স্ত্রীর পরকীয়ার জেরে স্বামীকে হত্যা, রহস্য উন্মোচন পিবিআইর
প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৪:৪৪
স্ত্রীর পরকীয়ার জেরে স্বামীকে হত্যা, রহস্য উন্মোচন পিবিআইর
হিলি (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

স্ত্রী পরকীয়ায় লিপ্ত ছিল, এ নিয়ে পরিবারে কলহ ও অসন্তোষের জের ধরে বাবার বাড়িতে অবস্থান করছিল স্ত্রী। তাকে ফিরিয়ে আনতে গিয়ে শ্যালক কর্তৃক দুলাভাইকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে।


হত্যার ঘটনাকে ধামাচাপা দিয়ে সেটিকে ইঁদুর মারার বিষ খেয়ে আত্মহত্যা বলে প্রচার করে স্ত্রী, শ্বশুর ও শাশুড়ি। অবশেষে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এর তদন্তে উদ্‌ঘাটিত হয়েছে রহস্য। হত্যার ঘটনায় ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।


মঙ্গলবার ২৯ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৪টায় পিবিআই দিনাজপুর জেলা কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান এ্যাডিশনাল জিআইজি মাহফুজ্জামান আশরাফ।


এসময় তিনি বলেন, ২৫ এপ্রিল দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার ডাকেশ্বরী গ্রামে শ্বশুর বাড়িতে মারা যায় ঠাকুরগাঁও জেলার সদর উপজেলার কচুবাড়ি কেয়ারীগাঁও এলাকার বিমল দাসের ছেলে প্রাণ দাস (২৫)। ওই দিনই নিহতের শাশুড়ি জোসনা রানী বীরগঞ্জ থানায় হাজির হয়ে তার জামাই প্রাণ দাস ইঁদুর মারার বিষয় খেয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে ইউডি মামলা দায়ের করেন। পরে নিহতের মরদেহের ময়না তদন্ত হয়।


ঘটনার ৩ মাস পর ৩১ জুলাই নিহতের মা সারতী রানী দাস দিনাজপুর পিবিআই কার্যালয়ে এসে ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে বলে তদন্ত কামনা করেন। এরই প্রেক্ষিতে পিবিআই দিনাজপুর কার্যালয়ের এসআই মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে সেই ইউডির ছায়া তদন্ত শুরু করা হয়। ছায়া তদন্তে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ও প্রমাণাদি সংগ্রহ করে পিবিআই জানতে পারে প্রাণ দাসকে নিশ্চিত হত্যা করা হয়েছে। এটি কোন বিষ খাওয়ার ঘটনা না, আসামিরা নিজেরা বাঁচার জন্য এটা সাজিয়েছে এবং আত্মহত্যা বলে প্রচার করেছে।


এই ঘটনায় পিবিআই জিজ্ঞাসাবাদ করলে এক পর্যায়ে আসামিরা হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে। পরে ২০ অক্টোবর নিহতের মা সারতী রানী দাস ৪ জনকে আসামি করে বীরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করলে পুলিশ নিহতের স্ত্রী পূজা রানী দাস (১৯), শ্যালক দিপু রায় (২২), শাশুড়ি জোসনা রানী (৪৫) ও শ্বশুর নিপেন্দ্র নাথ রায় (৫০ কে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করে। পরে পিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালতের অনুমতিক্রমে নিহতের স্ত্রী পূজা রানী দাস ও শ্যালক দিপু রায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।


জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায় যে,পূজা রানী দাসের পরকীয়ার কারণে সৃষ্ট কলহ ও অসন্তোষের জের ধরে পরিকল্পিতভাবে প্রাণ দাসকে হত্যা করা হয়েছে। আসামী দিপু রায়ের স্বীকারোক্তি মোতাবেক তার শয়ন ঘর থেকে ইট তৈরির ফার্মা এবং খাট জব্দ করা হয়। একই দিনে দিপু রায় বিজ্ঞ আদালতে স্বেচ্ছায় স্বপ্রণোদিত হয়ে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।


পিবিআইয়ের এই কর্মকর্তা জানান, স্ত্রী পূজা রানী দাসের পরকীয়ার কথা জানতে পারে স্বামী প্রাণ দাস। এ নিয়ে কলহ সৃষ্টি হলে স্ত্রী পূজা রানী বাবার বাড়িতে চলে যায়। পরে স্বামী শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনতে চাইলে শ্বশুর, শ্বাশুড়ি ও শ্যালক বাধা দেয়। এ নিয়ে বিবাদে ৩ দিন না খেয়েছিল প্রাণ দাস। ঘটনার দিন প্রাণ দাসকে নিজ ঘরে নিয়ে ভিতরে নেয় শ্যালক দিপু রায় এবং সেখানে তারা গাঁজা সেবন করে। এ সময় প্রাণ দাস ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলে পিছন থেকে ধাক্কা দেয় শ্যালক দিপু রায়। এতে প্রাণ দাস পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয় এবং ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করে। এই ঘটনাকে ধামা চাপা দিতে প্রাণ দাসের পকেটে ইঁদুর মারার বিষ ঢুকিয়ে দেয় পরিবারের লোকজন। পরে তারা সেটিকে আত্মহত্যা বলে প্রচার করে এবং থানায় গিয়ে ইউডি মামলা দায়ের করে।


বিবার্তা/রব্বানী /এমবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com