শিরোনাম
ভালো-মন্দের সাংবাদিকতা
প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০১৭, ১৬:৩০
ভালো-মন্দের সাংবাদিকতা
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

সাংবাদিক হিসেবে আরও একবার লজ্জা পেলাম ডাক্তারদের কাছে। ঘটনা সোমবার সকালের। স্বাস্থ্য বিষয়ক একটা সেমিনারে আমার অ্যাসাইনমেন্ট ছিলো। অনুষ্ঠানের সব আলোচক ডাক্তার। বেশ ভালোভাবেই আলোচনা শুনলাম। নোট নিলাম। অনুষ্ঠান শেষে বের হওয়ার সময় সবাই যখন বিরিয়ানির প্যাকেট নিচ্ছে আমি সেটা পরিহার করে দ্রুত ছুটলাম আয়োজকদের পেছনে।


ছোটার কারণ আজকের সেমিনারের অনেকগুলো টার্ম একেবারেই মেডিকেলের ভাষায় ইংরেজিতে আলোচনা হয়েছে। সাধারণ পাঠকদের এই টার্মগুলো কীভাবে বোঝাবো এবং আমার যেন ভুল না হয় সেজন্য অনুষ্ঠান শেষে আয়োজক এক অধ্যাপকের সঙ্গে কথা বলতে গেলাম। তিনি আমাকে যতোটা সম্ভব ভালোভাবে বোঝালেন। আমি এরপর আমার ভিজিটিং কার্ডটা দিয়ে বললাম, স্যার আমাকে যদি আপনাদের আজকের অনুষ্ঠানের বিষয়গুলো আমাকে ইমেইল করেন আমার বুঝতে সুবিধা হবে। তিনি সানন্দে রাজি হলেন। এবার তিনি নিজের মানিব্যাগে হাত দিলেন।


আমি ভেবেছিলাম ডাক্তার স্যার তাঁর ভিজিটিং কার্ড দেবেন আমাকে। কিন্তু তিনি একটা হাজার টাকার নোট বের করলেন। আমি কিছুটা বিরক্ত ও বিব্রত হয়ে বললাম, স্যার নিউজ করা আমার কাজ। এজন্য কোনো টাকা দিতে হয় না। এবার তিনি নোটের সংখ্যা বাড়ালেন। আমি বললাম, স্যার আপনার বোধহয় সাংবাদিক সম্পর্কে ভুল ধারণা আছে। নিউজ করতে কখনো কোনদিন টাকা লাগে না।


তিনি এবার কিছুটা বিব্রত হলেন। এবার আরেকটা ছেলেকে ডেকে বললেন, এই সাংবাদিককে দুটো খাবারের প্যাকেট দাও। আমি তখন বললাম, স্যার আমি সাধারণত বাইরে খাই না। আর আপনাদের আলোচনাতেই না বললেন, কম খেলে সুস্থ থাকা যায়!


আমি ওই মেডিকেল কলেজ থেকে বেরিয়ে আসতে আসতে ভাবছিলাম, আমাদের সাংবাদিকরা নিশ্চয়ই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে টাকা নেয় বলেই আয়োজকদের ধারণা হয়েছে যে, নিউজ করতে টাকা লাগবে।


এ জীবনে বহুবার এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে। সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি, নিউজ করতে টাকা লাগে না। শুধু ডাক্তার নয়, সমাজের সব শ্রেণী-পেশার মানুষের উদ্দেশে আরও একবার বলছি, মনে রাখবেন, নিউজ করতে কখনো টাকা লাগে না। কোনো সাংবাদিক টাকা চাইলে বুঝবেন, তিনি অসৎ সাংবাদিক। এই লোকদের এড়িয়ে চলবেন। আর যদি কেউ জোর করে টাকা দিতে চান তাহলে বুঝতে হবে তার অসৎ উদ্দেশ্য আছে।


আপনারা যারা ইচ্ছেয় বা অনিচ্ছেয় সাংবাদিকতা করেন তাদের কাছে অনুরোধ, চলুন সাংবাদিকতার নামে মানুষের কাছ থেকে টাকা নেয়া বা সুবিধা নেয়া আমরা বন্ধ করি। এই যে দেশের অনেকেই মনে করেন, নিউজ করতে টাকা লাগে - এটা যতোটা না তাদের দোষ তার চেয়ে বেশি দোষ আমাদের সাংবাদিকদের। তাই চলুন, মানুষের এই ভুলটা ভাঙাই। যে যেই পেশায় আছেন মনে রাখবেন সততা এমন একটা পরীক্ষা, যে পরীক্ষায় প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে পাস করতে হয়। একবার ফেল মানে আজীবন ফেল।


মনে আছে, বায়রার সংবাদ সম্মেলন শেষে আগে সব সাংবাদিককে খাম দেয়া হতো। আমি সেটা বন্ধ করিয়েছি। হাজার নয়, অর্ধকোটিরও বেশি টাকার অফার গালি দিয়ে বিদায় করেছি। না, আমি বড়লোক নই। বরং এই শহরে মাস চলতে কষ্ট হয়। কিন্তু তাতে কী? কোনো যুক্তিতেই তো অসৎ হওয়া যায় না। আর আমি জানি, একবার ফেল মানে আজীবন ফেল।


আমাদের সমাজটা খুব ছোট। আমরা কে কেমন, সবাই জানে। কাজেই চলুন, নিজেদের সৎ রাখি। আর আমরা যদি আমাদের পেশার সম্মান বাঁচাতে না পারি, নিজেদের সংকটগুলো দূর করতে না পারি তাহলে আর কে পারবে? কাজেই চলুন, সততার সাথে দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা করি। তাতে মানুষের এই পেশার প্রতি শ্রদ্ধাটা বাড়বে।


জয় হোক সৎ সাংবাদিকতার।


শরীফুল হাসানের ফেসবুক থেকে


বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com