এক ছেলে জীবনের মানে খুঁজে পাচ্ছে না!
এই ছেলে আমাকে দু’বার মেসেজ করেছে, কিন্তু যে কোনো কারনেই হোক আমি সেই মেসেজ দেখিনি। এরপর কই থেকে আমার বাসার ঠিকানা জোগাড় করে আমার মা'র কাছে চিঠি(টেক্সট)লিখেছে,
- আমি আপনার ছেলের লেখার একজন ভক্ত। আপনি কি উনাকে একটু আমার এই চিঠি'টা পৌঁছে দিতে পারবেন? আমি উনাকে ফেসবুকে দু’বার লিখেছি, কিন্তু কোনো সাড়া পাইনি।
আমার মা কিছুক্ষণ আগে আমাকে ফোন করে বলেছে, তুমি কি আজকাল মানুষকে মানুষ মনে করছ না?
-এই কথা বলছো কেন?
-তোমাকে এক ছেলে দুই বার করে লিখেছে, তুমি নাকি উত্তর দাওনি!
এরপর মা আমাকে বললেন, তুমি ওই ছেলের চিঠি পড়ে আজই উত্তর দিবে। মনে রেখো- নিজের জন্য নয়, অন্যের জন্য বাঁচতে হয়।
আমি সাথে সাথেই ওই ছেলের মেসেজ পড়তে শুরু করলাম। ওর লেখা পড়ে যা বুঝলাম, সোজা করে বললে যা দাঁড়ায়
-আমার পরিবারে তেমন কিছুরই অভাব নেই। আমি নিজেও ভালো একটা জায়গায় পড়ছি। সব কিছুই ঠিক আছে এক হিসেবে, কিন্তু আজকাল আমার কিছুই ভালো লাগে না। বার বার মনে হয়- এই জীবনের মানে কি? শুধু শুধু এতো পড়াশুনা করে, এতো কিছু করে লাভ কি! আমিতো জীবনের কোনো মানেই খুঁজে পাচ্ছি না। আপনি কি আমাকে এই অবস্থা থেকে উত্তরণের একটা পথ বাতলে দিতে পারবেন?
এই ছেলে আরো বিস্তারিত লিখেছে। সব কিছু পাবলিক পোস্টে শেয়ার করা যাচ্ছে না! তবে মূল ব্যাপার অন্তত এটাই। এই ছেলে জগতের এতো মানুষ থাকতে এই মেসেজ আমাকেই কেন করেছে, সেটাও অবশ্য আলোচনার বিষয় হতে পারে!
যা হোক, আমি প্লেনে চড়তে খুব ভয় পাই। যা হয় আরকি, আপনি যা ভয় করবেন, সেটাই আপনার ঘাড়ে এসে পড়বে। আমার কপাল এতোই খারাপ, প্রতি বছর আমাকে কম করে হলেও সাত-আটবার প্লেনে চড়তে হয় নানান কারনে! এই যেমন কালও চড়তে হবে! প্রতিবার প্লেনে চড়ার সময় আমি নানান কিছু ভাবতে থাকি। এই যেমন আজ আমি ভাবছিলাম- যদি কিছু একটা হয়ে যায়! তাহলেই তো সব শেষ! আমার এই জীবনের মানে কি তাহলে?
এরপর'ই আমার মনে হলো- এই জীবনে আমি অন্তত দুই একজন মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, যারা নিঃস্বার্থভাবে আমাকে ভালোবেসেছে। আমার সব সময়'ই মনে হয়-কারো মনে স্থান করে নিতে পারা সত্যি'ই অসাধারণ ব্যাপার। সবার ভাগ্যে এই এক জীবনে এটা পাওয়া হয়তো সম্ভবও হয় না। হয়তো জীবনভর ঘর সংসার করে যাচ্ছে- কিন্তু সত্যিকারের ভালোবাসা হয়তো আর পাওয়া হয়ে উঠে না!
আমি জানি, আমি সেই ভালোবাসা দুই একজন মানুষের কাছ থেকে পেয়েছি। স্রেফ তাদের জন্য হলেও আমি বেঁচে থাকতে চাই। এই কথা যখন চিন্তা করছিলাম, তখন'ই আমার মায়ের কথাটা মনে হলো; মা বলছিলো. ‘নিজের জন্য নয়, অন্যের জন্য বেঁচে থাকতে হয়।’
আমার ধারণা আমার মা'ই বরং এই ছেলের প্রশ্নের সঠিক উত্তরটা দিয়ে দিয়েছেন!
কেউ হয়তো বাবা-মা'র জন্য বেঁচে থাকতে চায়, কেউ সন্তানের জন্য, কেউ হয়তো ভালোবাসার মানুষ কিংবা প্রিয়জনের জন্য বেঁচে থাকতে চায়।
জীবনের সার্থকতা কিংবা জীবনের মানে বোধকরি এটাই।
আমিনুল ইসলামের ফেসবুক থেকে
বিবার্তা/মৌসুমী
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]