শিরোনাম
শিক্ষাঙ্গনে চাই শুদ্ধি অভিযান
প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০১৭, ১৭:৩৭
শিক্ষাঙ্গনে চাই শুদ্ধি অভিযান
প্রিন্ট অ-অ+

কখনো কখনো এমন কিছু বিষয় সামনে চলে আসে, যা নিয়ে না বললেও চলে না, আবার বলতেও ঘেন্না লাগে। বলছিলাম আমাদের সাম্প্রতিক সামাজিক (পড়ুন অসামাজিক) প্রবণতার কথা। কিছু দিন আগেই রাজধানীর বনানী এলাকার এক হোটেলে ঘটে গেল চরম ন্যক্কারজনক এক অপঘটনা। এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ীর বখাটে পুত্র (পিতাটিও কি কম কম বখাটে?) এবং তার সাঙ্গপাঙ্গরা এক ছাত্রীকে ''জন্মদিনের'' অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়ে ওই হোটেলে নিয়ে তার সম্ভ্রম লুটে নেয়। ছাত্রীটি সাহস করে আইনের শরণ নেয়ায় (সেখানেও তাকে কম হ্যাপা পোহাতে হয়নি) এবং বিষয়টি নিয়ে মিডিয়ায় তোলপাড় শুরু হওয়ায় ওই ঘটনার হোতাদের ফাটকে ঢুকতে হয়েছে।


সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই একই এলাকায় একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো ক'দিন আগে। এখন সেটা নিয়ে মিডিয়ায় চলছে তোলপাড়। এঘটনার ''মহানায়ক'' বাবুটিও এক অর্ধশিক্ষিত ব্যবসাজীবী বখাটে। ঘরে স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও সে প্রথমে মেয়েটির সঙ্গে প্রেমের অভিনয় এবং পরে নিজ বাসায় ডেকে নিয়ে তার সম্ভ্রমহানি করে।


এ দু'টো ঘটনার হোতারা সন্দেহাতীতভাবে বখাটে। বখাটের কাছ থেকে কেউ সামাজিক আচরণ আশাও করে না (তাই বলে তারা নির্বিবাদে নারী ধর্ষণ করে চলবে, এটাও কাম্য নয়)। কিন্তু একজন ব্যক্তি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে বৃত হন তখন সবাই তার কাছ থেকে অলিখিতভাবেই কিছু সদাচরণ অবশ্যই আশা করে। যদিও একজন শিক্ষকও আমাদের সমাজেরই মানুষ, মহাপুরুষ নন। কিন্তু অন্যের বেলায় যা-ই হোক, শিক্ষকের কাছে মানুষ কিছুটা হলেও মহাপুরুষোচিত গুণ ও আচরণ আশা করে।


কী দুর্ভাগ্য, আমাদের এই সামান্য আশাটিও পূরণ হয় না। তার পরিবর্তে মিডিয়া আমাদের জানায়, নিজ বিভাগের একাধিক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মীর মোশারেফ হোসেনকে গত রবিবার চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এ ছাড়া নাট্যকলা বিভাগের আরেক ছাত্রীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগের অপর এক শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।


জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে মিডিয়া জানায়, ২০১৬ সালের ৫ এপ্রিল মীর মোশারেফ হোসেনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এক ছাত্রী। এ সময় তিনি মুঠোফোনে কথোপকথনের রেকর্ডসহ বিভিন্ন প্রমাণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে উপস্থাপন করেন। পরে ওই বিভাগের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের আরও কয়েকজন ছাত্রী তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেল এসব অভিযোগ তদন্ত করে সত্যতা পায়।


ভাবতেও কষ্ট হয়। যে দুই তরুণী জন্মদিনের অনুষ্ঠানে হোটেলে এবং লম্পট ''প্রেমিকের'' বাসায় আমন্ত্রণের উদ্দেশ্য বুঝতে না-পেরে তাদের পাতা ফাঁদে পা দিল, তাদের আমরা অনেক দুঃখ করে হলেও অভিযুক্ত করতে পারি, তোমরা ওখানে যাওয়ার আগে আরেকটু ভাবলে না কেন, তোমাদের কীভাবে ওখানে যাওয়ার অনুমতি দিলেন? ইত্যাদি। কিন্তু পবিত্র শিক্ষাঙ্গণের বেলায় এসব খোঁড়া যুক্তিও কি খাটবে? পিতৃতুল্য শিক্ষকদের কাছে সন্তানদের পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত থাকেন পিতা-মাতা-অভিভাবক। আমাদের সেই নির্ভরতার জায়গাটিও কি এবার হারাতে বসেছে?


কিন্তু যতো যা-ই হোক, এই পবিত্র স্থানটিকে আর নষ্ট হতে দেয়া যাবে না। এমনিতেই আমাদের শিক্ষাঙ্গণ নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। ছাত্রদের সশস্ত্র সংঘাত, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি আর তার পাশাপাশি শিক্ষকদের দলাদলি ও দলবাজি, কোচিংবাজি, ক্লাশে পাঠদানে তীব্র অনীহা - কতো অভিযোগ! এবার তার সাথে যুক্ত হলো সন্তানতুল্য ছাত্রীকে যৌন হয়রানি।


সরকার শিক্ষার মানোন্নয়নে যথাসাধ্য চেষ্টা চালাচ্ছে - একথা অতি বড় শত্রুও স্বীকার করবে। কিন্তু শুধু উন্নত কারিকুলাম প্রণয়নই যথেষ্ট বলে আমরা মনে করি না। ফাঁকিবাজ ও দুশ্চরিত্র শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের চিহ্নিত এবং শিক্ষাঙ্গন থেকে বিতাড়িত করতে হবে। এ কাজটি করতেই হবে। নইলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষাঙ্গন কলুষমুক্ত হবে না। এ জন্য শিক্ষাঙ্গনে শুদ্ধি অভিযান চালানো প্রয়োজন হলে তাও করতে হবে। এবং তা এখনই।


সামনে নির্বাচন। হাতে সময় বেশি নেই। একটি পরিশুদ্ধ শিক্ষাঙ্গন নিয়েই যেন আমরা নতুন নির্বাচন, নতুন দিনের দিকে পা বাড়াতে পারি - সেটাই হোক আমাদের আশু লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য অর্জনে শিক্ষাঙ্গনে চাই, আবারও বলি, একটি শুদ্ধি অভিযান।

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com