শিরোনাম
অর্থনীতিতে কেটে যাচ্ছে হলি আর্টিজানের ক্ষত
প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০১৭, ১৯:১৭
অর্থনীতিতে কেটে যাচ্ছে হলি আর্টিজানের ক্ষত
মৌসুমী ইসলাম
প্রিন্ট অ-অ+

হলি আর্টিজান হামলার পর অর্থনৈতিক সংকট অনেকটাই সামাল দিয়েছে সরকার। নৃশংস জঙ্গিহামলায় জাপানীজ ও ইতালীয় ১৫ নাগরিক হত্যার পর অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে সংকট তৈরী হয়, তার অনেকটাই কেটে গেছে। বিলম্বে হলেও আবার শুরু হয়েছে উন্নয়ন সহযোগী জাইকা’র অর্থায়নপুষ্ট প্রকল্পের কাজ। হারানো ভাবমূর্তি ফিরে পাচ্ছে তৈরি পোশাকখাত। পর্যটনখাতেও এখন সেই শঙ্কা নেই।


অর্থপ্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, শতভাগ না হলেও প্রায় ৮০ শতাংশ আস্থা অর্জন করতে সক্ষম করেছে সরকার।


বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের উন্নয়ন সহযোগী ‘জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সিতে (জাইকা) কর্মরত ছিলেন গুলশান হামলায় নিহত সাতজন। তারা হলেন, ওকামোরা মাকাতো, শিমোদাইরা রুই, হাসিমোতো হিদেকি, তানাকা হিরোশি, ওগাসাওয়ারা কোয়োকেও, সাফাই ইউকু ও কুরোসাকি নোবুহিরো। মূলত মেট্রোরেল প্রকল্পেই নিযুক্ত ছিলেন তারা। নৃশংস এই হত্যার পর থেমে যায় জাইকার অর্থায়নপুষ্ট প্রায় ২৫টির অধিক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ। জাপানীয় নাগরিকরা তখন দেশ থেকে চলে যায়। তবে, সরকারের জঙ্গিবিরোধী নানা উদ্যোগে তারা আবার ফিরতে শুরু করেছে।


পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, হলি আর্টিজান হামলার পর থেমে যাওয়া উন্নয়ন কাজ আবার শুরু হলেও বিলম্ব হয়েছে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় মাস। অর্থপ্রতিমন্ত্রী বলেন, জাপান আমাদের বহুপুরনো উন্নয়ন অংশীদার। তাদেরকে আমরা আশ্বস্ত করতে সক্ষম হয়েছি যে, সরকার জঙ্গিবাদকে কখনো প্রশ্ন দেবে না। সরকারের দৃঢ অবস্থানের ফলেই তারা (জাপানীজরা) আবার ফিরতে শুরু করেছে। তাদের অর্থায়নপুষ্ট প্রকল্পগুলো আবার শুরু হচ্ছে।


গুলশান হামলায় নিহত হন ইতালীয় নয় নাগরিক। তাদের মধ্যে ছয়জনই বাংলাদেশের পোশাকের ক্রেতা হিসেবে কাজ করেছেন। এরা হলেন, বারিধারাভিত্তিক ইতালীয় বায়িং হাউজ স্টুডিও টেক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাদিয়া বেনেদিত্তো, ডেকাওয়ার্ল্ড প্রাইভেট লিমিটেডের এমডি ভিনসেনজো দ্য আলেস্ত্রো। এছাড়া ক্লদিও মারিয়া দান্তোনা, সিমোনা মন্টি, মারিয়া রিবোলি, আডেলে পুগলিসি, ক্লদিও চাপেলি, ক্রিস্টিয়ান রোসিস ও মারকো তোনডাট। তাদের মৃত্যুতেও সংকটে পড়ে তৈরি পোশাকখাত। ভয়ে বাংলাদেশে আসা কমিয়ে দেয় অনেক বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি। আলোচনার জন্য বেছে নেয় তৃতীয় কোনো দেশ।


কিন্তু এক বছরে পরিবেশ অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসছে বলে মনে করেন তৈরি পোশাক মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান। বলেন, হামলার পর বেশ সমস্যার তৈরী হয়। ক্রেতারা এই দেশে নিরাপদ মনে করছিল না। তবে, এখন সেই পরিস্থিতি পাল্টেছে। কারণ জঙ্গিহামলা এখন আর শুধু এদেশের সমস্যা নয়, এটি বৈশ্বিক সংকট।


হলি আর্টিজান হামলার পর বিদেশি বিনিয়োগেও আস্থার সংকট তৈরী হয়। অনেক বিদেশি উদ্যোক্তা এদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নেতিবাচক অবস্থানে ছিলেন। তাদের ধারণা ছিল, বিনিয়োগ ও নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ উপযুক্ত দেশ নয়। তবে, সরকারের জঙ্গিবিরোধী উদ্যোগের ফলে সেই আস্থা ফিরে এসেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এমএম আকাশ মনে করেন, যেহেতু জঙ্গিবাদ একটি বৈশ্বিক সংকট তাই প্রতিরোধের ক্ষেত্রে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। তিনি বলেন, এমনিতেই দেশে কাঙ্খিত মাত্রায় বিদেশি বিনিয়োগ আসছে না। তারওপর হলি আর্টিজান হামলায় বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে চরম আস্থার সংকট তৈরী করে।


বিবার্তা/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com