
নতুন দিগন্তে প্রবেশ করছে পর্যটন নগরী কক্সবাজার। শিগগিরই চালু হচ্ছে কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এরই মধ্যে মিলেছে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্বীকৃতি।
এর মধ্য দিয়ে পর্যটনের পাশাপাশি অর্থনীতি, যোগাযোগ ও বৈদেশিক সংযোগেও উন্মোচন হতে যাচ্ছে নতুন দিগন্ত। তবে টার্মিনাল ভবনের নিচতলার অ্যারাইভাল অংশ পুরো প্রস্তুত হলেও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বাস্তব প্রস্তুতি কতটা তা নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। কক্সবাজার বিমানবন্দরের পরিচালক গোলাম মোর্তজা হাসান জানান, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের পর চতুর্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে যুক্ত হয়েছে কক্সবাজার। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকেই চলছে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। এখন শিডিউল ঘোষণা হলেই ফ্লাইট পরিচালনা করা সম্ভব হবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, আন্তর্জাতিক টার্মিনাল ভবনের নিচতলার অ্যারাইভাল অংশ পুরোপুরি প্রস্তুত। এছাড়া ইমিগ্রেশন, কাস্টমস, ব্যাংকের কালেকশন বুথ, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় বুথসহ প্রবাসী কল্যাণ ও তথ্যকেন্দ্র স্থাপনের কাজও শেষ। পাশাপাশি প্রস্তুত করা হয়েছে আধুনিক লাগেজ স্ক্যানার মেশিন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা বা ফ্লাইট শিডিউল ঘোষণার পর দ্রুত সময়ের মধ্যে যুক্ত হবে প্রয়োজনীয় জনবল।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সূত্রে জানা গেছে, প্রথম পর্যায়ে কক্সবাজার-ঢাকা-কলকাতা-কক্সবাজার রুটে সপ্তাহে একটি ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। পরবর্তীতে যাত্রী চাহিদা বিবেচনায় ধাপে ধাপে বাড়তে পারে ফ্লাইট সংখ্যা। কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্টোগ্রাফার মো. আব্দুস সোবহান জানান, প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক, হেলথ ডেস্ক, ইমিগ্রেশন ডেস্ক প্রস্তুত হয়ে গেছে। বাকি এখন ফ্লাইট এ্যপ্রুভ হলে নামতে পারবে। মোটামুটি এটি অ্যারাইভালের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেছে।
রানওয়ের কাজ মোটামুটি ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গেছে। প্রজেক্টের যা সময় আছে এর মধ্যেই হয়তো বাকিটুকু শেষ হয়ে যাবে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, ঝিনুক আকৃতির দৃষ্টিনন্দন টার্মিনাল ভবনের কাজ শেষ হয়েছে প্রায় ৮৬ শতাংশ। বর্তমান ৯ হাজার ফুট দৈর্ঘ্যরে রানওয়ে, সাগরের বুকে আরো ১ হাজার ৭০০ ফুট সম্প্রসারণের কাজও শেষ প্রায় ৮৪ শতাংশ। শিগগিরই এটি হতে যাচ্ছে দেশের দীর্ঘতম রানওয়ে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খুব শিগগিরই এই রানওয়ে থেকে আকাশে উড়বে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। যা বদলে দেবে এই শহরের আকাশপথের ইতিহাস। কক্সবাজার তখন শুধু অবকাশ-যাপন নয়, হবে আন্তর্জাতিক সংযোগের নতুন কেন্দ্র। ব্যবসায়ী আকতার জানান, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের শহর কক্সবাজারে সরাসরি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হলে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে। যার প্রভাব পড়বে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা-বাণিজ্যে।
বাংলাদেশের সামুদ্রিক মাছ বিভিন্ন দেশে যায়। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হলে আমরা সরাসরি কক্সবাজার থেকেই এগুলো বাইরের দেশে পাঠাতে পারবো। কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী জানান, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সঙ্গে শুধু অবকাঠামো নয়, এর সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের কানেক্টিভিটিও সম্পৃক্ত। এখানে যারা বিদেশ থেকে আসবেন তাদের জন্য ওয়েলকামিং পরিবেশ তৈরি করা দরকার।
এগুলো না করে চালু করলে আমার মনে হয় প্রথম দর্শনে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। প্রকৃত আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছাতে বিমানবন্দর ও শহরকে সাজাতে হবে বিদেশি পর্যটকদের উপযোগী করে।
বেবিচকের তথ্যানুযায়ী, চলমান ৩ প্রকল্পের মধ্যে কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ২ হাজার ১৫ কোটি টাকা, রানওয়ে সম্প্রসারণে ৩ হাজার ৭০৯ কোটি আর টার্মিনাল ভবন নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ২৭৭ কোটি টাকা।
বিবার্তা/ফরহাদ/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]