শিরোনাম
ব্যাংকের ‘বন্ড ইস্যু’ : যে কারণে অর্থবিভাগের আপত্তি
প্রকাশ : ০৪ মে ২০১৭, ২০:৩৪
ব্যাংকের ‘বন্ড ইস্যু’ : যে কারণে অর্থবিভাগের আপত্তি
মৌসুমী ইসলাম
প্রিন্ট অ-অ+

সরকারের দায় আরও বাড়বে - এই আশঙ্কায় ব্যাংকগুলোর বন্ড ইস্যুর প্রস্তাব নাকচ করেছে অর্থমন্ত্রণালয়। মূলধন ঘাটতি মেটাতে বন্ড ইস্যুর পক্ষে ব্যাংকগুলো সরকারের কাছে যে যুক্তি তুলে ধরে, তাও বিশ্বাস করে না অর্থবিভাগ। বিস্তর পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ‘বন্ড ইস্যু করা হলে তাতে সরকারের নগদ দায় নেই - ব্যাংকগুলোর এমন দাবি সঠিক নয়।’


রাষ্ট্রায়ত্ত্ব তিন ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি মেটাতে বন্ড ইস্যু’র প্রস্তাব নিয়ে তৈরী করা নিজস্ব পর্যবেক্ষণে এমন চিত্র তুলে ধরেছে অর্থবিভাগ। গত ডিসেম্বরে অর্থমন্ত্রণালয়ের কাছে ‘রি-ক্যাপিটালাইজেশন বন্ড’ ইস্যর প্রস্তাব দেয় রাষ্ট্রায়ত্ত্ব তিন ব্যাংক - বেসিক, জনতা ও রূপালী। ওই প্রস্তাবে বলা হয়, বন্ড ছেড়ে বেসিক ব্যাংক ২,৬০০ কোটি, জনতা ব্যাংক ১,০০০ কোটি এবং রূপালী ব্যাংক ৫০০ কোটি টাকা উত্তোলন করতে চায়।


প্রস্তাবে আরো বলা হয়, এসব বন্ডের কোনো সুদ থাকবে না। এই বন্ড ইস্যু করা হলে মূলধন ঘাটতির আংশিক পূরণ হবে। এতে সরকারের দায় থাকবে না। চাহিদা অনুযায়ী বন্ড ইস্যু করা হলে বিদ্যমান পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সম্ভব হবে।


তবে ব্যাংকগুলোর এমন যুক্তি আমলে নেয়নি অর্থবিভাগ। পর্যবেক্ষণে বলা হয়, রি-ক্যাপিটালাইজেশন বন্ড ইস্যু করা হলে তা সরকারের নগদ সহায়তার মতোই বাজেট ঘাটতি বৃদ্ধি করবে। গত ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বেসিক ব্যাংককে যথাক্রমে ১,১৯০ কোটি ও ১,২০০ কোটি টাকা মূলধন সহায়তা করা হয়। কিন্তু সরকারের কাছ থেকে মূলধন সহায়তা পাওয়ার পরেও ব্যাংকটির ঘাটতি বিদ্যমান। অব্যাহত মূলধন সহায়তা করা হলেও ব্যাংকটির মূলধন অবস্থান উন্নয়নের কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। বর্তমানে ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি ২,৬৮৪ কোটি টাকা।


পাশাপাশি জনতা ও রূপালী ব্যাংকের সাত বছর মেয়াদী ১,৫০০ কোটি টাকার সাব-অর্ডিনেট বন্ডে গ্যারান্টি প্রদান করা সরকারের সমিচীন হবে না বলেও মূল্যায়ন করেছে অর্থ বিভাগ। জনতা ব্যাংকের ৭৩ কোটি টাকা মূলধন উদ্বৃত্ত থাকলেও রূপালী ব্যাংকে ঘাটতি রয়েছে ৭১৫ কোটি টাকা।


প্রতিবছরই জনগণের করের অর্থে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণ করছে সরকার। এ জন্য রাখা হয় বরাদ্দ। চলতি অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ রাখা হয় ২০০০ কোটি টাকা। ওই অর্থ থেকে চলতি অর্থবছরে বেসিক ব্যাংকের অনুকূলে মূলধন ঘাটতি মেটাতে ১০০০ হাজার কোটি যোগান দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়। পর্যবেক্ষণে বলা হয়, বাজেটে এইখাতে বরাদ্দ রাখায় সরকারের বাজেট ঘাটতি তৈরী হচ্ছে, এর সঙ্গে বন্ড ইস্যুর অনুমতি দেয়া হলে ঘাটতির পরিমাণ আরও বাড়বে।


এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকিং খাতের সার্বিক সংস্কার ছাড়া বন্ড ইস্যু ঠিক হবে না। এতে দায় আরও বাড়বে।


শুধু বন্ডই নয়, ব্যাংকগুলোকে মূলধন সহায়তার ক্ষেত্রে আরও জবাবদিহিতায় পরামর্শ দেন এই অর্থনীতিবিদ।


এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, মালিক হিসেবে আইনগতভাবে সরকার এই টাকা দিতে বাধ্য। কিন্তু নৈতিকতার দিক থেকে এটি অনৈতিক কাজ। কারণ, সরকারনিযুক্ত এমডি ও পরিচালনা বোর্ডের মাধ্যমে জনগণের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এখন জনগণের টাকায় ঘাটতি পূরণ করা হচ্ছে।


জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণে বন্ড ইস্য - এটি দেশের প্রথম। এ ধরনের ব্যবস্থা ভারত ও বুলগেরিয়াসহ কয়েকটি দেশে আছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে বন্ড ইস্যুর ধারণা সংগ্রহ করেছে সরকার।


বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com