কালজয়ী উপন্যাসের লেখক প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার সোমবার (৮ মে) সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।
প্রখ্যাত এ কথা সাহিত্যিকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন টালিউড অভিনেত্রী পাওলি দাম। প্রিয় উপন্যাসিকের মৃত্যুতে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তিনি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকাকে তিনি বলেন, সমরেশদা আর নেই। এটা ভাবতেই অসুবিধা হচ্ছে। কলকাতা থেকে অনেক দূরে আছি। মুম্বাইয়ে শুটিং করছি।
অভিনেত্রী বলেন, কাজের মাঝে বাইরের অধিকাংশ খবরই আমাদের কাছে পৌঁছায় না। তাই বলে এমন কিছু হবে, সেটা ভাবতেও পারিনি। তার মৃত্যুর কথা জেনে একসঙ্গে নানা স্মৃতি ভেসে আসছে, কী বলব?
‘কালবেলা’ সিনেমার সময়ই ব্যক্তিগতভাবে লেখক সমরেশ মজুমদারের সঙ্গে পরিচয় হয় নায়িকা পাওলি দামের। এর আগে তার অনেক লেখা পড়েছেন অভিনেত্রী। মুগ্ধ ছিলেন। ব্যক্তিগতভাবে এ লেখকের সঙ্গে পরিচয় হওয়াই ছিল অন্যরকম অভিজ্ঞতা।
পাওলি দাম বলেন, ২০০৬ সালের শেষ দিক। ২০০৭ সালে ‘কালবেলার’ শুটিং শুরু করি। এর আগে মাঝে মাঝে আড্ডা হতো তার সঙ্গে। পরিচালক গৌতম ঘোষ থাকতেন, খুকুদিও থাকতেন। কাজ নিয়ে কথা হতো। সমরেশদা অনেক আড্ডাবাজ ছিলেন। সিনেমা, সাহিত্য থেকে খাওয়া-দাওয়া, সব বিষয়েই সমান আগ্রহ ছিল তার। অনেক মজার মজার গল্প বলতেন ও হাসাতে পারতেন। বাংলাদেশের প্রতিও টান ছিল তার। আমি ফরিদপুরের মেয়ে, এটা শুনেই গল্প শুরু করেছিলেন। বাংলাদেশের রান্না-বান্না, মানুষজন, সবই থাকতো গল্পে।
টালি তারকা বলেন, মাধবীলতা আমার প্রথম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র বলা যায়। আগে এভাবে দায়িত্ব আসেনি। খুব যত্ন সহকারে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। এ কারণে চরিত্রের স্রষ্টার সঙ্গে কথা বলার আগ্রহও বেশি ছিল। তেমনই এক আলোচনায় সমরেশদা জানতে পারেন, আমি রসায়নের শিক্ষার্থী। পড়ালেখায় মন রয়েছে আমার। তখন তিনি জানতে চেয়েছিলেন, রসায়ন পড়ে হঠাৎ অভিনয়ে এলাম কেন?
অভিনেত্রী বলেন, তিনি বলেছিলেন, রসায়নের শিক্ষা ব্যবহার করেই কাজ করতে পারতাম আমি। তাকে বলেছিলাম, অভিনয়েও তো রসায়নের ধারণা থাকা দরকার। রসায়নের জ্ঞান তো কাজেই লাগে। আমার এ জবাবে বেশ মজা পেয়েছিলেন তিনি। পরে যখন দেখা হয়েছে, মাঝে মাঝেই আমার এই কথা উল্লেখ করতেন সমরেশদা।
এ নায়িকা বলেন, মাধবীলতা ভালোবাসার প্রতীক। বাঙালির চোখে আলাদাভাবে জায়গা করে নিয়েছে সেই চরিত্র। মাধবীলতা হওয়ার জন্য নানা চেষ্টা করেছি। শেষে যখন সিনেমাটি হলো, সমরেশদা সেটি দেখে অনেক প্রশংসা করেছিলেন আমার। বলেছিলেন, ‘আমার লেখার মাধবীলতা আর পর্দায় তোমার চরিত্রের মধ্যে কোনো পার্থক্য পাইনি। তুমি এটা কী করে করলে?’ সরাসরি লেখকের কাছ থেকে এ কথা শুনতে পাওয়া আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তির। এরপর শীর্ষেন্দুদা, সুনীলদার লেখা চরিত্রেও কাজ করেছি। তবে সমরেশদার সেই প্রশংসা আমাকে সবসময় সাহস জুগিয়েছে। সেই সিনেমা দেখে সমরেশদা আবার বলেছিলেন, রসায়ন সম্পর্কে তোমার বক্তব্য দারুণ ছিল।
পাওলি দাম বলেন, আমাদের মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক হয়েছিল। পরে অনেক সময় এমনিই গল্প করতে যেতে বলতেন। আমি তার বাড়ি, অফিসে গিয়েছি আগে। তবে করোনার পর আর দেখা হয়নি। করোনার সময় সবার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সমরেশদার সঙ্গে এমনটা হয়েছিল। একজন আরেকজনের বাড়ি যাওয়া-আসা সবারই যেমন কমে গেছে। তবে আর যে কখনো দেখাই হবে না, সেটি কখনো ভাবতে পারেননি বলেও জানান এ নায়িকা।
বিবার্তা/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]