
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগীয় সদর দপ্তরের অধীনে প্রতিদিন ২০ জোড়া যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করে। এসব ট্রেন নির্বিঘ্নে চালাতে প্রয়োজন অন্তত ৩০টি লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন)। কিন্তু পুরো বিভাগে আছে মাত্র ২২টি। যার মধ্যে ১৬টিই বহু বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ। বাকি ছয়টি ইঞ্জিনের একটি দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পার্বতীপুর রেল কারখানায় পড়ে আছে দীর্ঘদিন।
লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ের বিভাগীয় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ডিএমই (লোকো) দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মেয়াদোত্তীর্ণ ১৬টি লোকোমোটিভের (ইঞ্জিন) মধ্যে ৪টির মেয়াদ শেষ হয়েছে ৫০ বছর আগে, ৮টির ৩৫ বছর আগে, ২টির ৩০ বছর আগে, এবং ২টির ২০ বছর আগে। তবুও ১০ জোড়া আন্তঃনগর, ৮ জোড়া মেইল ও ২ জোড়া লোকাল ট্রেন চলছে এসব পুরোনো লোকোমোটিভের ওপর নির্ভর করে।
লালমনিরহাট রেল বিভাগে কর্মরত লোকোমাস্টাররা জানান, মেয়াদোত্তীর্ণ লোকোমোটিভে যাত্রীবাহী ট্রেন চালানো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এসব লোকোমোটিভ মাঝেমধ্যে হঠাৎ পাওয়ার ছেড়ে দিলে মাঝপথে ট্রেন বিকল হয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। বারবার নতুন লোকোমোটিভ চাওয়া হলেও কোনো সাড়া মিলছে না। মেয়াদোত্তীর্ণ লোকোমোটিভ দিয়ে ট্রেন চালানোর কারণে সময়মতো ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে না আর এতে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় হচ্ছে। এ ঘটনা লালমনিরহাট রেল বিভাগে নিয়মিত।
লালমনিরহাট স্টেশনে কর্মরত রেলওয়ে কর্মচারী সাইফুল ইসলাম বলেন, “লালমনিরহাট রেল বিভাগ বরাবরই উন্নয়ন বৈষম্যের শিকার। উত্তরাঞ্চলের ট্রেন চলাচলের একটা বড় অংশ এ বিভাগ দিয়ে হয়, অথচ পুরোনো ও মেয়াদোত্তীর্ণ লোকোমোটিভেই সেবা চালানো হচ্ছে। লোকোমোটিভের সংকটের কারণে ইতোমধ্যে কয়েকটি মেইল ও লোকাল ট্রেন বন্ধ হয়েছে। “আরো লোকোমোটিভ নষ্ট হলে আরও কয়েকটি ট্রেন বন্ধ হওয়ার শঙ্কা আছে,” বলেন তিনি।
বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির বলেন, “সরকার কয়েকদফায় নতুন লোকোমোটিভ কিনেছে, কিন্তু লালমনিরহাট বিভাগ একটিও পায়নি। মেয়াদোত্তীর্ণ লোকোমোটিভগুলোর ক্ষমতা খুব দুর্বল। ঠিকমতো স্পিড দিতে পারে না এবং, টানা চললেই বিকল হয়ে পড়ে। এই বিভাগে চাহিদামতো লোকোমোটিভ দিলে বন্ধ হয়ে যাওয়া ট্রেনগুলো পুনরায় চালু করা সম্ভব।
লালমনিরহাট রেলওয়ের বিভাগীয় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ডিএমই (লোকো) ধীমান ভৌমিক বলেন, সারা দেশেই লোকোমোটিভ সংকট রয়েছে। তবে লালমনিরহাট বিভাগে সংকটটি বেশি। তাই বারবার চাহিদাপত্র পাঠিয়েছি।
তিনি স্বীকার করেন, মেয়াদোত্তীর্ণ লোকোমোটিভ দিয়ে ট্রেন চালানোর কারণে আমাকেও সবসময় দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে আমাকে জবাবদিহির মুখে পড়তে হবে। পার্বতীপুরে পড়ে থাকা ক্ষতিগ্রস্ত লোকোমোটিভটির মেরামতও দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে বলে জানান তিনি। “নতুন লোকোমোটিভ দ্রুত সরবরাহের জন্য আবারও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
লোকোমোটিভের সংকটের বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিং স্টক) আহমেদ মাহবুব চৌধুরী জানান, সারাদেশেই লোকোমোটিভ সংকট আছে। ৩০টি নতুন আধুনিক লোকোমোটিভ কেনার পরিকল্পনা আছে তবে কবে কেনা হবে সেটা এখনো নিশ্চিত হয়নি। ‘এই মুহূর্তে লোকোমোটিভের চেয়ে দক্ষ জনশক্তি তৈরি জরুরি হয়ে পড়েছে। আমরা সেদিকে বেশি নজর রাখছি।
বিবার্তা/হাসানুজ্জামান হাসান/এমবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]