
হিমালয়কন্যা নামে পরিচিত দেশের উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের ৫টির ৪টি উপজেলাই ভারতের সীমান্ত ঘেঁষা বলে ভৌগলিক এবং আন্তর্জাতিক সীমারেখা সম্পর্ক ও আইনে এ জেলার গুরুত্ব অনেক বেশি। আর নানা প্রতিকূলতার মাঝেই এ জেলার সীমান্ত এলাকাগুলি চোরাচালান, পুশ ইন ও সীমান্ত হত্যা বন্ধসহ সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় রেখেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ(বিজিবি)র ঠাকুরগাঁও ৫০ বিজিবি ব্যাটেলিয়ন এর সদস্যরা।
এটি মূলত বাংলাদেশের সীমান্ত সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা একটি আধা-সামরিক বাহিনী। ২০০৯ সালের পূর্বে এই বাহিনীর নাম ছিল বাংলাদেশ রাইফেলস (ইউজ)। বিদ্রোহের পর বাহিনীটির নাম পরিবর্তন করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) রাখা হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি সীমান্ত সুরক্ষায় এবং যে কোনো ধরণের আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমনে দক্ষতার সাথে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করছে বিজিবি।
মুক্তিযুদ্ধেও অসামান্য বীরত্বের জন্য এ বাহিনীর দু’জন বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ এবং ল্যান্স নায়েক মুন্সী আব্দুর রউফসহ ১১৯ মুক্তিযোদ্ধা সদস্য খেতাবপ্রাপ্ত হয়েছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে এ বাহিনীর ৮১৭ জন অকুতোভয় সদস্য তাঁদের জীবন উৎসর্গ করে বিজিবি’র ইতিহাসকে করেছেন মহিমান্বিত। ’জুলাই-আগস্টে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সীমান্তবর্তী এলাকাসহ সারাদেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিজিবির ভূমিকা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে।
তথ্যমতে, ১৮০৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ জেলার ১০৬.৪ কিলোমিটার এলাকা ভারতের সীমান্ত ভাগ করেছে। এ ১০৬.৪ কিলোমিটার সীমান্তের সার্বিক সুরক্ষায় সরাসরি দায়িত্বে রয়েছে ৫০ বিজিবি ব্যাটেলিয়নের ১৯টি ক্যাম্প আর এসব ক্যাম্পকে পেছন থেকে কাভার দেয়ার জন্য রয়েছে আরো ৩টি লজিস্টিক ক্যাম্প সহ মোট ২২ টি ক্যাম্প । অপরদিকে প্রতিপক্ষ ভারতের রয়েছে ৮৭ বিএসএফ ব্যাটেলিয়ন, ১৮৪ বিএসএফ ব্যাটেলিয়ন, ১৭ বিএসএফ ব্যাটেলিয়ন সহ ৩ ব্যাটেলিয়ন এর ৩১ টি ক্যাম্প।
সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সন্ধ্যে হলেই একদিকে ভারতীয় সীমান্তে যেমন সূর্যের আলোর মতো আলো ছড়ায় সেডিয়াম লাইটপোষ্টগুলো অপরদিকে আমাদের এ সুবিধা না থাকায় বাংলাদেশ সীমান্তে ছড়িয়ে পড়ে ঘন অন্ধকার। আর এ ঘণ অন্ধকারের মাঝেই সীমান্ত সুরক্ষায় কাজ করছে ৫০ বিজিবির সদস্যরা। আবার একদিকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিণী বিএসএফ তাদের সীমান্ত সুরক্ষায় টহলে ব্যবহার করে আসছে সীমান্ত ঘেঁষা পাকা রাস্তা আর চার চাকার বাহন, অপরদিকে বিজিবি সদস্যরা পায়ে হেটে, সাইকেলে বা মটরসাইকেলে করেই উচু নিচু বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে নিশ্চিত করছে সীমান্ত সুরক্ষা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাবেক সীমান্ত চোরাকারবারি জানান, আমি আগে গরু চোরাচালানের সাথে জড়িত ছিলাম। আমার এক সাথী বিএসএফ এর গুলিতে নিহতও হয়েছে। পরে বিজিবি আমাকে ও আমার মত আরো অনেককে নিয়ে বসে এবং সীমান্তে চোরাচালানের ক’ফল সম্পর্কে আমাদের বুঝিয়ে ভালোভাবে জীবনযাপনের পথ দেখায়। ২০১৬-১৭ সাল থেকে আমরা এসব কাজ ছেড়ে দিয়ে কৃষি কাজ করে সংসার চালাচ্ছি।
৫০ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. তানজীর আহম্মদ বলেন, আমাদের ৫০ বিজিবি ব্যাটেলিয়ন একটি ঐতিহ্যবাহী ব্যাটেলিয়ন। বিগত সময়ের চেয়ে আমরা এ অঞ্চলের সীমান্তে হত্যা, চোরাচালানসহ বর্তমান সময়ে অবৈধ পুশইন এর মত ঘটনা যথেষ্ট কমিয়ে এনছি। আমাদের নানা সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আমাদের ছেলেরা দিনরাত সীমান্ত সুরক্ষায় নিজেদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রের প্রয়োজনে যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে এবং থাকবে আমাদের এ ৫০ বিজিবি।
তবে, জনবল সংকট এবং প্রতিকূল পরিবেশে জনবল বৃদ্ধি এবং সীমান্ত লাইট সহ আধুনিক সরঞ্জামাদি সংগ্রহের মাধ্যমে বিজিবি তাদের সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করে নিজেদের সীমাবদ্ধতাকে কাটিয়ে উঠবে এমনটাই আশা সীমান্তবর্তী মানুষদের।
বিবার্তা/বিধান/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]