শিরোনাম
প্রত্যেক শহীদকে প্রাপ্য সম্মান দিন
প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০১৭, ১৬:৫৬
প্রত্যেক শহীদকে প্রাপ্য সম্মান দিন
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

এই শহরের কোথাও কী আজ শহীদ আসাদকে নিয়ে কোনো কর্মসূচি ছিলো? আমার কিন্তু চোখে পড়েনি। চো‌খে প‌ড়ে‌নি কোনো পোস্টারে।


নিশ্চয়ই আমার ফেসবুক বন্ধুরা জানতে চাইবেন না, শহীদ আসাদ কে? আচ্ছা, আজকের তরুণ প্রজন্ম কী জানে শহীদ আসাদ কে? তারা কী জা‌নে, কেন আসাদ শহীদ? কীভা‌বে ও কোথায় তি‌নি শহীদ হ‌য়ে‌ছি‌লেন? আজকের আওয়ামী লীগ সরকার কী বড় কোনো কর্মসূচি নিয়েছে শহীদ আসাদ স্মর‌ণে?


শহীদ আসাদ। পুরো নাম আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। জন্ম ১৯৪২ সা‌লের ১০ জুন নর‌সিংদী‌তে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন আসাদ। ১৯৬৯ সা‌লের ২০ জানুয়ারি গোটা পূর্ব পাকিস্তানের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট ছিল। কিন্তু সেই ধর্মঘট যেন পা‌লিত না হয় সেজন্য পাকিস্তান সরকার ১৪৪ ধারা জা‌রি ক‌রে। কিন্তু প্রায় দশ হাজার ছাত্রের একটি বিশাল মিছিল ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে রাজপথে পা বাড়ায়। ওই মি‌ছি‌লে সাম‌নের সা‌রিতে ছি‌লেন আসাদ।


মিছিলটি চান খাঁর পুলের কা‌ছে এলে পুলিশ হামলা চালায়। ঘণ্টাখানেক সংঘর্ষ চলার পর আসাদসহ কয়েকজন ছাত্রনেতা মিছিলটিকে ঢাকা হলের পাশ দিয়ে শহরের কেন্দ্রস্থলের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে একজন পুলিশ কর্মকর্তা খুব কাছ থেকে রিভলবারের গুলি ছুঁড়ে আসাদকে হত্যা করে।


এরপর র‌চিত হ‌লো নতুন ইতিহাস। ওইদিন বেলা তিনটায়় কোনো রকম প্রস্তুতি ছাড়াই বের হয় একটি বিরাট শোক মিছিল। মেয়েদের নেতৃত্বে এ মিছিল অগ্রসর হতে থাকলে সাধারণ মানুষও এতে যোগ দেয়। আসাদের মুত্যুর প্রতিক্রিয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে বের হওয়া প্রায় দুই মাইল দীর্ঘ মিছিলটি শহরের বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারে এসে শেষ হয়।


শোকাতুর অগণিত ছাত্র-জনতার মিছিলে শহীদ আসাদের রক্তমাখা শার্ট দেখে বাংলা সাহিত্যের আধুনিক কবি শামসুর রাহমান তাঁর অমর কবিতা ‘আসাদের শার্ট’ লিখেন। কবি হেলাল হাফিজ এ ঘটনায় ক্রোধে ফেটে পড়েন এবং তাঁর কালজয়ী ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতাটি লিখেন। জনপ্রিয় আলোকচিত্র শিল্পী রশীদ তালুকদার তাঁর ক্যামেরায় স্থিরচিত্র হিসেবে ছাত্র-জনতার দীর্ঘ মিছিলসহ আসাদের শার্টের ছবি ওঠান।
আসাদ শহীদ হওয়ার পর তিন দিনের শোক পালন শেষে, ওই বছরের ২৪ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের ছয় দফা ও ছাত্রদের ১১ দফার ভিত্তিতে সর্বস্তরের মানুষের বাঁধভাঙা জোয়ার নামে ঢাকাসহ সারা বাংলার রাজপথে। সংঘটিত হয় ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান। পতন ঘটে আইয়ুব খানের। আরেক স্বৈরশাসক ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় বসে সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দেন।


১৯৭০ সা‌লের সেই অভূতপূর্ব নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। এরপ‌রের ইতিহাস সবার জানা।


কষ্ট লাগে, আমরা কী অদ্ভুতভাবে আসাদকে ভুলে গেছি! শহীদ আসাদ স্মরণে ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগের গেটের সামনে ঊনসত্তর নামে একটা ভাস্কর্য তৈরির উদ্যোগ ছিল। কিন্তু সেই কাজও ছয় বছর ধরে বন্ধ।


রাষ্ট্রের কাছে অনুরোধ, প্রত্যেক শহীদকে তার প্রাপ্য সম্মান দিন। তরুণ প্রজন্মকে জানান আসাদদের কথা।


আজ‌কের এই দি‌নে শহীদ আসাদকে স্যালুট।


শরীফুল হাসানের ফেসবুক থেকে


বিবার্তা/প্লাবন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com