শিরোনাম
বিআইবিএমের গবেষণা প্রতিবেদন
শীর্ষ ঋণগ্রহীতাদের ২৫ শতাংশই খেলাপি
প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০১৬, ২০:৪১
শীর্ষ ঋণগ্রহীতাদের ২৫ শতাংশই খেলাপি
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

দেশের ব্যাংকিং খাতে এক হাজার শীর্ষ গ্রহীতার মধ্যে ২৫ শতাংশই খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। পূণঃতফসিল, পুনর্গঠন ও ঋণ অবলোপনের সুযোগ যদি না থাকতো তাহলে ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণের চিত্র আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতো।


বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত ব্যাংকিং কনফারেন্সের মূল বক্তব্যে এ তথ্য উঠে এসেছে।


রবিবার প্রধান অতিথি হিসেবে দুদিনব্যাপী ব্যাংকিং কনফারেন্স উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। প্রথম দিনে ব্যাংকিং খাতের সার্বিক পরিস্থিতির উপর ১২টি গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। এছাড়া মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক তৌফিক আহমেদ চৌধুরী। এতে ব্যাংকিং খাতের ঋণ পরিস্থিতি, ব্যবসায়ে সেবা, আইসিটি, আইসিসি, এইচআর এবং ইসলামিক ফাইন্যান্স নিয়ে আলোচনা করা হয়।


মূল বক্তব্যে তৌফিক আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ঋণ অবলোপন, পূণঃতফসিল ও পুনর্গঠন সুবিধা যদি না দেয়া হতো তাহলে এটি আরও খারাপ অবস্থানে চলে যেত।


এতে বলা হয়, এক হাজার শীর্ষ ঋণগ্রহীতার ২৫ শতাংশই এখন খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। আর গত ৫ বছরে বড় অংকের ঋণের প্রায় ৩৮ শতাংশ অবলোপন করা হয়েছে।


এ পরিস্থিতির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এসব বিষয়ে বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি প্রফেসর ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ইয়াসিন আলী বলেন, বর্তমানে ব্যাংকগুলো নির্দিষ্টসংখ্যক গ্রাহকের পেছনেই ঘুরছে। কোনো কোনো গ্রুপের হাতে এখন ১৫-২০ হাজার কোটি টাকা আটকে রয়েছে। যারা কোনো কারণে সমস্যায় পড়লে সার্বিকভাবে ৫-৬ টা ব্যাংক একেবারে ধসে পড়বে।


খেলাপির মামলাগুলোর বিচার দ্রুত শেষ করতে সরকারের কাছে অর্থঋণ আদালতের কাজ দ্রুততর করার ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান তিনি। একই সঙ্গে ভারতের মতো করে যারা ইচ্ছাকৃত খেলাপি তাদের তালিকা প্রকাশ করে দেয়ারও অনুরোধ জানান।


মূল বক্তব্যে আরো বলা হয়, ব্যাংকগুলোর আইসিটিতে দৃশ্যত কোনো পরিবর্তন আসেনি। দক্ষতা উন্নয়ন, ব্যবসার পরিকল্পনা, আইটি অডিট কোনো জায়গাতেই পরিবর্তন আসেনি। এখনো ১২ শতাংশ ব্যাংক ইনফ্রাস্ট্রাকচার উন্নয়নের ক্যটাগরি-১ এর ধারেকাছেও নাই। আইটি খাতের ব্যাংকগুলোর মোট বাজেটের মাত্র ৩ শতাংশ ব্যয় করা হয় দক্ষতা উন্নয়নে।


মূল বক্তব্যে ব্যাংকগুলোর এইচআরডি বিভাগেরও সমালোচনা করা হয়। কারণ একটি ব্যাংকের সার্বিক বিষয়ে অডিটের ব্যবস্থা থাকলেও এখনো ৮০ শতাংশ ব্যাংক তাদের এইচআরডি বিভাগে কোনো অডিট করে না।


এদিকে বাংলাদেশে নতুন বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রয়োজন রয়েছে কিনা এমন একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, গবেষণায় অংশ নেয়া শতকরা ৮৮ ভাগই দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন বাণিজ্যিক ব্যাংক খোলার বিষয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মরত রয়েছেন এদের মধ্য থেকে ৭৫ ভাগ এবং গ্রাহকদের ভেতর থেকে ৯২ ভাগ মনে করেন, বাংলাদেশে নতুন একটি ব্যাংক খোলার চেয়ে শাখার সংখ্যা বাড়ানোই ভালো। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, দেশে বর্তমানে নতুন ব্যাংক খোলার পরিস্থিতি নেই। কারণ, যারা বর্তমানে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে তারা তাদের শতভাগ সক্ষমতা কাজে লাগাতে পারছে না। ফলে ব্যাংকগুলোতে তারল্যের পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলছে।


এদিকে গ্রাহকের সেবার মান নিয়ে অপর এক গবেষণায় বলা হয়েছে, কাষ্টমার ঋণ নেয়ার সময় তাদের যে সুদহার ধার্য করা হয়, দুই মাস পর সেটা বেড়ে যায়। ছয় মাস পর তা আরো বেড়ে যায়, যার কোনোটাই গ্রাহক জানতেই পারে না। যখন তার কিস্তি শেষ দিকে আসে তখন ব্যাংক জানায় গ্রাহকের কাছ থেকে তারা আরও টাকা পাবে। কিন্তু কী কারণে পাবে তা বলে না। ফলে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। পরে কেউ বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগ করলে সেটা নির্দেশ দিয়ে ঠিকঠাক করা হয়। বিভিন্ন গোপন চার্জে গ্রাহকরা এভাবেই নানা ধরনের ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।


এসব বিষয়ে ব্যাংক এশিয়ার প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরফান আলী বলেন, নতুন করে ব্রাঞ্চ বাড়ানো যেতে পারে। কিন্তু এখন মনে হয় নতুন ব্যাংক বাড়ানোর মত পরিস্থিতি বাংলাদেশে নেই। কারণ নতুন ব্যাংকগুলোও পুরাতন ব্যাংকগুলোর মতো নির্দিষ্ট কিছু গ্রাহকের পেছনেই ঘুরঘুর করছে। গতনুগতিক ব্যাংকগুলোর মতো তারাও শুধু উচ্চ প্রফিটের টার্গেট নিয়েই ঘুরে বেড়াচ্ছে।


তিনি বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো একটি ‘ডেঞ্জারাস গেইম’খেলে যাচ্ছে, যার ফলে ব্যাংকিং খাতের ঋণের প্রায় ৭০ শতাংশই ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে ।


গ্রাহক হয়রানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা শুধু পয়সার দিকেই নজর দেই, কিন্তু যার কাছ থেকে পয়সা আসে তাদের দেখার সময় আমাদের নেই।


বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com