শিরোনাম
সক্ষমতা বাড়ছে সম্ভাবনাময় ইস্পাত খাতে
প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০১৬, ১১:২০
সক্ষমতা বাড়ছে সম্ভাবনাময় ইস্পাত খাতে
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

দেশের ইস্পাত খাতের উৎপাদন পরিস্থিতি আশাবাদ জাগাচ্ছে। কারণ স্থবিরতা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে সম্ভাবনাময় খাতটি। সূত্র মতে, এ খাতে নেতৃত্বদানকারী গ্রুপগুলো উৎপাদন-সক্ষমতা বাড়াচ্ছে। আবার রড নির্মাণে মধ্যবর্তী কাঁচামাল বিলেট উৎপাদনেও স্বয়ংসম্পূর্ণতা বাড়ছে।


উদ্যোক্তারা বলছেন, মূলত সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প এবং বাস্তবায়নের অপেক্ষায় থাকা মেগা প্রকল্পগুলো সামনে রেখে উৎপাদনক্ষমতা বাড়াচ্ছে কোম্পানিগুলো। ভবিষ্যতে আবাসন খাতে স্থবিরতা পুরোপুরি কেটে গেলে এ খাতে প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে।


ইস্পাত খাতের দেশীয় উদ্যোক্তারা জানান, সরকারের অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন আছে। পদ্মা সেতুতে রডের ব্যবহার বেশি না হলেও চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীতে টানেল, রেলওয়ে লাইন, সেতু, সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎ প্রকল্প ও মেট্রোরেল প্রকল্পগুলোতে বিপুল পরিমাণে রডের দরকার হবে। আবার আবাসন খাতে ধীরে ধীরে মন্দা কাটছে। এ খাতে সব সময় মন্দা থাকবে না। আবাসন খাত ঘুরে দাঁড়ালে ইস্পাতপণ্যের বড় চাহিদা তৈরি হবে। ফলে ভবিষ্যতে ইস্পাত খাতে প্রবৃদ্ধিও বাড়বে।



ইস্পাত খাতে উৎপাদন বাড়ার প্রমাণ পাওয়া যায় ইস্পাতপণ্য; বিশেষ করে লং স্টিল হিসেবে পরিচিত রড, অ্যাঙ্গেল, চ্যানেল তৈরির কাঁচামাল আমদানিতে। গত তিন বছরের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ইস্পাতশিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল বিলেট ও স্ক্র্যাপ (পুরনো জাহাজ ও পুরনো লোহা) আমদানি ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এই দুই ধরনের কাঁচামাল আমদানি হয় ২৮ লাখ টন। পরের বছর তা বেড়ে দাঁড়ায় সোয়া ৪৪ লাখ ২৮ হাজার টন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আমদানি হয় প্রায় ৫৫ লাখ ৩৮ হাজার টন।


বিএসআরএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আলীহুসাইন আকবর আলী জানান, বর্তমানে বছরে ৫ থেকে ৭ শতাংশ হারে বাড়ছে ইস্পাত খাতের বাজার। তবে আবাসন খাত ঘুরে দাঁড়ালে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হবে ১৫ শতাংশের বেশি। এই বাজারের সম্ভাবনা বাড়ছে। এখন বছরে ৪০ লাখ টনের বেশি ইস্পাতপণ্য ব্যবহৃত হচ্ছে।


ইস্পাত খাতের এই সম্ভাবনা মাথায় রেখে বড় কোম্পানিগুলো সম্প্রসারণে যাচ্ছে। ইস্পাত খাতের একটি কোম্পানির বাজার সমীক্ষা, ইস্পাত খাত নিয়ে একটি ব্যাংকের প্রতিবেদন এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসির প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১২ সালে ইস্পাত খাতে নেতৃত্ব দেওয়া বিএসআরএম, আবুল খায়ের ও কেএসআরএম গ্রুপের সম্মিলিত রড উৎপাদনক্ষমতা ছিল ১৭ লাখ টন। সম্প্রসারণের পর এখন তিনটি প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনক্ষমতা দাঁড়াচ্ছে ২৯-৩০ লাখ টন। এই তিনটির বাইরে জিপিএইচ ইস্পাতও কারখানা সম্প্রসারণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ২০১৮ সালের শেষে প্রকল্পকাজ শেষ হলে কারখানার রডের উৎপাদন এক লাখ ২০ হাজার টন থেকে বেড়ে সাত লাখ ৬০ হাজার টনে উন্নীত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে কোম্পানিটি। এভাবে ক্ষমতা বাড়তে থাকলে আগামী পাঁচ বছরে ইস্পাত খাতে উৎপাদনক্ষমতা দ্বিগুণ বাড়বে।


কেএসআরএম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান বলেন, সরকারি মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন শুরু হলে ইস্পাতের ব্যবহার আরও বাড়বে। বড় প্রকল্পগুলোতে গুণগত মানের ইস্পাতপণ্য দরকার হয়। ভবিষ্যতে বাড়তি চাহিদাকে কেন্দ্র করে কেএসআরএমের উৎপাদনক্ষমতা ৪৫ শতাংশ বাড়ানো হচ্ছে।



উৎপাদনক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি রড তৈরির মধ্যবর্তী কাঁচামাল বিলেট উৎপাদনক্ষমতাও সম্প্রসারণ করছে কোম্পানিগুলো। আবুল খায়ের গ্রুপ এখন নিজেদের আবুল খায়ের স্টিল মেল্টিং কারখানায় চাহিদা অনুযায়ী বিলেট উৎপাদন করছে। প্রতিষ্ঠানটি এখন আর বিলেট আমদানি করে না। বিলেট তৈরির জন্য তারা প্রাথমিক কাঁচামাল পুরোনো লোহা আমদানি করছে। এ ছাড়া বিএসআরএম গ্রুপের নতুন বিলেট তৈরি কারখানায়ও উৎপাদন শুরু হয়েছে। তবে কোম্পানিটিকে বছরে আরও পাঁচ-ছয় লাখ টন বিলেট আমদানি করতে হচ্ছে। ভবিষ্যতে আমদানি না করে নিজেদের কারখানায় বিলেট উৎপাদন করে চাহিদা মেটানোর চেষ্টায় আছে প্রতিষ্ঠানটি। বিলেট উৎপাদনের তালিকায় সম্প্রতি যোগ হয়েছে কেএসআরএম গ্রুপও।


বিলেটের উৎপাদন বাড়ার প্রমাণ পাওয়া যায় বন্দরের তথ্যেও। গত দুই অর্থবছরের আমদানি তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিলেট উৎপাদন বাড়ায় একদিকে বিলেট আমদানি কমেছে, অন্যদিকে বিলেট প্রস্তুতকরণের জন্য প্রাথমিক কাঁচামাল পুরনো লোহা আমদানি বেড়েছে। যেমন, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বন্দর দিয়ে বিলেট আমদানি হয়েছিল সাড়ে ১৬ লাখ টন। গত অর্থবছরে তা কমে দাঁড়ায় সাড়ে ১৩ লাখ টন। অন্যদিকে বিলেট তৈরির কাঁচামাল পুরোনো লোহা আমদানি প্রায় ৫১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৪২ লাখ টন।


বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শেখ মাসুদুল হাসান বলেন, আবাসন খাতে মন্দা ধীরে ধীরে কাটছে। প্রান্তিক পর্যায়ে টিনের ঘরের স্থলে নতুন বিল্ডিং হচ্ছে। ইস্পাতের চাহিদা বাড়ার কারণে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোও সম্প্রসারণে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে পাঁচ বছরে ইস্পাত খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন-সক্ষমতা দ্বিগুণ হবে। তবে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালোটাকা দেশে ধরে রাখতে পারলে পাঁচ বছরের আগেই ইস্পাত খাতে চাহিদা দ্বিগুণ হবে।


বিবার্তা/জিয়া


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com