
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে গৃহবধূ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত শ্বশুর ও শাশুড়িকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৯।
মামলার বিবরণে জানা যায় যে, ভিকটিম ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার ভুইস্বর এলাকার ফারুক মিয়ার মেয়ে। বিগত ৪ বছর পূর্বে ১নং বিবাদীর সঙ্গে ভিকটিমের বিবাহ বন্ধনের কিছুদিন পর থেকে ভিকটিমকে তার স্বামীর পছন্দ হয়নি বলে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি হয়। দাম্পত্য কলহের কারণে ১নং বিবাদী প্রায় সময় ভিকটিমের সাথে আর সংসার করবে না বলে ১ নং বিবাদীসহ অন্যান্য বিবাদীরা ভিকটিমের উপর বিভিন্নভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত। এই বিষয়ে একাধিকবার স্থানীয় শালিস বৈঠক হলেও কোন সমাধান হয়নি। কিন্তু ভিকটিমের ১টি পূত্র সন্তান থাকায় তার সন্তানের কথা চিন্তা করে নির্যাতন সহ্য করেও সংসার করে আসছিল।
পরবর্তীতে ১নং বিবাদী বিদেশ যাওয়ার জন্য তার শ্বশুরের নিকট ৬ লক্ষ টাকা সহযোগিতা চাইলে তার শ্বশুর তার মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে ৩ লক্ষ টাকা প্রদান করে এবং ৩ লক্ষ টাকা আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে দিতে পারেনি। কিন্তু ১নং বিবাদীসহ অন্যান্য বিবাদীরা ভিকটিমের বাবার আর্থিক অসচ্ছলতার কথা
বিবেচনা না করে আরও ৩ লক্ষ টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। অতঃপর ভিকটিমের বাবা টাকা দিতে না পারায় তারা প্রতিনিয়ত ভিকটিমের সাথে অশোভন আচরনসহ তাকে বিভিন্ন ভাবে মানসিক ও শারিরীক নির্যাতন করত। গত ২২/১০/২৫ ইং তারিখ রাতে ভিকটিম তার বাবাকে মোবাইল ফোনে জানায় যে, তার স্বামী তাকে বিদেশ যাওয়ার জন্য আরও ৩ লক্ষ টাকা আর্থিক সহযোগিতা না করলে ভিকটিমকে তালাক প্রদান
করবে।
পরের দিন গত ২৩/১০/২০২৫ ইং তারিখ ভোর রাত আনুমানিক ৪.৩০ ঘটিকার সময় গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে ভিকটিমের বাবা তার মেয়ের মৃত্যুর সংবাদ পায়। উক্ত সংবাদ পেয়ে ভিকটিমের বাবা তার মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে ভিকটিমের বসত ঘরের দক্ষিণ পার্শ্বে তার নিজ শয়ন কক্ষের বাঁশের আড়ার সাথে গায়ের ওড়না দ্বারা গলায় ফাঁস লাগানো ঝুলন্ত অবস্থায় মৃতদেহ দেখতে পায়। এ সময়ে বিবাদীরা বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। ভিকটিমের বাবার ধারণা তার মেয়ের স্বামীর দাবীকৃত বাকি ৩ লক্ষ টাকা আর্থিক সহযোগিতা না করায় ১নং বিবাদীসহ অন্যান্য বিবাদীরা পরিকল্পিতভাবে তার মেয়েকে হত্যা করে ঘরের আড়ার সাথে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রেখেছে।
অতঃপর ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
উক্ত ঘটনায় বাহ্মণবাড়িয়াসহ সারা দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এরই প্রেক্ষিতে আসামিদের আইনের আওতায় আনতে র্যাব-৯ এই ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করে।
এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৯, সিপিসি-১, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি যৌথ আভিযানিক দল সোমবার (৩ নভেম্বর) আনুমানিক সকাল ৮.৩০ ঘটিকার সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সদর উপজেলার শালগাঁও অভিযান পরিচালনা করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল থানায় মামলা নং- ২৬; এর মূলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে গৃহবধূ
হত্যা মামলায় অভিযুক্ত শ্বশুর ও শাশুড়িকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে।
গ্রেফতারকৃত আসামিরা হলেন - আবুল মিয়া (৬৫), পিতা- মৃত কদু মিয়া এবং নাজমা বেগম (৩৫), স্বামী- আবুল মিয়া, উভয় ভুইস্বর, সরাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
র্যাব-৯, সিপিসি-১, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এতথ্য নিশ্চিত করে জানানো হয়।
পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদেরকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়াও দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে উক্ত মামলার অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে র্যাব-৯ এর চলমান গোয়েন্দা তৎপরতা ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
বিবার্তা/আকঞ্জি/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]