শিরোনাম
৪ হাজার কোটি টাকার গ্যাস বিল বকেয়া
প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০১৬, ১৪:০৪
৪ হাজার কোটি টাকার গ্যাস বিল বকেয়া
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

সরকারি-বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাছে গ্যাস বিক্রি বাবদ বকেয়া পড়েছে বড় অংকের অর্থ। আইনি জটিলতার কারণে প্রেট্রোবাংলা এসব বকেয়া আদায়ে চিঠি পাঠানো ছাড়া অন্য কিছুই করতে পারে না। প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, এ অর্থের পরিমাণ চার হাজার কোটি টাকারও বেশি। এর সিংহভাগই পড়ে আছে বিদ্যুৎকেন্দ্র, ক্যাপটিভ পাওয়ার ও বড় শিল্পকারখানার কাছে।


সূত্র মতে, সরকারি মালিকানাধীন ছয়টি বিতরণ কোম্পানিসহ আটটি কোম্পানির গ্যাস বিক্রি বাবদ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত পাওনা দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৩৬৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি খাতে বকেয়ার পরিমাণ এক হাজার ৬১৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। আর বেসরকারি খাতে বকেয়া পড়েছে দুই হাজার ৭৫৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ গ্যাস বিল বাবদ বকেয়ার ৬৩ শতাংশই রয়েছে বেসরকারি খাতের কাছে।


পেট্রোবাংলার পরিচালক (প্রশাসন) মো. মোস্তফা কামাল জানান, বকেয়া আদায়ের বিষয়টি পেট্রোবাংলার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এবং এটি বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাজ বলে মন্তব্য করেন তিনি।


পেট্রোবাংলার সর্বশেষ তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গ্যাস ব্যবহার করে অর্থ পরিশোধ না করার শীর্ষে রয়েছে বিদ্যুৎখাত। এ খাতে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে মোট বকেয়া ৭৭২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা ৪৬৪ কোটি ৬৯ লাখ ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ৩০৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা।


বকেয়ার পরিমাণে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ক্যাপটিভ পাওয়ার খাত। এ খাতে বকেয়া অর্থের পরিমাণ ৭৪৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এ খাতে গ্যাস বিক্রি বাবদ সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়া পড়েছে ২৭ কোটি ৬৪ লাখ ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ৭১৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। গ্যাস সহজাত পদার্থ (কনডেনসেট) বিক্রি বাবদ সরকারি খাতে বকেয়া ৭৩৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা।


সিএনজি খাতে মোট বকেয়ার পরিমাণ ৬৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি সিএনজি স্টেশনের কাছে পাওনার পরিমাণ ৪৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা। আর বেসরকারি বিভিন্ন সিএনজি স্টেশনের কাছে গ্যাস বিক্রি বাবদ পাওনা দাঁড়িয়েছে ৬৩৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা।


গ্যাস বিক্রি বাবদ শিল্পকারখানার কাছেও বড় অংকের অর্থ বকেয়া পড়েছে, যার পরিমাণ ৬৬৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কারখানার কাছে গ্যাস কোম্পানিগুলোর পাওনা ৮১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এছাড়া বেসরকারি শিল্প-কারখানার কাছে পাওনার পরিমাণ ৫৮১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।


গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্য বাবদ বকেয়ার পরিমাণ ৫৫৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৪১২ কোটি ৪৩ লাখ টাকাই বেসরকারি খাতের। আর সরকারি খাতে বকেয়ার পরিমাণ ১৪৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা।


এছাড়া সার কারখানায় গ্যাস বিক্রি বাবদ বিতরণ কোম্পানির পাওনা দাঁড়িয়েছে ৬৪ কোটি ৮৯ লাখ, বাণিজ্যিক খাতে ৯৫ কোটি তিন লাখ, ইটখোলায় চার কোটি ৭৪ লাখ, চা বাগানে তিন কোটি ৫৬ লাখ এবং কয়লা ও অন্যান্য খাতে ৪১ কোটি ৪১ লাখ টাকা।


এদিকে গ্যাস বিক্রি বাবদ সবচেয়ে বেশি অর্থ বকেয়া পড়েছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের। বিভিন্ন শ্রেণীর গ্রাহকের কাছে কোম্পানিটির পাওনার পরিমাণ দুই হাজার ৪২৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, যা গ্যাস খাতের বিভিন্ন কোম্পানির মোট পাওনার অর্ধেকেরও বেশি।


এ বিষয়ে তিতাসের পরিচালক (অর্থ) শঙ্কর কুমার দাস বলেন, তিতাস অনেক পুরনো কোম্পানি। আমাদের গ্রাহকসংখ্যাও বেশি। বকেয়ার পরিমাণও তাই বেশি। এছাড়া আমাদের চলমান বকেয়া (রানিং) এক হাজার কোটি টাকা থাকেই। দীর্ঘদিন ধরে যেসব অর্থ বকেয়া থেকে যাচ্ছে, সেগুলো আদায়ে আমরা অর্থ মামলাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে থাকি। এগুলোর মাধ্যমে বকেয়ার পরিমাণ কমিয়ে আনা হচ্ছে।


অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে বাখরাবাদের পাওনার পরিমাণ ৪২০ কোটি ১৯ লাখ, কর্ণফুলীর ৩২৬ কোটি ৬২ লাখ, জালালাবাদের ২৮২ কোটি ৭৩ লাখ, পশ্চিমাঞ্চলের ৮৫ কোটি ৯৩ লাখ ও সিলেট গ্যাস কোম্পানির ৩৮৯ কোটি ৮১ কোটি টাকা।


গ্যাস বিতরণ কোম্পানির পাশাপাশি গ্যাস উৎপাদন কোম্পানি বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল) ও রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (আরপিজিসিএল) বড় অংকের অর্থ পাওনা রয়েছে।


বিবার্তা/জিয়া


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com