শিরোনাম
সব লক্ষ্য ভেঙ্গে ৫২ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি
প্রকাশ : ২৬ জুলাই ২০১৭, ১৯:১৪
সব লক্ষ্য ভেঙ্গে ৫২ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি
মৌসুমী ইসলাম
প্রিন্ট অ-অ+

সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে (২০১৬-১৭) সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ৫২,৩২৭ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। প্রথমে ১৯,৬১০ কোটি এবং পরে সংশোধন করে ঋণ লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় ৪৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭,৩২৭ কোটি টাকা বেশি ঋণ নিয়েছে সরকার। জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।


বিশ্লেষকরা বলছেন, উচ্চ সুদে লাগামহীন ঋণ নেয়ার ফলে সরকারের দায় বাড়ছে।


সংস্থাটির মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা বলেন, যেহেতু বিক্রির ক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, তাই চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করা হয়। প্রতিবছরই বাজেটে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়, বছর শেষে তা ছাড়িয়ে যায়। এক্ষেত্রে বিক্রিতে কোনো বিধিনিষেধ দেয়া হয় না।


প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত অর্থছরের প্রথম মাস জুলাইতে নীট সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩,৪৯৮ কোটি টাকা, আগস্ট মাসে নীট বিক্রি ৪,২৯৭ কোটি টাকা, সেপ্টেম্বরে বিনিয়োগ আসে ৩,৮৫৪ কোটি টাকা, অক্টোবের ৪,৩২৩ কোটি টাকা, নভেম্বর মাসে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ৪,৪০২ কোটি এবং ডিসেম্বর মাসে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ হয় ৩,১০০ কোটি টাকা।


আর বছরের প্রথম মাস জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে বিক্রি হয়েছে যথাক্রমে ৫,৪২০ কোটি ও ৪,৩৮৮ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র। মার্চ ও এপ্রিল মাসে বিক্রির পরিমাণ যথাক্রমে ৪,৩৬৫ কোটি এবং ৪,৪৯৮ কোটি টাকা। আর মে মাসে বিক্রির পরিমাণ ৪,৫৭১ কোটি টাকা। শেষ মাস জুনে বিক্রি হয় ৫,৬৫৮ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র।


মূলত ব্যাংক আমানতের চেয়ে সঞ্চয়পত্রে সুদহার বেশি হওয়ায় লাফিয়ে বাড়ছে বিক্রি। এই ব্যবস্থায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো তদারকি ব্যবস্থা না থাকায় বিক্রি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। সুদহার বেশি থাকায় সরকারের দায় বাড়ছে।


অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, সঞ্চয়পত্রে অতিনির্ভরতায় বাড়ছে আর্থিকখাতে ঝুঁকি।


বাজেট ঘাটতি মেটাতে প্রতি বছরই অভ্যন্তরীণ উৎস ব্যাংকের পাশাপাশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ঋণ নেয়ার একটি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে সরকার। ২০১০-১১ সালের দিকে সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হতো না। তখন সাধারণ মানুষ ও বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি ছিল ব্যাংক ও পুঁজিবাজারের দিকে। তবে পুঁজিবাজারে ধস এবং ব্যাংক আমানতের সুদ ধীরে ধীরে কমতে থাকে। অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রের সুদহার বাড়িয়ে দেয় সরকার। ফলে সঞ্চয়পত্রে সাধারণ মানুষের আগ্রহ বাড়তে থাকে।


জানা গেছে, ২০১৪ থেকে ২০১৬ অর্থবছরেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি বিক্রি হয় সঞ্চয়পত্র। তার আগের দুই বছর অর্থাৎ ২০১২ ও ২০১৩ সালে বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি। ২০১১-১২ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির নীট লক্ষ্যমাত্রা ছিল ছয় হাজার কোটি টাকা। বিক্রি হয় মাত্র ৪৭৯ কোটি টাকার। আর পরের বছর ২০১২-১৩ অর্থবছরে বিক্রি হয় ৭৭২ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র। অথচ সেই অর্থবছরে বিক্রি লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭,৪০০ কোটি টাকা।


২০১৩-২০১৪ অর্থবছর থেকে লাফিয়ে বাড়তে থাকে সঞ্চয়পত্র বিক্রি। ওই বছরে আট হাজার কোটি টাকার বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও বিক্রি হয় ১১,৭০৭ কোটি টাকার। পরের ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২১ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যের বিপরীতে বিক্রি হয় ২৮,৭৩২ কোটি টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২৮ হাজার কোটি টাকার বিক্রি লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও বিক্রি হয় ৩৩,৬৮৮ কোটি টাকার।


সঞ্চয়পত্রে সুদহার কমানোর সুপারিশ


সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বাড়ায় সরকারের ঋণের বোঝা বাড়ছে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাই সুদহার কমিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক এই সংস্থা। বুধবার চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, জাতীয় সঞ্চয় স্কীমের সঞ্চয়পত্রগুলোর বাজার সুদহারের সঙ্গে সঙ্গতিহীন। এর উচ্চ মুনাফাহার সরকারের জন্য অতিরিক্ত সুদ ব্যয়ভার সৃষ্টি করছে। এছাড়াও মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী সরকারি-বেসরকারি প্রকল্পের অর্থায়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বন্ড বাজারের বিকাশ বিশেষভাবে বাধাগ্রস্ত করছে। ফলে অচিরেই সঞ্চয়পত্রগুলোর মুনাফার হার বিদ্যমান বাজার সুদহারের সঙ্গে অবশ্যই সম্পর্কিত করতে হবে।


বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com