শিরোনাম
তবু পেরিয়ে যেতে হবে এই পথ, নিরন্তর!
প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০১৭, ১৫:৪২
তবু পেরিয়ে যেতে হবে এই পথ, নিরন্তর!
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

কী পেলাম আর কী পেলাম না - দিনমজুরির এই লাভ-লোকসানের হিসাবনিকাশ কষতে কষতে জীবনের গতিময় অংশের পরিসমাপ্তি আমার। পরমানন্দময় বাল্যকালের আদর্শলিপি আর ধারাপাত শিক্ষার পর থেকে আগাগোড়া মজুর হওয়ার লক্ষ্যে গোনাগাঁথা বিদ্যারম্ভের মধ্য দিয়ে সেই যে ছোটা শুরু, আর বিরাম নেই কোনো।


সেই লক্ষ্য-রথে চড়ে কৈশোর ও তারুণ্যের সোনালি সময়কে অন্তরীণ করতে এক এক করে আনন্দহীন বিদ্যাশিক্ষার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এক সময় সেই পয়মন্ত চাকরির নাগাল পাওয়া। অতঃপর সেই চাকরিকে হাটের নিক্তিতে তুলে ওই মাপের কনের সঙ্গে কন্যাপণযোগে প্রণয়শূন্য বিবাহবন্ধন; রিরংসু লালসে জীবনের গতিময়তায় নির্দিষ্ট মেয়াদান্তে আমার জৈব-জনক বনে যাওয়া। আহা, কি আনন্দ!


তারপর? তার পর থেকে আমার আমি আরও ছোট, সংকুচিত। সেই ছোট-আমিতে ভর করেছে কেবল স্বার্থচিন্তা, শামিল হয়েছি অনেকের মতো পাওয়া-না-পাওয়ার এক ইদুঁরদৌড়ে - চাই প্লট, চাই ফ্ল্যাট, চাই গাড়ি ইত্যাদি কত কী! সুখ চাই, সম্পদ চাই। রসভোগের তৃষ্ণায় তৃষিত কেবল আমি। কারও চেয়ে বড়ো কি ছোট পদে অধিষ্ঠিত হলাম, চলছে তার ব্যর্থ বিচার; হা-হুতাশসহযোগে। লোকালয়ের যশ-খ্যাতির এক ভজঘট হরির লুটে অপরাপর লুটেরার সাথে চলছে আমার নিরর্থক কাড়াকাড়ি।


এই কি সব?


এখানেই শেষ নয় সে-লক্ষ্যের! নানা দিকের নানা আকর্ষণে চারদিকে মন ধাবিত আমার। সাময়িক শ্রেষ্ঠত্বগৌরবের প্রলোভনে বিক্ষিপ্ত মন ছুটছে অন্য পথে। ছোটো ছোটো! ঈর্ষাদ্বেষে মন জর্জরিত হয়ে ওঠে কেবলই। দুঃখশোক এমন একান্ত হয়ে উঠছে যে তাকে অতিক্রম করে কোথাও সান্ত্বনার দেখা পাই না। প্রাণপণে কেবলই করছি সঞ্চয় কমবেশ, ত্যাগ করবার কোনো গূঢ় অর্থ খুঁজে পাই না। ত্যাগ যা করছি, সেও নিঃস্বার্থ নয়, হয় লোকদেখানো নয়তো কিছু পাবার আশায়! ক্ষতিতে বিমর্ষ হচ্ছি ক্ষণে ক্ষণে। পুষিয়ে নেয়া আর উপরে ওঠার সিঁড়ি খুঁজছি প্রাণপণে। খোয়াচ্ছি দিন বিষয়বাসনায়, পলে-পলে। অতঃপর?


অতঃপর, যৎপরোনাস্তি মৃত্যুভয় ঘিরে ধরেছে আমায়! এই বুঝি স্ট্রোক হয়ে মস্তিষ্ক অক্ষম হলো! এই বুঝি হৃদরোগ দিলো আমায় মৃত্যুর তেতো স্বাদ! এই বুঝি প্যাথলজিক্যাল ডায়াগনোসিসে নির্ণিত হলো দুশ্চিকিৎস্য ক্ষতরোগ, আমার প্রিয় ব্যাধিমন্দিরে; বুঝি নিপাট শুয়ে আছি ব্যয়বহুল অথচ নিস্ফল অস্ত্রোপচারের বিরক্তিকর অপেক্ষায়! এরকম শঙ্কায় প্রতিনিয়ত হিসাব মেলাই স্ত্রী-কন্যা-পুত্র-আত্মীয়স্বজনের অনুকূলে আমার ত্যাজ্য বিত্তের আদ্যোপান্ত। বিষয়বাসনা আর নানা শঙ্কায় এভাবেই আমার বর্তমান হনন করে চলেছে ভবিষ্যতকে, পদে-পদে।


সেই যে শুরু বাল্যকাল থেকে, চলছে অবিরত, চলবে অবিশ্রাম - ভবলীলা সাঙ্গ অবধি। ইতোমধ্যে চিত্তকে আনন্দে উদ্বোধিত করার সকল চেষ্টাকেই করেছি বিসর্জন। জীবৎকালের তাণ্ডবনৃত্যের অস্থির ছন্দে কুঞ্চিত হয়ে আনন্দের স্থায়ী বসতি এখন নির্জন তপোবনে। লোকালয়ে চলছে কেবল গায়েগতর মজুরির প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে চড়া গলায় অর্থহীন বিতর্ক-বাহাস। এতকিছুর পরও আনন্দের ছিটেফোঁটার সন্ধানে বর্জ্যবৎ সামর্থ্যের ভগ্নাবশেষ বিলাচ্ছি বিরামহীন আড্ডায়। সেও যে নির্মল তা কিন্তু নয়; কার সাথে চলছি, কি বকছি, কোথায় বসছি, কী-ই বা গিলছি - এ নিয়ে ব্যস্তসমস্ত সমালোচকের তীর্যক দৃষ্টিপাত, পশ্চাত থেকে অলক্ষ্যে চলছে সবিরাম শরবর্ষণ।


দিনাবসানে ভগ্নচিত্তে নগরের ইট-কাঠের মধ্যেই আমার নিত্য বসবাস। এড়িয়ে যাবার জো নেই কোনো। তবু পেরিয়ে যেতে হবে এই পথ, নিরন্তর!


কেশব রায়ের ফেসবুক থেকে


বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com