
শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মন্ডপে মন্ডপে চলছে প্রতিমা স্থাপনের শেষ মূহুর্তের কাজ। রঙের আঁচড়ে দেবী দূর্গাকে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে বর্ণিল সাজে। পূজা উৎসব ঘনিয়ে আসায় এখন রাত দিন ব্যস্ত সময় পার করছে মৃৎশিল্পীরা। প্রতিটি প্রতিমাকে রং-তুলির নিপুণ আঁচড়ে রাঙাতে ব্যস্ত শিল্পীরা। চলছে সাজ-সজ্জার কাজও। দেবী দূর্গার সাথে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী আর সরস্বতী দেবীকেও। যেন দম ফেলার ফুসরত নেই মৃৎশিল্পীদের। পুরুষদের কাজে সাহায্য করছে বাড়ির নারীরাও।
এদিকে ভক্তরা দেবী দূর্গার রাতুল চরণে পুস্পাঞ্জলী প্রদান করার জন্যে অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। তারা বলছেন, মায়ের আগমনের ক্ষণকালে ভক্তরা সকলেই পুলকিত। ভক্তদের মনে লেগেছে আনন্দের দৌলা।
শহরের মুন্সেফপাড়ার সুমন চক্রবর্তী বলেন, মায়ের আগমন উপলক্ষ্যে আমরা সবাই বেশ খুশি। পরিবারের সকলের জন্যে কেনাকাটা করেছি। সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত মায়ের রাতুল চরণে পুস্পাঞ্জলী প্রদান করবো।
শহরের পাইকপাড়ার সজীব পাল বলেন, আমরা অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছি কখন আসবে মাহেন্দ্রক্ষণ। মায়ের রাতুল চরণে পুস্পাঞ্জলী প্রদান করবো। এবার জগৎ জননী মায়ের কাছে দেশের জন্য দশের জন্য প্রার্থনা করবো মা যেন সকল রোগশোক থেকে আমাদের মুক্ত রাখেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পূর্বপাইক পাড়া গগণ সাহাবাড়ি রোড সার্ব্বজনীন দূর্গা পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশিষ কুমার সাহা জানান, এ বছর মায়ের আগমনে আমরা অনেকটাই পুলকিত। ইতোমধ্যে আমাদের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। মন্ডপে প্রতিমা আনা হয়েছে। সাজ শয্যার কাজ চলছে। এখন অপেক্ষা ক্ষণকাল গননা করা। আমরা পঞ্জিকার তিথি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাড়া প্রতিবেশিসহ পূজা কমিটির সকলকে সাথে নিয়ে মায়ের রাতুল চরণে পুস্পাঞ্জলী প্রদান করবো।
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার ভোলাচং গ্রামের মৃৎশিল্পী বরেন পাল জানান, দূর্গা পূজার আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। শেষ মুহূর্তে আমরা প্রতিমার গায়ের সাজ-শয্যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছি। কেননা প্রত্যেকের হাতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই প্রতিমা তুলে দিতে হবে। তারা প্রতিমা নিয়ে নিজ-নিজ এলাকায় মন্ডপে স্থাপন করবেন। সেজন্য নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছি।
একই কথা জানান, মলাই চন্দ্র পাল নামে অপর এক মৃৎশিল্পী। তিনি জানান, কাজ শেষ হতে এখনও বাকি আছে। যার কারণে অনেক ব্যস্ত সময় পার করতে হচ্ছে। তবে শেষ সময়ের আগেই কাজ সমাপ্ত করে পূজারীদের হাতে প্রতিমা তুলে দেবো। সেজন্য রাতদিন কাজ করছি। তিনি বলেন, গতবার ৪০ টি প্রতিমা বানিয়ে ছিলাম। এবার ৪৫টি প্রতিমা বানাব। ভক্তদের পক্ষ থেকে তাড়া আছে। তাই যত দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি।
জেলা শহরের কান্দিপাড়া রঘুনাথ জিউর আখড়ার প্রতিমা শিল্পী ঝন্টু পাল বলেন, মূর্তি তৈরির উপকরণের দাম বেশি। সে অনুযায়ী প্রতিমার দাম বাড়েনি। মূর্তি তৈরীর কারিগর সংকটের কারণে এ বছর ১৫টি মূর্তির অর্ডার নিয়েছি। কোন মূর্তির দামই ফুরানো হয়নি। শেষ মূহুর্তে এখন দম পেলার সময় পাচ্ছি না। কারন সময় মত সকলের কাজ শেষ করতে হবে।
জেলা পূজা উদযাপন ফ্রন্টের সদস্য সচিব প্রবীর চৌধুরী রিপন জানান, এবার জেলার ৯টি উপজেলায় ৫৭৮ টি পূজা মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। এ বছর জেলার মধ্যে পৌরসভাসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলায় ৮০টি, নাসিরনগর উপজেলায় ১৩৯ টি, সরাইল উপজেলায় ৫৩ টি, কসবা উপজেলায় ৪৩ টি, আখাউড়া উপজেলায় ২৪ টি, আশুগঞ্জ উপজেলায় ১৫ টি, বিজয়নগর উপজেলায় ৫৬ টি, নবীনগর উপজেলায় ১২৭ টি ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় ৪২ টি পূজামন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি আরো জানান, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে সার্বিক বিষয় নিয়ে বৈঠক হয়েছে। আমরা আশা করছি, এ বছর সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ ভাবে পূজা উদযাপন করতে পারব। ইতিমধ্যে আমাদের প্রতিমা তৈরীর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আমরা প্রতিটি উপজেলায় যোগাযোগ রাখছি এবং প্রশাসনসহ নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে আসছি। যেন পূজা শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্পন্ন করতে পারি। আমরা পূজায় সকলে সহযোগিতা কামনা করি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম জানান, শারদীয় দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণ করার জন্যে প্রশাসনের পাশাপাশি যৌথ বাহিনী সতর্ক অবস্থানে থাকবে। প্রতিটা উপজেলার প্রতিটা পূজা মণ্ডব সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় থাকবে।
তিনি আরো জানান, পূজাকে সফল করার লক্ষে প্রতিমা তৈরী থেকে শুরু করে বিসর্জন পর্যন্ত যতগুলো অনুষ্ঠান আছে সবকিছু সুন্দর ভাবে শেষ করার জন্য আমরা সার্বিকভাবে সহযোগিতা করবো। সেই সাথে পূজা উদযাপন ফ্রন্টসহ সেচ্ছায় দায়িত্ব পালনকারী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সাথে কয়ক দফা আলোচনা হয়েছে।
বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী দেবীদূর্গা এবার গজে (হাতি) চড়ে আগমন করবেন এবং দোলায় (পালকি) চড়ে গমন করবেন। ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২৮ সেপ্টেম্বর বোধনের মধ্য দিয়ে ষষ্ঠী পূজা পালন করে হবে। আগামী ২ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে হবে মূল আনুষ্ঠানিকতা।
বিবার্তা/আকঞ্জি/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]