সেগুন বাগিচা কাঁচাবাজার থেকে ডানে মোড় নিয়ে বাদিকে রাজস্ব ভবনের দিকে যেতে রাস্তার বাম পাশে বেশ বড় একটা বস্তি চোখে পড়বে। প্লাস্টিক বা ব্যানারের পরিত্যাক্ত অংশ দিয়ে টানা খুপড়িগুলো তৈরি করা। একেকটা খুপড়ির আয়তন ৩০ বা ৪০ বর্গফুটের বেশি নয়।
রাস্তা দিয়ে যাবার সময় ৯ মার্চ দুপুরে চোখ আটকে গিয়েছিলো একটি দৃশ্যে। একটি কিশোরী মেয়ে বস্তির খুপড়ীর বাইরে রাস্তার পীচে বসে বই-খাতা রেখে লিখছিলো। ১৩ সালে কলকাতার ধর্মতলায় দুটি শিশুকে এরকমভাবে পড়তে দেখেছি। ধানমন্ডি লেকেও বাতিপোস্টের নিচে দুটি শিশুকে পড়তে দেখেছি। কিন্তু কোনো কিশোরীকে এই প্রথম এভাবে খোলা রাস্তায় পড়তে দেখে তার নাম জানতে চাইলাম।
সেই কবে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাচসাগরের ল্যাম্পপোস্টের নিচে পড়ার গল্প পড়েছি। সেই গল্পের চাইতেও কঠিনতম বাস্তবতা যে এভাবে চোখে দেখব সেটি ভাবিনি। সুন্দর ফুটফুটে শ্যামলা মেয়েটির মুখে দারিদ্র্যের কোনো ছাপ নেই। মিষ্টি হাসি দিয়ে কথা বলে। ওর নাম মোছাম্মৎ জান্নাতুল ফেরদৌস। সেগুন বাগিচার রহিমা খাতুন উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। বাবা আলী আকবর। মা জাহানারা বেগম। ওর বড় একটি বোন আছে। বোনটির বিয়ে হয়ে গেছে। বড় দুটি ভাইও আছে যাদের নাম ইয়াসিন ও মুস্তাকিম। ভাই দুটো সেগুন বাগিচা হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। এক সময়ে নেত্রকোণার পূর্বধলায় ভিটেমাটি ছিলো। এখন আলী আকবর কাগজ টোকায় আর জাহানারা বেগম ভিক্ষা করে। ভাই দুটো ৫ম শ্রেণির সমাপনীতে গোল্ডেন জিপিএ পেয়েছিলো। জান্নাতুলও তাই পেয়েছে।
জান্নাতুলের কাছে জানতে চাইলাম, বড় হয়ে কি হবে? জান্নাতুল স্পষ্ট করে বললো-ডাক্তার। আমি বিশ্বাস করি, জান্নাতুল হারবে না - সে ডাক্তারই হবে।
ওইদিনই আমার স্নেহভাজন একজন জান্নাতুলের লেখাপড়ার দায়িত্ব নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাকে আমি বলেছি, এক-দুই বছর নয় ওকে ডাক্তার বানানোর ভারটা তোমাকে নিতে হবে।
আসুন, আমরা জান্নাতুলকে ডাক্তার বানাই।
মোস্তফা জব্বারের ফেসবুক থেকে
বিবার্তা/মৌসুমী
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]