
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের দোতলার বারান্দায় বিছানায় মেয়ে। তার পাশে বসে কাঁদছেন মা। ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ করতে থানায় গেলে উল্টো ভুক্তভোগীর বাবা, চাচা ও ভাইকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। এমনটিই অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার। এমনকি আসামী আশিকুজ্জামান মানিক (৪৫) বিএনপির নেতা হওয়ায় তাদের বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তারা। ঘটনাটি পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মানিক। বোদা থানায় এ ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। একটি মামলার বাদী আশিকুজ্জামান মানিক নিজে। তিনি বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য। আর অপর মামলাটি করেছেন ধর্ষণ চেষ্টার শিকার দাবি করা শিশুটির পরিবার।
১২ বছরের ওই শিশুটির পরিবারের অভিযোগ সোমবার দুপুরে প্রতিবেশি মানিকের বাড়িতে তার মেয়েদের সাথে টিভি দেখতে যায় চতুর্থ শ্রেণি পড়ুয়া শিশুটি। ফেরার সময় বাড়ির চিপাগলিতে কেউ না থাকার সুযোগে তার মুখ চেপে ধর্ষণের চেষ্টা করে মানিক। শিশুটি কোনমতে ছুটে বাড়ি গিয়ে তার মাকে বিষয়টি জানায়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে তাকে ধরে নিয়ে যায়। এদিকে রাতে থানায় অভিযোগ করতে গেলে বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের লোকজন শিশুটির পরিবারের সদস্যদের হাত থেকে অভিযোগের কাগজটি নিয়ে ছিড়ে ফেলে বলেও দাবি করেন তারা। মামলার এজাহার জমা দিতে গিয়ে উল্টো আটক হন শিশুটির বাবা, ভাই ও চাচা। মঙ্গলবার তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। শিশুটিকে প্রথমে বোদা উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্স ও পরে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
শিশুটির মা বলেন, আমার মেয়ের উপর নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে থানায় গেলে উল্টো পুলিশ আমার ছেলে, স্বামী ও তার ভাইকে গ্রেপ্তার করেছে। বিএনপি নেতাকর্মীরা সবার সামনে আমাদের অভিযোগ ছিড়ে ফেলেছে। আমাদের হুমকি ধামকি দিচ্চে। আমি কি আমার মেয়ের উপর নির্যাতনের ন্যায়বিচার পাবো না?
অন্যদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে আশিকুজ্জামান মানিক দাবি করেন পূর্ব শত্রুতার জেরে তার উপর হামলা করা হয়েছে। এমনকি তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ঘটনার দিন টিভি বন্ধ করে দিয়ে ঘাস কাটতে গেলে পূর্ব শত্রুতার জেরে আসামীরা তাকে ধরে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে অমানবিকভাবে মারধর করে। এমনকি তার স্ত্রী সন্তানদের উপরেও হামলা করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
আশিকুজ্জামান মানিক বলেন, তারা আওয়ামীলীগের সময়ে মানুষের জমি দখল করে ছিলো। সরকার পতনের পর এলাকার মানুষকে নিয়ে সেই যদি উদ্ধার করে দেয়া হয়। এ কারণে তারা আমার উপর ক্ষুব্ধ ছিলো। আমাকে পরিকল্পিতভাবে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে মারধর করেছে। আমি এখন রংপুরে চিকিৎসাধীন। আমার একটা চোখ নষ্টের পথে। আমার উপর নির্যাতন দেখে স্থানীয়রা ৯৯৯ ফোন দেয়। পরে পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি আমার নামে মিথ্যে অভিযোগ করা হচ্ছে। আমার উপর হামলার বিচার চাই আমি।
বোদা থানার ওসি আজিম উদ্দিন বলেন, পূর্ব শত্রুতার জেরে মব সৃষ্টি করে মানিককে মারধর করে আধমরা করা হয়। ৯৯৯ ফোন করে স্থানীয়রা সহায়তা চাইলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। আগে মানিক মামলা করেছে। পরে শিশুটির বাবাসহ তিনজন ধর্ষণ চেষ্টার মামলা করতে আসলে তাদের মামলটিও নেয়া হয়। কিন্তু তারা যেহেতু আসামী তাই আমরা তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখানে মামলার এজাহার ছেড়ার কোন ঘটনা ঘটে নি।
বিবার্তা/গোফরান/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]