যানজটে হাঁসফাঁস কক্সবাজার: নেপথ্যে বাস-সিএনজি পার্কিং ও টমটম
প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৩:৩১
যানজটে হাঁসফাঁস কক্সবাজার: নেপথ্যে বাস-সিএনজি পার্কিং ও টমটম
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত নিয়ে গড়ে ওঠা কক্সবাজারকে বলা হয় দেশের প্রধান পর্যটন নগরী। তবে এই নগরী এখন পরিচিত হয়ে উঠেছে যানজটের শহর হিসেবে। শহরের প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে গলিপথ, সর্বত্র যানজট এখন নিত্যদিনের সঙ্গী। বিশেষ করে পর্যটন মৌসুমে পরিস্থিতি অসহনীয় রূপ ধারণ করছে। যত্রতত্র অবৈধ পার্কিং, অকার্যকর বাস টার্মিনাল, অনুমোদনহীন অটোরিকশা-সিএনজি এবং ফুটপাত দখল এর মূল কারণ।


সরেজমিন দেখা যায়, কলাতলী ডলফিন মোড় থেকে শহরের বাস টার্মিনাল পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিন লেগে থাকে দীর্ঘ যানজট। সড়কের পাশে অবৈধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা বাস ও পর্যটকবাহী গাড়ির কারণে যান চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। হোটেল-মোটেল জোনে গড়ে উঠেছে প্রায় অর্ধশত বাস কাউন্টার, যার বেশিরভাগই অনুমোদনবিহীন। যাত্রীদের জন্য কোনো বসার ব্যবস্থা না থাকায় রাস্তার ওপরেই ওঠানামা করতে হচ্ছে।


ফুটপাত দখল করে ঝুঁপড়ি দোকান, অনুমোদনহীন মিনি বাস ও সিএনজি স্টেশন শহরের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। লালদিঘির পাড়, বাজারঘাটা, বড় বাজার, হাসপাতাল সড়ক ও বার্মিজ মার্কেট এলাকায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত লেগে থাকে যানজট।


শহরজুড়ে অবৈধ অটোরিকশা ও সিএনজি নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলাচল করছে। চালকরা যেখানে সেখানে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করায় সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। শ্রমিক সংগঠনের নামে চলছে চাঁদাবাজি। বিদ্যুৎ চুরি করে তৈরি করা হচ্ছে চার্জিং স্টেশনও।


পৌরসভার তথ্যমতে, লাইসেন্স আছে ৪ হাজার ইজি বাইকের, অথচ চলছে ১০ হাজারের বেশি। এর বড় অংশই অবৈধভাবে সড়কে চলাচল করছে।


২০০১ সালে উদ্বোধন হওয়া কক্সবাজার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এখন কার্যত অকেজো। ৩০০ বাস রাখার জায়গা থাকলেও বর্তমানে জায়গা আছে সর্বোচ্চ ৬০টির। বাকি জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে শতাধিক দোকান ও টিকিট কাউন্টার।


কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ ন ম হেলাল উদ্দিন বলেন, টার্মিনাল অচল হওয়ার কারণে সড়কে বাস কাউন্টার গড়ে উঠেছে। এতে শহরজুড়ে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। প্রশাসনের খামখেয়ালির কারণে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।


কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের সদস্য সচিব এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, এ শহরে কেউ দায়িত্বশীলভাবে কাজ করছে না। প্রতিটি সড়ক-উপসড়ক দখলে রয়েছে সিএনজি ও টমটম। মানুষ হাঁটার জায়গা পর্যন্ত পাচ্ছে না।


ঢাকা থেকে আসা পর্যটক রাহাত হোসেন বলেন, ঢাকা শহরের যানজট থেকে একটু স্বস্তি পাবো ভেবেছিলাম কক্সবাজারে এসে। কিন্তু এখানে এসে দেখি অবস্থা আরও খারাপ। হোটেল থেকে সৈকতে যেতে আধা ঘণ্টার পথ পেরোতে সময় লাগে দেড় ঘণ্টা। এতে ভ্রমণের আনন্দ অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়।


স্থানীয় বাসিন্দা জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, প্রতিদিনই অফিস বা কাজে বের হতে গেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে আটকে থাকতে হয়। ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও অব্যবস্থাপনা ও অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে ভোগান্তি লেগেই আছে।


যানজটে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ছেন স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও চাকরিজীবীরা। কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক রায়হাতুল গীর কসবা জানান, শুক্র-শনিবার জ্যামের তীব্রতা বেড়ে যায়। এতে ঘন্টার পর ঘন্টা কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়।


শিক্ষার্থী সাদেক মাহমুদ সিমরান অভিযোগ করেন, সকাল ৯টার ক্লাস ধরতে ৮টায় বের হলেও যানজটে আটকে গিয়ে ক্লাস মিস হয়ে যায় প্রায়ই সময়।


ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসীম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে নিয়মিত মামলা, জরিমানা ও উচ্ছেদ অভিযান চলছে। বাস টার্মিনাল সচল করা গেলে যানজট অনেকাংশে কমে আসবে।


দেশের প্রধান পর্যটন নগরী কক্সবাজারে প্রতিদিন লাখো পর্যটক ভ্রমণে আসে। কিন্তু সড়কজুড়ে যানজট ও অব্যবস্থাপনা পর্যটন শিল্পকে বড় হুমকির মুখে ফেলছে। স্থানীয়দের দাবি, বাস টার্মিনাল সচল করা, অবৈধ পার্কিং বন্ধ করা, ফুটপাত দখলমুক্ত করা এবং অবৈধ সিএনজি-অটোরিকশার দৌরাত্ম্য বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া এখন সময়ের দাবি।


বিবার্তা/ফরহাদ/এসএস

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com