জোড়া খুনের মামলায় হত্যাকারীর জায়গায় আসামি স্কুল শিক্ষক
প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৪৯
জোড়া খুনের মামলায় হত্যাকারীর জায়গায় আসামি স্কুল শিক্ষক
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের বড়িকান্দিতে জোড়া খুনের মামলায় প্রকৃত হত্যাকারীর জায়গায় একজন স্কুল মাস্টার প্রধান আসামি করা হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে স্থানীয় জনমনে প্রশ্নও উঠেছে।


পুলিশ বলছে, মামলায় যাকেই প্রধান আসামি করা হোক, মামলার তদন্তে হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ততা পাওয়া না গেলে, কোনোভাবেই কাউকে অযথা হয়রানি করা হবেনা।


যদিও পালটাপালটি গোলাগুলির ঘটনায় চারজন হতাহতের দুটি মামলায় র‍্যাব ও পুলিশ ইতোমধ্যে দুজন এজাহারভুক্ত আসামিসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে।


গ্রেফতারকৃতরা হলেন- রিফাত বাহিনীর প্রধান রিফাত (৩০) ও তার সহযোগী লিমন (২৮), রুবেল (৪৫) ও রাশেদুল (৩৪)।


জানা গেছে, উপজেলার বড়িকান্দি গণি শাহ মাজার সংলগ্ন একটি রেস্টুরেন্টে গত ১ নভেম্বর (শনিবার) আনুমানিক রাত ৮টার দিকে অস্ত্রধারী একদল সন্ত্রাসী আকস্মিকভাবে হামলা চালায়। ওই সশস্ত্র সন্ত্রাসী হামলায় রেস্টুরেন্টে থাকা তিনজন গুলিবিদ্ধ হন। গুলিবিদ্ধরা হলেন শিপন (৩০), ইয়াছিন (২০) ও নূর আলম (১৮)।


এ ঘটনার পরপরই আরেকদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী গণিশাহ মাজারের অদূরে তালতলায় গিয়ে পালটা হামলা চালিয়ে এমরান হোসেন মাস্টার (৪২) নামের এক ব্যক্তির অফিস ভাঙচুরসহ তাকে গুলি করে।


স্হানীয় সূত্রে জানা যায়, গুলিবিদ্ধ এমরান মাস্টার ঢাকায় কর্মরত পুলিশের এক উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) বিল্লাল হোসেনের আপন ছোটভাই।


ওই পালটাপালটি গোলাগুলির ঘটনায় গুলিবিদ্ধ শিপন ও ইয়াছিন ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। তবে গুলিবিদ্ধ এমরান মাস্টার ঢাকায় এখনও চিকিৎসাধীন।


পুলিশ জানায়, গুলিতে নিহত শিপন এলাকায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও মাদক কারবারির সঙ্গে জড়িত ছিল। তার বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মাদক, চুরি, ডাকাতির মামলা রয়েছে। শিপনের স্থায়ী বাড়ি নূরজাহানপুর গ্রামে।


গুলিতে নিহত অপরজন ইয়াছিনের বাড়ি নবীনগর পৌরসভার আলমনগর গ্রামে। ইয়াছিন গণিশাহ মাজারের ওই রেস্টুরেন্টে দোকান কর্মচারী হিসেবে কাজ করতো বলে পুলিশ জানায়।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পালটাপালটি এ সশস্ত্র হামলার ঘটনায় গত ৫ নভেম্বর থানায় এ নিয়ে দুটি মামলা হয়। একটি মামলার বাদী হন নিহত শিপনের মা।


এই হত্যা মামলায় গুলিবিদ্ধ এমরান হোসেন মাস্টারকে প্রধান আসামি করা হয়। এছাড়া মামলাটিতে ১১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ১০/১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।


অপর মামলাটির বাদী হয়েছেন বর্তমানে ঢাকায় চিকিৎসাধীন গুলিবিদ্ধ এমরান হোসেন মাস্টারের চাচাতো ভাই হাসিবুর রহমান।


এই মামলায় নিহত শিপনের বাবা মোন্নাফ মিয়া ওরফে মনেক ডাকাতকে প্রধান আসামি করা হয়। মামলায় ২৫ জনের নাম উল্লেখসহ ৬০/৭০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।


মনেক ডাকাতের বিরুদ্ধে থানায় ২০টিরও বেশি মামলা আছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা যায়।


শিপনের মায়ের দায়ের করা হত্যা মামলাটিতে প্রকৃত হত্যাকারীকে বাদ দিয়ে ঢাকায় চিকিৎসাধীন গুলিবিদ্ধ এমরান মাস্টারকে প্রধান আসামি অভিযোগ উঠায়। এ নিয়ে স্থানীয় জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।


নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার একাধিক ব্যক্তি বলেন, ঘটনার রাতে শিপনের সহযোগী রিফাত বাহিনীর প্রধান রিফাতই তার দলবল নিয়ে শিপনকে গুলি করেছে, এটি এখন সকলের মুখে মুখে। অথচ হত্যা মামলাটিতে সেই অস্ত্রধারী রিফাতকে আসামিই করা হয়নি। বরং ভিলেজ পলিটিক্সের কারণে এমরান মাস্টারকে করা হল হত্যা মামলার প্রধান আসামি। যা খুবই দুঃখজনক।


এদিকে হত্যা মামলার এজাহারে দেখা যায়, মামলাটিতে রিফাতের নাম না থাকলেও ৩ নম্বর আসামি করা হয়েছে তার ভাই আরাফাতকে।


এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় নবীনগর থানার ওসি শাহীনূর ইসলাম বলেন, রিফাতের নাম মামলায় না থাকলেও প্রাথমিক তদন্তে ইতোমধ্যে এ হত্যার সঙ্গে রিফাত ও গ্রেপ্তার হওয়া অন্যদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। তবে, মামলায় বাদী কাকে আসামি করবেন এটি বাদীর নিজস্ব এখতিয়ার। এখানে পুলিশের কিছু বলার নেই।


ওসি আরো জানান, মামলায় যাকেই আসামি করা হোক না কেন। মামলার তদন্তে হত্যার সঙ্গে কোনো আসামির সম্পৃক্ততা পাওয়া না গেলে, কোনোভাবেই কাউকে কখনও হয়রানি করা হবে না। সুষ্ঠু তদন্তের ভিত্তিতে যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে। চূড়ান্ত চার্জশিটে কেবল তাদের নামই সংযুক্ত করে আদালতে যথাসময়ে সেটি জমা দেওয়া হবে।
বিবার্তা/নিয়ামুল/এমবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com