু ক্যানসার বিভাগ থাকা খুবই জরুরি বলেও মনে করেন তিনি।


তবে আশার কথা হলো দেরিতে হলেও সরকারিভাবে দেশের আটটি সরকারি মেডিকেল কলেজে পৃথক শিশু ক্যানসার ইউনিট খোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ডাক্তারদের পোস্ট সৃষ্টিও করা হয়ে গেছে। এখন শুধু চিৎিসকদের পোস্টিং দেওয়ার অপেক্ষা মাত্র। শিশু ক্যানসার রোগীদের দুর্ভোগ এবং মৃত্যুহার কমাতে অতিদ্রুত পোস্টিং দেয়া দরকার বলে মনে করেন প্রফেসর মান্নান।


বিবার্তা/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com