উদ্ধার ও গ্রেফতারে ৯ মাসে রেকর্ড গড়ল কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ
প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ১৬:০১
উদ্ধার ও গ্রেফতারে ৯ মাসে রেকর্ড গড়ল কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

বাংলাদেশ ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়ন দেশের প্রধান পর্যটন নগরী কক্সবাজারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, পর্যটক নিরাপত্তা ও মানবিক সেবায় অসাধারণ ভূমিকা রেখে চলেছে। চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত ট্যুরিস্ট পুলিশের কার্যক্রমে অর্জিত সাফল্য নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। গত ৯ মাসে ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়ন ৩৪ জন ছিনতাইকারী, ৪৪ জন ভাসমান অপরাধী, ১০ জন ইভটিজার এবং ৩ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে।


এছাড়া ১৬৭ জন হারিয়ে যাওয়া শিশুকে উদ্ধার করে পরিবারে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে ২৮টি মোবাইল ফোন, ২০ জনের মৃতদেহ এবং ১৫ জন জীবিত ব্যক্তি।আবার গত এক বছরে ট্যুরিস্ট পুলিশ ১৮১টি সিআর মামলার মধ্যে ১৪০টি নিষ্পত্তি করেছে এবং ৪১টি মামলার কার্যক্রম চলমান। একই সময়ে ১৬টি জিআর মামলার মধ্যে ১১টি নিষ্পত্তি হয়েছে (সিএস ৭টি ও এফআরটি ৪টি) এবং ৫টি মামলা এখনো বিচারাধীন।


এদিকে কক্সবাজার রিজিয়নের উল্লেখযোগ্য উদ্ধার ও মানবিক উদ্যোগগুলোর মধ্যে রয়েছে- ছিনতাইয়ের ঘটনায় পর্যটকের হারানো নগদ ১০,৫০০ টাকা ও আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্স উদ্ধার করে জড়িত ৫ আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতে স্বীকারোক্তি প্রদান, রাশিয়ান পর্যটক মিস মনিকা কবির-এর হারানো ব্যাগ ২ দিনের মধ্যে উদ্ধার করে ফেরত, ১৭টি পর্যটক হয়রানির ঘটনায় ক্যামেরা জব্দ ও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, মিথ্যা অপহরণের নাটক সাজিয়ে অর্থ আদায়ের চেষ্টাকারী ১ জনকে আটক, প্রেমিক যুগল, হারিয়ে যাওয়া অন্ধ শিশু ও প্রতারণার শিকার নারীসহ একাধিক ভিকটিমকে উদ্ধার করে পরিবারের নিকট হস্তান্তর, পর্যটকের গোসলের ভিডিও ধারণ করে টিকটকে ছড়ানো এক ব্যক্তিকে আটক, লাইট হাউজ এলাকায় অসামাজিক কার্যক্রম রোধে অভিযান চালিয়ে সুড়ঙ্গপথসহ ১৩ জন নারী-পুরুষকে আটক, সমুদ্র সৈকতে পঁচা মাছ বিক্রির দোকান, স্পা সেন্টার, কবিতা চত্বর ও বিচ এলাকায় অসামাজিক কার্যক্রমবিরোধী অভিযান পরিচালনা, মারমেইড বীচ রিসোর্টের বেআইনি সম্প্রসারণ উচ্ছেদ, বিচ ক্লিনিং কর্মসূচি এবং সৈকতে বিন সরবরাহসহ পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন, জার্মান পর্যটককে টিউবওয়েলের পানি দেওয়ায় মিশুক হোটেলের কর্মীকে আটক, পর্যটক হয়রানির অভিযোগে একাধিক ক্যামেরাম্যান ও কফি বিক্রেতা আটক, ১৯০ পিস ইয়াবাসহ তিনজন আসামি গ্রেফতার করে মামলা রুজু এবং কক্সবাজারের জিনিয়া ও কক্স ভ্যালি হোটেলের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগে ব্যবস্থা গ্রহণ।


পর্যটন সেবায় অসাধারণ অবদান রাখার জন্য কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের দুই নারী সদস্য “উইমেন ট্যুরিজম লিডার অ্যাওয়ার্ড” লাভ করেছেন। এছাড়া ট্যুরিস্ট পুলিশ সার্ভিস সেন্টার স্থাপন এবং পর্যটকদের সেবায় ১০টি হুইলচেয়ার প্রদানসহ সেবামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের এই ধারাবাহিক সাফল্য প্রমাণ করে- তারা শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাই নয়, বরং মানবিক ও নিরাপদ পর্যটন গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে।


পর্যটননগরীর ভাবমূর্তি রক্ষায় তাদের এই নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্ব দেশজুড়ে প্রশংসা কুড়িয়েছে বলে জানান পর্যটক ও স্থানীয়রা। ঢাকার পর্যটক লায়লা রহমান বলেন, আগে সৈকতে সন্ধ্যার পর বের হতে ভয় লাগতো, এখন দেখি পুলিশ টহল দেয়, সাহায্য করে- এতে কক্সবাজারে আসা অনেক বেশি নিরাপদ মনে হয়।চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাকিবুল হক বলেন, আমার এক বন্ধু মোবাইল হারিয়ে ফেলেছিল, ট্যুরিস্ট পুলিশ আধঘণ্টার মধ্যে সেটি উদ্ধার করে দেয়। তাদের তৎপরতা সত্যিই অবাক করার মতো।স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, ট্যুরিস্ট পুলিশের কারণে এখন আমাদের এলাকাটা অনেক শান্ত।


পর্যটকরাও নির্ভয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, এতে ব্যবসাও ভালো হচ্ছে। কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, পর্যটকবান্ধব কক্সবাজার গড়ে তোলা আমাদের অঙ্গীকার। ট্যুরিস্ট পুলিশ শুধু আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে নয়— সচেতনতা বৃদ্ধি, সহযোগিতা, নৈতিকতা ও মানবিকতার সমন্বয়ে একটি নিরাপত্তা সংস্কৃতি তৈরিতে কাজ করছে। পর্যটক যেন ভয়হীনভাবে ঘুরে বেড়াতে পারে, সংকটে সাহায্য পায়— সেটিই আজ ট্যুরিস্ট পুলিশের মূল লক্ষ্য।তিনি আরও বলেন, কক্সবাজার এখন আন্তর্জাতিকমানের পর্যটনগন্তব্য। এখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থার মানও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে গড়ে তোলা হচ্ছে।


জনগণের আস্থা অর্জনই আমাদের সবচেয়ে বড় সফলতা। পর্যটন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, কক্সবাজারে ট্যুরিস্ট পুলিশের সাফল্য শুধু অপরাধ দমনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; তারা এখন একটি মানবিক, আধুনিক ও সেবামুখী পুলিশিং মডেল তৈরি করেছে। হারানো শিশু উদ্ধার করা থেকে শুরু করে বিদেশি পর্যটকদের সহায়তা, সব ক্ষেত্রেই তাদের সাড়া-প্রদান দ্রুত ও কার্যকর। ট্যুরিস্ট পুলিশের উপস্থিতি সৈকত, হোটেল ও পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তাবোধ বাড়িয়েছে। এর ফলে পর্যটকদের আস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে, পর্যটন ব্যবসাও গতিশীল হয়েছে।


বিবার্তা/ফরহাদ/এমবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com