ঘুষ না পেয়ে আদালতে ভূয়া প্রতিবেদন দাখিলের অভিযোগ দুই ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে
প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৫:১০
ঘুষ না পেয়ে আদালতে ভূয়া প্রতিবেদন দাখিলের অভিযোগ দুই ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

চাহিদামতো দুই লাখ টাকা ঘুষ না পেয়ে কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আদালতে এম আর মামলার মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। এমন গুরুতর অভিযোগ উঠেছে রামু উপজেলার ধেচুয়াপালং ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহসিলদার) সলিম উল্লাহ ও উপজেলা ভূমি অফিসের কানুনগো মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে।


এই ঘটনায় ভুক্তভোগী সাইফুল আজিম বাদী হয়ে গত ২২ অক্টোবর কক্সবাজার জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনার ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।


নথিপত্র পর্যালোচনায় জানা যায়, সাইফুল আজিম রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়নের দারিয়ারদিঘি মৌজার বিএস ১৯৮ নং খতিয়ানভুক্ত মোট ০.৪৫৬৭ একর (৪৫.৬৭ শতক) জমি তিনটি দলিলের মাধ্যমে ক্রয় করে ৬১৯, ৮৫৭ ও ১০১২ নং নামজারী খতিয়ান সৃজন করেন।


তবে স্থানীয় এক চিহ্নিত ভূমিদস্যু তাহের আহমদ গং, তহসিলদার সলিম উল্লাহর ছত্রছায়ায় ওই জমি জবরদখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছে বলে অভিযোগ করেন সাইফুল আজিম। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে তিনি এডিএম আদালতে এম আর মামলা (নং-৩৮০/২০২৫) দায়ের করেন।


ভুক্তভোগীর অভিযোগ, আদালতের নির্দেশে জমির বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের দায়িত্ব পান তহসিলদার সলিম উল্লাহ। কিন্তু তিনি তদন্তে না গিয়ে ঘুষ দাবি করতে থাকেন। প্রথমে তার সহকারী সোহেলের মাধ্যমে সাইফুল আজিমকে ২০ হাজার টাকা দিতে বলা হয়, যা তিনি পরিশোধ করেন।


এরপরও তহসিলদার সলিম উল্লাহ তাকে জানান, প্রতিবেদন দিতে হলে নগদ দুই লাখ টাকা দিতে হবে। টাকা আমি একা খাবো না; কানুনগো, সার্ভেয়ার ও এসিল্যান্ড সবাইকে ভাগ দিতে হবে। সাইফুল আজিম টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে, তহসিলদার তাকে মিথ্যা মামলায় জড়ানোর হুমকি দেন।


অভিযোগে বলা হয়, পরবর্তীতে প্রতিপক্ষ ভূমিদস্যু তাহের গংয়ের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়ে তিনি ভুক্তভোগীর বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল করেন।


ভুক্তভোগী দাবি করেন, তহসিলদার সলিম উল্লাহ ও কানুনগো মাহবুবুর রহমানের দাখিল করা প্রতিবেদনে তার ক্রয়কৃত জমি ভুমিদস্যু তাহের গংয়ের দখলে আছে বলে উল্লেখ করা হয়। এমনকি তার নিজের জমিতে থাকা দুটি পাকা ভবনের কথাও প্রতিবেদনে ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দেওয়া হয়।


এরপর এসিল্যান্ড জাহিদ সাজ্জাদ রাতুল ওই প্রতিবেদনটি যাচাই-বাছাই ছাড়াই এডিএম আদালতে প্রেরণ করেন (স্মারক নং-৫৭৪/২৫, তারিখ: ০৪/০৯/২০২৫)।


ভুক্তভোগী সাইফুল আজিম বলেন, আমি আমার সব দলিল, খতিয়ান ও নথি তহসিলদারের কাছে জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু তার দাবিকৃত ঘুষ না দেওয়ায় আমার বিপক্ষে ভুয়া প্রতিবেদন তৈরি করেছে। তার মতো ঘুষখোর কর্মকর্তার কারণে অনেক মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে।


তিনি আরও বলেন, ২০ হাজার টাকা ফেরত চাইতে গেলে তিনি উল্টো মিথ্যা মামলার ভয় দেখান। বলেন, এই টাকা আমি একা খাই না, কানুনগো-এসিল্যান্ডকেও দিতে হয়।


স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ধেচুয়াপালং ইউনিয়ন ভূমি অফিসে সলিম উল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোনো কাজ হয় না। নিয়মিত অফিস করেন না তিনি; রাতে এসে ঘুষের বিনিময়ে নথি জালিয়াতি, খতিয়ান সৃজন ও অবৈধ নামজারির কাজ সম্পন্ন করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।


অফিসের উমেদারদের মাধ্যমেই ঘুষের টাকা বিকাশ ও নগদে আদায় করা হয়। সরকারি কোনো পদে না থেকেও এসব উমেদাররা নিয়মিত অফিস করেন সরকারি কর্মকর্তার মতো।


অভিযোগের বিষয়ে জানতে তহসিলদার সলিম উল্লাহর মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। একইভাবে কানুনগো মাহবুবুর রহমানের ফোনেও বারবার কল করলেও কোনো সাড়া মেলেনি।


স্থানীয় সূত্রের দাবি, তহসিলদার সলিম উল্লাহ কক্সবাজারের ঈদগাঁও এলাকার সাবেক প্রভাবশালী সচিব হেলাল উদ্দিনের আত্মীয়। তার প্রভাব খাটিয়ে তিনি একের পর এক দুর্নীতি, ঘুষ লেনদেন, দলিল জালিয়াতিসহ নানা অনিয়ম করে কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুলেছেন।


বিভিন্ন গণমাধ্যমে তার বিরুদ্ধে একাধিকবার সংবাদ প্রকাশ হলেও প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে তিনি বারবার রক্ষা পেয়েছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।


রামু উপজেলার সচেতন নাগরিক ও ভুক্তভোগীরা বলেন, এই ঘুষখোর তহসিলদার সলিম উল্লাহর কারণে এলাকার সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে আছে। প্রশাসনের কাছে দাবি-দুর্নীতির গভীর তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।


বিবার্তা/ফরহাদ/এমবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com