শিরোনাম
হ্যাকারদের এক নম্বর টার্গেট ‘এশিয়া’
প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০১৬, ১০:৫২
হ্যাকারদের এক নম্বর টার্গেট ‘এশিয়া’
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

বিশ্বে এখন সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের মাত্রা আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেড়ে গেছে। বিশেষত বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরি, ইউক্রেনের বৈদ্যুতিক গ্রিডে বিপর্যয় আর যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটির তথ্য ফাঁসের মতো ঘটনা এটাই ইঙ্গিত দিচ্ছে, সাইবার হামলা ঠেকানো অনেক কঠিন।


সাইবার বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকারি, বেসরকারি কোম্পানি এবং এমনকি ব্যক্তি পর্যায়ও সাইবার ঝুঁকি থেকে নিরাপদ নয়। তবে তারা এটা জোর দিয়ে দাবি করছেন, সাইবার নিরাপত্তা ইস্যুতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে এশিয়া। এর পেছনে চারটি মৌল কারণও তারা শনাক্ত করেছেন। এগুলো হচ্ছে বিপুল জনসংখ্যা, সচেতনতার অভাব, আইনের অভাব আর সেকেলে ও লাইসেন্সহীন প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার।


মার্কিন সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ফায়ার আই জানিয়েছে, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠানই ২০১৫ সালের দ্বিতীয়ার্ধে মারাত্মক সাইবার হামলার শিকার হয়েছিল। সারা বিশ্বের গড় হিসাবের চেয়ে এটি দ্বিগুণ। এই সময় বিশ্বজুড়ে ১৫ শতাংশ কোম্পানি এমন হামলার শিকার হয়েছে।



এশিয়া এতো অরক্ষিত থাকার পেছনে কিছু কারণ শনাক্ত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা দেখিয়েছেন, কেন এই অঞ্চলটি হ্যাকারদের সহজ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।


তাদের মতে, বিশ্বের জনসংখ্যার ৬০ শতাংশেরই বাস এশিয়ায়। এখানে বিপুল সংখ্যক মানুষ ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত। প্রায় একশ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে, যার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি চীনে। মাইক্রোসফটের ডিজিটাল ক্রাইমস ইউনিটের আঞ্চলিক পরিচালক কেশব ধাকদ বলেন, এই বিপুল সংখ্যক মানুষ ইন্টারনেটে অর্থ আদান প্রদান, সোস্যাল সাইট ব্রাউজ, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড করে।


আবার সব বিশেষজ্ঞই এই ব্যাপারে এক মত যে, এশিয়াতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা সাইবার হামলার বিষয়ে সবচেয়ে কম সচেতন। সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে তাদের ধারণা যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মানুষের চেয়ে অনেক কম। ফলে বাইরের হামলা প্রতিরোধে এখানকার প্রতিষ্ঠানগুলো বাড়তি ব্যবস্থা নেয় না। নিরাপত্তা বিষয়ে তাদের অবকাঠামো শক্ত না থাকায় সাইবার হামলার শিকার হলে ব্যবস্থা নিতেও দেরি হয়।


ফায়ার আই মতে, নিরাপত্তা ব্যবস্থার ফাঁক গলে হ্যাকারদের তথ্য চুরি শনাক্ত করতে পশ্চিমা কোম্পাগিুলোর ১৪৬ দিনের বেশি সময় লাগে না। কিন্তু এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কোম্পানিগুলোর লাছে ৫২০ দিন।


তৃতীয় কারণ হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে যখন কোনো কোম্পানির তথ্য চুরি হয়, তখন তারা আইনগতভাবেই এ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশে বাধ্য। এর জন্য শাস্তির ব্যবস্থাও আছে। কিন্তু এশিয়াতে পরিস্থিতি ভিন্ন। এখানে একেক দেশে একেক নিয়ম। হংকংয়ে তথ্য চুরি হলে কাউকে জানানোর বিষয়ে কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। এই পরিস্থিতি এমন একটা ধারণা তৈরি করেছে যে, এসব অঞ্চলে সাইবার হামলা ইউরোপ আমেরিকার চেয়ে কম। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এশিয়ার বাণিজ্যপ্রতিষ্ঠানগুলো সেসব দেশের চেয়ে দ্বিগুণ ঝুঁকিতে আছে।


ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, ভি-টেক নামে হংকংয়ের একটি কোম্পানি যারা বাচ্চাদের খেলনা তৈরি করে, ২০১৫ সালে তাদের সার্ভার থেকে ৬৪ লাখ শিশু এবং ৪৯ লাখ পূর্ণবয়স্ক ক্রেতার তথ্য চুরি করে নিয়ে যায় হ্যাকাররা। কিন্তু কোনো আইন না থাকার কারণে তাদের শাস্তি হয়নি। পত্রিকাটি মতে, এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের যেসব সাইবার হামলা হয় তার মাত্র ১০ থেকে ২০ শতাংশ প্রকাশ পায়।


চতুর্থ কারণ হলো এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মানুষের মধ্যে কোনো সফটওয়্যার কিনে ব্যবহার করার প্রবণতা কম। এখানে সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে পুরাতন ও লাইসেন্স বিহীন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। আরেকটি বড় ব্যাপার হলো এশিয়াতে বিপুল সংখ্যক মানুষ আসল নয় বা পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করে। অপরাধীরা এসব সফটওয়্যার সহজে হ্যাক করতে পারে।কারণ লাইসেন্সহীন সফটওয়্যারগুলোতে হ্যাকাররাই ম্যালওয়্যার ইনস্টল করে রাখতে পারে। এটি কম্পিউটারে ইনস্টল করার সাথে সাথে ম্যালওয়্যারটি ওই হ্যাকারের সাথে যোগাযোগ রক্ষার মাধ্যমে পরিণত হয়। সে কম্পিউটারে সম্পূর্ণ প্রবেশাধিকার পায়।


দ্য সফটওয়্যার অ্যালায়েন্স (বিএসএ) গত মে মাসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, সাইবার হামলা এবং লাইসেন্স বিহীন সফটওয়্যারের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। একটি জরিপে দেখা গেছে, ২০১৫ সালে সাইবার আক্রমণের শিকার সফটওয়্যারগুলোর মধ্যে ৬১ শতাংশই লাইসেন্সহীন।


বিবার্তা/জিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com