যমুনায় ভাঙ্গনের কবলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ৫শতাধিক বাড়িঘর
প্রকাশ : ১৪ জুন ২০২৫, ১৯:১৯
যমুনায় ভাঙ্গনের কবলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ৫শতাধিক বাড়িঘর
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

বর্ষার শুরুতেই টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় যমুনা নদীতে তীব্র ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ ৫শতাধিক বাড়ি-ঘর। এতে প্রায় দুই সহস্র পরিবার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।


শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে দক্ষিন গয়লা হোসেন দাখিল মাদ্রসা, ডেকিয়া বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ গয়লা হোসেন নুরানি মাদ্রাসা,দক্ষিণ গয়লা হোসেন জামে মসজিদ, দক্ষিণ গোলাশন কবরস্থান এবং আব্দুল মান্নান সেতু।


জানা যায়, প্রায় ৫৩ বছর আগে দক্ষিণ গয়লা হোসেন দাখিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত করেন মৃত খায়রুন নেছা। সেই সময় থেকে এই প্রতিষ্ঠানটি যমুনা নদীতে প্রায় ১৪ বার ভাঙ্গন কবলে পড়ে। বর্তমানে ওমরপুর এলাকায় অবস্থিত। সেখানেও ভাঙ্গনের আতঙ্কে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।


অপরদিকে একই এলাকায় মৃত হাছেন হাজী তিনি ডেকিয়াবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। সেই প্রতিষ্ঠানটিও প্রায় ১৫ থেকে ১৬ বার এই যমুনা নদীতে ভাঙ্গনের কবলে পড়ে। বর্তমানে ওমরপুরে অবস্থিত।এখানেও ভাঙ্গনে আতঙ্কে রয়েছে। যার ফলে বন্যা আসলেই প্রতিবছর স্থানীয়রা ভাঙ্গন প্রতিরোধের জন্য মানববন্ধন করে থাকে। এবছরও ভাঙ্গন প্রতিরোধের জন্য মানববন্ধন করেছে।
,
স্থানীয়র আমিরুল ইসলাম জানান, টাঙ্গাইল সদর উপজেলা কাকুয়া ইউনিয়নে ঝাউগাড়া হতে ওমরপুর দক্ষিণপাড়া পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যমুনা নদীর ভাঙ্গন আতঙ্কে অনেকেই বাড়ি ঘর সরিয়ে নিচ্ছে।


যমুনা নদীতে কয়েকবার ভাঙ্গনের পর ভিটেমাটি হারিয়ে ওমরপুর নদীর কাছারে বাড়ি ঘর করেছি।


সে বাড়িঘর আজ ভাঙ্গন আতঙ্কে । এই বাড়ি যদি ভেঙ্গে যায় অন্যত্র বাড়ি করার মত জায়গা নাই । বাড়ি করার জন্য মানুষ এখন জায়গা দিতে চায় না।


এই বাড়িটি অনেক কষ্টে অল্প কিছু টাকা দিয়ে জায়গার মালিকের কাছ থেকে লিজ নিয়ে বাড়িঘর করে রয়েছি।


তিনি বলেন ওমরপুর গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ নদী ভাঙ্গনের শিকার। এদের পূর্ব পুরুষরা যমুনা নদীতে অনেকবার ভাঙ্গন দিয়ে সর্ব শান্ত হয়েছে।


বর্তমানে ওমরপুর গ্রামে যারা রয়েছে সবাই ভিটে মাটি হারা। এদের পূর্বপুরুষের এক সময় শত শত বিঘা জমির মালিক ছিল।


আমার ৯০ বছর বয়সে আমি পাঁচবার ঘরবাড়ি ভাঙ্গনের শিকার হয়েছি। ছয় বাড়ের মাথায় ওমরপুর এসে বাড়ি নিয়েছি।


স্থানীয় আবুল হোসেন বলেন আমার বাবা সহ আমি ১৩ বার এই যমুনা নদীর ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে। একটা পরিবার ১৩ বার যদি ভাঙ্গনের শিকার হয় তাহলে তার আর কি থাকে।


তিনি আরো বলেন এবার আর কোন উপায় নাই বাড়ি সরানোর মত। মানুষ এখন লাভের উপর জায়গা দিতে চায় না। নদী ভাঙ্গা মানুষ জায়গা কেনার মত সামর্থন না থাকায় তারা লাভের উপর জায়গা নিয়ে বাড়িঘর করে থাকে।


যার ফলে যমুনা নদীর পাড়ের মানুষ দূরে কোথাও কোন জায়গা কেনার সামর্থ্য না থাকায় বাড়িঘর করতে পারে না। এইজন্য নদী পাড়ের মানুষ নদীর কিনারেই বসবাস করে। যে কারণে তারা প্রতিবছরই নদীর ভাঙ্গনে শিকারসহ বন্যা আতঙ্ক থাকে।


আমরা যেহেতু যমুনা নদী ভাঙ্গা গড়ার সাথে একাকার হয়ে থাকে সে কারণে সরকারের কাছে আমাদের দাবি ভাঙ্গন কবলিত এলাকা দ্রুত ভাঙ্গন প্রতিরোধ থেকে বাঁচাতে।


ওমরপুর গ্রামের আইয়ুব আলী বলেন, পানাকুড়া, কেশবমাইজাল, চরপৌলি, উত্তর চরপৌলি, নয়াপাড়া, দশাখা, তেঁতুলিয়া, মাকরখোল, রশিদপুর, চগ্গপাল, বারবালাসহ প্রায় ৩০থেকে ৩৫টি গ্রাম যমুনা নদী ভাঙ্গনে সদর উপজেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন আমি ৮৮ সালে পর থেকে আমি দেখেছি এই রাক্ষসী যমুনার ভয়াবহতা।
আমি নিজেই আমার ভিটে বাড়ি সাতবার ভাঙ্গুনে ঘরবাড়ি সরিয়েছি। তাই সরকারের কাছে আবেদন দ্রুত জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন প্রতিরোধ করার জন্য।


আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের বাড়ি ছিল গয়লা হোসেন সেখান থেকে ভাঙতে ভাঙতে ওমরপুর এসে পারি জমিয়েছি। এখন পরের জমিতে বাড়ি ঘর করে রয়েছি। এই বাড়ি ভাঙলে জায়গা পাওয়া কষ্ট হবে। বর্তমানে জায়গার মালিকরা বাড়িঘর করতে দেয় না। একসময়ে আমার বাপ দাদার খাদা খাদা জমি ছিল। আজকে আমরা জমি হারা।আমাদের বাপ-দাদারা জমির রাজত্ব করতেন। এই যমুনা আমাদেরকে সেই রাজত্ব থেকে ফকির বানিয়ে দিয়েছে। আজকে অন্যের কাছে জায়গার জন্য ধরনা ধরতে হয়।


তিনি আরো বলেন আমাদের জায়গা জমি ভেঙ্গে যাওয়া যমুনা নদীতে শুকনো মৌসুমে বাদামের চাষ করি। যার ফলে যমুনা নদীর কিনারে বসবাস করি।


দক্ষিন গয়লা হোসেন বাসিন্দা আব্দুল বাতেন বলেন,যমুনা নদীর ভাঙ্গনে আমার নানার বংশধররা ছড়িয়ে ছিটে পড়েছে। আমার নানার অনেক জমি ছিল। সব জমি ভেঙ্গে গেছে।


মায়ের কাছে শোনা নানার বাড়ি ১৪ বার ভেঙেছে।শেষে আমরা নানার বাড়ি থেকে ১৫ বারে টাঙ্গাইল শহরে বাড়ি করেছি।


সবশেষ সরমা এসে বাড়ি করে সেখান থেকে শহরে বাড়ি করি। আমার নানা মারা যাওয়ার পর মাও খালারা ৩জন তারা প্রত্যকেই ১০০শত বিঘা করে জমি পেয়েছিল। সে জমি আজ যমুনা নদীতে।


তিনি আরো বলেন আমার নানার বাড়িতে পালিত সন্তান আজিম চৌধুরীকে ৭৫ বিঘা জমি লেখে দেওয়ার কারনে আজিমকে চৌধুরী বলে ডাকতো এলাকাবাসী ।


কাকুয়া ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন বলেন যমুনার ভাঙ্গন আতঙ্কে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ ৫ শতাধিক পরিবার রয়েছে। এছাড়াও বেশ কিছু কৃষি আবাদি জমে রয়েছে।


তিনি বলেন, এই গ্রামের প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যদি জিও ব্যাগ ফেলা যেত তাহলে ভাঙ্গন রোধ হবে। তিনি আরো বলেন যমুনার পানি বাড়লে ও কমলে তীব্র ভাঙ্গন দেখা দেয়। দ্রুত সরকারের কাছে আবেদন জানাই ভাঙ্গন প্রতিরোধ করার জন্য।


এবিষয় টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.মতিউর রহমান বলেন,কাকুয়া ইউনিয়নে যে এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে সে এলাকায় আমরা ভাঙ্গন প্রতিরোধে প্রতিরক্ষা কাজ করতে দ্রুত চেষ্টা করছি।


তিনি বলেন ভাঙ্গন কবলিত এলাকার জন্য অনেক আগেই চাহিদা দেওয়া হয়েছে। সেটি দ্রুতই বরাদ্দ পেয়ে যাব। আশা করছি ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যেই অনুমোদন হয়ে যাবে।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদা আক্তার বলেন, ইতিমধ্যেই আমি উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে পরিদর্শন করেছে।


বিশেষ করে যে সমস্ত ইউনিয়নে যমুনা নদীর ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় রয়েছে। সে সমস্ত ইউনিয়নের বিশেষ নজর রয়েছে।


বিবার্তা/ইমরুল/এসএস

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com